Site icon আইন সেবা [ল হেল্প বিডি]

জিডি কেন, কখন ও কিভাবে করবেন? (নমুনা ও উদাহরণ সহ)

জিডির এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে জেনারেল ডায়েরি বা সাধারণত ডায়েরি, দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সাথে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে যেগুলোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হয়তো করা যায় না আবার এমনও হয় যে আমরা অনেক কিছু আচ করতে পারি কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে হয়তো কিছুই করার থাকে না অথবা নিজেরাই কিছু ভুল করে ফেলি যেটা অন্যায় না হলেও খারাপ মানুষের করানে যার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

এমন সব ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণত ডায়েরি করে বিষয়টা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো যায় যাতে করে আইনত অনেক বিপদ এড়ানো যায় এবং কিছুটা সুরক্ষিতও থাকা যায় বটে।

চলুন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজি:

এমন সব অবস্থায় আপনি কি করবেন? একটু ভেবে দেখুন অবস্থা এমন হয়তো কিছুই হবে না আবার বিষয়গুলো অনেক খারাপ দিকেও ঘুরে যেতে পারে। তাই এ ধরনের অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব একটি জি.ডি করে ফেলতে হয়।

জিডির এ টু জেড

জিডি (GD)  বা জেনারেল ডায়েরি কি?

General Dairy বা সংক্ষেপে GD যা বাংলায় সাধারন ডায়েরি বা জিডি, এটি থানায় সংরক্ষিত একটি রেজিষ্টার বা ডায়েরি যেখানে খুব জরুরী বা মারত্বক নয় এমন সাধারণ বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা হয় এবং লিপিবদ্ধ করার পর পুলিশ সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেন এবং প্রয়োজনে তদন্ত করেন, আবার কখনো কখনো ভবিষ্যেতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন।

জিডি করার পর কি হয়?

একটি জিডি হওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ  (এজাহার ভুক্ত হতে পারে) মনে করলে তা তদন্ত শুরু করে দেবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন, এই ব্যবস্থা জিডির শ্রেণীবিভাগ অনুসারে করা হয়ে থাকে (নিচে উল্লেখিত)। সাধারণ ভাবে ক্ষতিয়ে দেখে সেটা আদালতের আদেশের জন্য প্রেরণ করবেন। আদালত পূর্ণ তদন্ত বা / এবং একশন  যেমন এরেস্ট ইত্যাদির জন্য নির্দেশ দিলে সেটা বাস্তবায়ন করবেন।

কে জিডি করতে পারে?

যে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ-ই জিডি করতে পারে এর জন্য নির্যাতিত, চাক্ষুষ সাক্ষী, বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জরুরি নয়।

যেভাবে জিডি করা হয়

থানার ডিউটি অফিসার সাধারণত জিডির আবেদন গ্রহণ করে থাকেন, কেউ আবেদন করতে অসমর্থ হলে তাকে তিনি সাহায্যও করে থাকেন।

অনলাইনে জিডি

অনলাইনে জিডি করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে (http://gd.police.gov.bd/) প্রবেশ করলে প্রধান পাতায়ই জিডি করার অপশণ পেয়ে যাবেন এবং সেখানে তিনটি ধাপে জিডি সম্পন্ন করতে পারবেন।

 

কখন ও কোন বিষয়গুলোতে জিডি করতে হয়?

এই বিষয়গুলোকে আমি সহজে বোঝার জন্য তিন ভাগে ভাগ করি।

অপরাধ , সন্দেহ বা হুমকি বিষয়ে

কেউ কোন ছোটখাট অপরাধ করলে, যেমন ধরুন জানলা কাচে ভেঙ্গে ফেল্লে, সল্পমূল্যের কিচু চুরি গেলে, অপরাধের চেষ্টা করলে।আপনার যদি কারো গতিবিধি কথাবর্তা সন্দেহ জনক মনে হয় এবং মনে হয় যে সে একটা অপরাধ করতে যাচ্ছে, তা হোক আপনার বিরুদ্ধে বা অন্য কারোর বিরুদ্ধে আপনি এই তথ্য থানায় দিয়ে নিজে এবং অপরকে সেইফ রাখতে পারেন। আবার যদি ধরুন আপনাকে কেউ অনুসরন করছে বা হুমকি দিচ্ছে বা প্রতারনা করার চেষ্টা করছে তখন আপনি আপনার সুরক্ষার জন্য সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন। ফলে প্রয়োজনে পুলিশ তৎক্ষনাত বা ভবিষ্যতে কিছু হলে পুলিশ সহজেই তাদের বিরুদ্ধে একশনে যাবে এবং আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে। (নিচে উদাহরন প্রদত্ত্ব)

