বিচার্য বিষয় বা ইস্যু গঠন – দে. কা ১০
বিচার্য বিষয় কি?
কোন বিষয় নিয়ে যখন কোন পক্ষ আদালতে যায় সাধারণত অপর পক্ষ তা অস্বীকার করে তখন তাদের মধ্যকার বিবাদের বিষয়টিতে কোন পক্ষ সঠিক তা নির্নয় করতে আদালত তাদের পেশ করা দলিল দেখে এবং তাদের কথা শুনে তাদের মধ্যকার বিরোধীতার যায়গাটি সু-স্পষ্ট করতে চেষ্টা করেন। এবং এটা করতে আদালতকে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয়। এই প্রশ্নের বিষয়গুলোই হচ্ছে বিচার্য বিষয় ইংরেজীতে যাকে বলা হয়ে Issue [ইস্যু] গঠন।
উদাহরণ: ধরাযাক, করিম দাবি করলো রহিম ২ বছর আগে তার কাছ থেকে ১০০০০ টাকা ২০% সুদে ধার নিয়েছে এখানে রহিম বিষয়টি আদালতের সামনে সম্পূর্ণ রুপে অস্বীকার করল।
অতএব, আদালতে এই বিষয় বের করতে হবে যে,
- আদৌ রহিম করিমের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছে কিনা? আর যদি নিয়েই থাকে তবে কি শর্তে নিয়েছে?
এখানে এই মোকদ্দমার সমাধান/বিচারের জন্য উপরের পশ্ন গুলো বা বিষয়গুলো জানা খুব জরুরী, তাই উপরের এই প্রশ্নগুলো [এর উত্তরটি] বিচার্য বিষয়;
সহজে বলতে গেলে যে বিষয়টি বিচার করে ন্যায় অন্যায় নির্ধারণ করতে হবে সেই বিষয়টি বিচার্য বিষয় আর এই বিচার্য বিষয় সাধারণত প্রশ্ন আকারে আসে এবং পক্ষগন সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে এই বিষয়টি সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
এই বিচার্য বিষয় যদি সঠিক ভাবে নির্নয় করা না হয় তবে মোকদ্দমা সম্পূর্ন ভুল দিকে প্রবাহিত হতে পারে। তাই বিচার্য বিষয় নির্ধারনের সময় সকল পক্ষকেই সচেতন থাকতে হবে এবং আদালতকে সাহায্য করতে হবে।
বিচার্য বিষয়ের দুটি ভাগ
এই বিচার্য বিষয়কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ঘটনা বিচার্য বিষয়: যে বিচার্য বিষয় ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে, উপরের উদাহরনটি একটি ঘটনা বিষয়ক বিচার্য বিষয়।
২. আইন বিচার্য বিষয়: যে বিচার্য বিষয় আইন নিয়ে আলোচনা করে। তা আইন বিষয়ক বিচার্য বিষয়।
উদাহরণ:
ধরুন এখানে ধার নিয়েছে প্রমান হল কিন্তু ২০% সুদে নিয়েছে সেটা নিয়ে একটু সন্দেহ থাকল। সন্দেহটি এমন যে মৌখিক ভাবে দুজনেরই ২০% সুদের ব্যাপারটা স্বীকার করে নিয়েছে কিন্তু কেউ লিখিত আকারে বিষয়টি স্বীকার করেনি। আবার [ধরুন] আইনে বলা আছে লিখিত না হলে সুদ কখনো ১২% এর বেশি হতে পারবে না। এখন এখানে আইনে কি বলা আছে সেটা নিয়ে উভয় পক্ষ বিভিন্ন কেইস ল [প্রিসিডেন্ট] আদালতের উপস্থাপন করলো যার ফলে আদালতে কোন আইনটি সঠিক তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হল এখন তা সমাধানের জন্য আদালতের সমানে প্রশ্ন চলে আসলে “সবোচ্চ কতটুকু হারে ব্যক্তিগত সুদ আইন সম্মত” এখানে এই প্রশ্নটি আইন বিচার্য বিষয়।
প্রকৃত বিচার কার্য আসলে এই বিচার্য বিষয় ঠিক করার পর থেকে শুরু হয়।
আদেশ ১৪। বিচার্য বিষয় [Framing of Issue]
বিধি, ১; বিচার্য বিষয়
কখন?
লিখিত জবাব বা ১ম শুনানির (যেটা আগে হয়) ১৫ দিনের মধ্যে [যদি বিবাদী যথা সময়ে লিখিত জবাব প্রদান না করেন তবে শুনানি লিখিত জবাবের আগে হতে পারে।]
বিচার্য বিষয়ে কি কি আসতে পারে?
- মানুষিক
- শারীরিক
- কোন অবস্থা
- এমন কোন কিছু যা ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যায়
বিধি, ২। যেখানে আইন ও ঘটনা দুটো নিয়েই প্রশ্ন ওঠে সেখানে আদালতে আগে আইনের বিষয়টি সমাধান করবে।
বিধি, ৩। যেসব বিষয় থেকে ইস্যু ফ্রেম করা যেতে পারে?
- দুই পক্ষ থেকে যে সব দাবি করা হয় তার ভিত্তিতে এবং কোন পক্ষের দাবি / নোটিশের প্রেক্ষিতে যে উত্তর দেওয়া হয় তার ভিত্তিতে।
- দলিলের ভিত্তিতে।
বিধি, ৪। যদি আদালতে এমন মনে করেন যে ইস্যু গঠনের পূর্বে কোন ব্যাক্তির ভাষ্য বা দলিল দেখার প্রয়োজন তবে তিনি ইস্যু নির্ধারনের জন্য অন্য দিন ঠিক করে তার আগে ঐ ব্যক্তি বা দলিল পরীক্ষা করার জন্য তাদের / দলিল আদালতে আনার জন্য (সমন বা অন্য ভাবে) আদেশ দেবেন।
বিধি, ৫। ইস্যু সংশোধন / কর্তন করা [আরো দেখুন: আদেশ ১, বিধি ১৬]
কখন?
- ডিক্রি প্রদান করার আগে যে কোন সময়।
- ন্যায় বিচারের স্বার্থে।
বিধি, ৮। আদালত চার্য ফ্রেমের ১২০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারন করবেন।
আরো দেখুন: চূড়ান্ত শুনানির তারিখের পর ১২০ দিনের মধ্যে তার শুনানির কাজ শেষ করবে। আদেশ ১৮, বিধি ১৯
আদেশ ১৫ । মামলা নিষ্পত্তি
প্রথম শুনানিতে মামলা নিষ্পত্তি [Disposal of suit at first Hearing]
আদালত প্রথম শুনানির পর যদি মনে করেন আদালতের কোন বিচার্য বিষয় নেই তবে তিনি মোকদ্দমাটি নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন।
- দেওয়ানী কার্যবিধির সকল বিষয় দেখুণ।
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।
আমাদের আপডেটেড নোট, গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এবং আইন বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেনিং, কোচিং, কোর্স কিনতে আমাদের আইন পাঠশালা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ২০২৩ সালের বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী হলে দ্রুত আইন পাঠশালা ফেসবুক গ্রুপ এ সংযুক্ত হোন।