মূল্যবান কিছু হারালে

আপনি যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, আইডি কার্ড, ফাইল পত্র, চেক বই, গুরুত্ব পূর্ণ দলিল, চাবি, গাড়ি, গয়না বা এমন কোন মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেন বা যথেষ্ট খোজার পরও খুঁজে না পান তখন আপনার জিডি করতে হবে। কারণ এগুলো না পেলে বা অন্য কেউ পেলে আপনি যথেষ্ট বিপদে পড়তে পারেন। তাই জিডি করে রাখলে কেউ খুঁজে পেলে থানায় গেলে সহজেই আপনি পেয়ে যাবেন আবার কেউ অপব্যবহার করলে তখন আপনি নিশ্চিন্তে দায়মুক্ত থাকতে পারবেন। (নিচে উদাহরণ প্রদত্ত)

সাধারন তথ্য

দারোয়ান, কেয়ারটেকার, নৈশ-প্রহরী নিয়োগ বা পলায়ন সম্পর্কে তথ্য, সমাবেশ, অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য, নতুন বা পুরনো ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য ইত্যাদি।

এমন আরও অনেক বিষয়ে জিডি হয়। যেমন, প্রতারণা করলে, চাকরী থেকে বের করার হুমকি দিলে, কেউ অনুসরণ করলে, বাজে আচরণ করলে ইত্যাদি।

জিডির শ্রেনীবিভাগ

ধরন অনুযায়ী জিডিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

এগুলোকে পুলিশ ধর্তব্য, অধর্তব্য ও সাধারণ জিডি হিসেবে বিভক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আপনার কাজ শুধু জিডি করা বাকিটা পুলিশ বুঝবে।

 

জিডি করবেন না এজাহার করবেন?

অনেকেই মনে করেন যে কে কোন বিষয় জিডি করতে হয়, আসলে তা নয় গুরুত্বপূর্ণ এবং মারাত্মক বিষয়গুলোর জিডি হয় না হয় First Informaiton Rrport (FIR) বা এজাহার, যার মাধ্যমে থানাকে গুরুত্বপূর্ণ ও মারাত্মক বিষয়টি জানানো হয় এবং জানার সাথে সাথেই পুলিশ একশনে যায় যেমন, এরেস্ট করা, আলামত সংরক্ষণ, এরেস্ট করা ইত্যাদি। বিস্তারিত জানতে আমাদের  এজাহার কি বা FIR কি? লেখাটি দেখুন।

খুন, ডাকাতি, মেরে হাত-পা ভাঙ্গা, ধষন, চুরি ইত্যাদিতে এজাহার হয়।

এগুলো কষ্ট করে আপনাকে বুঝতে হবে না আপনি পুলিশ বা উকিলে কাছে বিষয়টা খুলে বলুন তারাই যাথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

 

জিডি ফরমেট / উদাহরণ

ডিউটি অফিসার ইন চার্য (ওসি) বরাবর করা হয়ে থাকে। এর নিচে থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হয়, তার পর বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এর মুল অংশে বিস্তারিত ঘটনা লিখতে হয় তারপর ডিউটি যেন ডায়েরি ভুক্ত করা হয় এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই নিবেদন করা হয়। জিডির শেষ অংশে আবেদন কারির নাম ঠিকানা ও ফোন নং সহ সই দিতে হয়।

তারপর দায়িত্ব রত ওসি বা ডিউটি অফিসার বিষয়টি তাদের সাধারণ ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করবেন এবং আইন অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন

হারানো জিডি [ নমুনা]

তারিখঃ ………………

বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
………………..থানা, ঢাকা।

বিষয় : সাধারণ ডায়েরি অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন।

জনাব,
আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, নাম: ………………………, বয়স………,পিতা/স্বামী……………………….., ঠিকানা……………………, এই মর্মে জানাচ্ছি যে আজ/গত …………….. তারিখ ……………. সময় …………….জায়গা থেকে  আমার নিম্নবর্ণিত কাগজ/মালামাল হারিয়ে গেছে। বর্ণনা : ( যা হারিয়েছে তার বিবরণ, কিভাবে হারিয়েছে তার বিবরণ)

এমতাবস্থায় আমার (…..) এর অবৈধ ব্যবহার রোধকল্পে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনাবের নিকট বিষয়টি সাধারণ ডায়রিতে অন্তর্ভুক্ত করারা জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

বিনীত,

নাম: …
ঠিকানা:…
মোবাইল নম্বর:…

ফরমেটটি ডাউনলোড করুন।

অপরাধ , সন্দেহ বা হুমকি বিষয়ে জিডি [নমুনা]

বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
ধানমন্ডি মডেল থানা
ধানমন্ডি, ঢাকা – ১২০৫

বিষয়: সাধারণ ডায়েরী করার জন্য আবেদন।

জনাব,
আমি মোঃ আশিক ইসলাম (২৫), পিতা মোঃ দেওয়ান ইসলাম, একজন আইন শিক্ষার্থী, স্থায়ী ঠিকানা: ৪৫ কখগ, ঢাকা ১২০৭। বর্তমান ঠিকানা: ৪৭, পশ্চিম আগারগাও, ঢাকা -১২০৭। প্রায় ৪ মাস আগে আমি ফেসবুকে এক মেয়ের সাথে পরিচিত হই, যার নাম: রোদলা আজাদ (২৮), পিতা: মোঃ: রহমান আজাদ, ঠিকানা: ৪৪, গোরান, ঢাকা ১২১৯। অতঃপর সেই পরিচয় প্রেমে পরিণত হয়। প্রথমত, সে যখন সপ্রোনদিত হয়ে আমার বাসায় আসে তখন আমার তার খোলামেলা স্বভাব দেখে সন্দেহ হয়, এর পর আমি একে একে জানতে পারি তার বয়স আমার চেয়ে বেশী, সে এক বীমা কোম্পানিতে কাজ করে, যা সে আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল। এছাড়াও সে আমার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যও নেয়। এরপর আমি যখন আরো খোজ খবর নেওয়া শুরু করি, আমি দেখতে পাই সে বাস্তব জীবনে এবং ফোনে ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো অনেকের সাথে অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখছে। এসব বিষয় জানতে চাইলে প্রথমে সে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে এবং পরে যা ইচ্ছে তাই দু:ব্যবহার করে, এবং বিভিন্ন রকমের হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় আমি মানুষিক ভাবে অসুস্থ বোধ করি এবং বিষয়টি নিয়ে খোলা খুলি কথা বলি যাতে সে ক্ষিপ্ত হয় এবং আমাকে অন্য মানুষ দিয়ে হুমকি দেওয়ায়। অতঃপর গত ২৫/৯/২০১৬ তারিখে সে আমাকে দেখা করতে বলে, একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করি, আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে উপর্যুপরি অপমান করে, অতঃপর আমি সে স্থান ত্যাগ করি। তারপর সে আমাকে ফোনে নানা ভাবে আবারো পটানোর চেষ্টা করে কিন্তু আমি আমার অবস্থানে অনড় থাকি, এর প্রেক্ষিতে সে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে, সে আইনের অপব্যবহার করবে, আমাকে মারবে, দেখে নিবে ইত্যাদি। সে আরো বলে সে আমাকে পড়াশুনা করতে দেবেনা এবং আমার ক্যাম্পাসে এসে আমাকে দেখে নেবে বলেও হুমকি দেয়।

এমতাবস্থায় তার আচার আচরণ, ব্যবহার দেখে আমি ভীত সন্ত্রস্ত, তাই জনাবের নিকট বিষয়টি সাধারণ ডায়রিতে অন্তর্ভুক্ত করারা জন্য ওর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

আপনার অনুগত

আশিক ইসলাম
(মোঃ আশিক ইসলাম)
৪৭, পশ্চিম আগারাগাও, ঢাকা -১২০৭
মোবাইল: ০১৭১১২৩৪৫৮৬৪

ডাউনলোড করুন

মনে রাখবেন

জিডি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর:

 

জিডি সম্পর্কিত বাংলাদেশের আইন সমূহ:

পুলিশ আইন, ১৮৬১ এর ৪৪ ধারা

সহজ ভাষায় বললে এখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক অফিসার ইনচার্য সরকারের নিয়ম মোতাবেক একটি সাধারণ ডায়েরী রাখবেন যেখানে সকল অভিযোগ, চার্য, আটককৃত ব্যক্তি এবং আদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহ, উদ্ধারকৃত অস্ত্র এবং অন্যান্য পণ্য এবং সাক্ষীদের নাম সেই অফিসার লিপিবদ্ধ করবেন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট যে কোন সময় এটি দেখার জন্য তলব করতে পারেন।

পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল এর ৩৭৭ ধরা

এ ধারায় সংক্ষেপে এই রেগুলেসন নিয়ে বলা যায় এখানে, কোন ফর্ম পূরণ করা হবে, তার বিস্তারিত দেওয়া আছে। এরপর, কখন কিভাবে কোন বিষয় লিপিবদ্ধ করা হবে। অথবা কোন দিন যদি কোন আবেদন না পরে তখন কি করা হবে ইত্যাদি বিস্তারিত দেওয়া আছে। এরপর পুলিস অফিসার কোন বিষয়ে কি কি করবেন ও কিভাবে করবেন তার বর্ণনা দেওয়া আছে।

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ এবং ১৫৫ ধারা

১৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, আমল যোগ্য অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য হলে অফিসার ইনচার্য লেখা অভিযোগটি তথ্য দানকারীকে পড়ে শোনাবেন এবং তথ্য দানকারী সেখানে সাক্ষর দেবেন তারপর বিষয়টি অফিসার একটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

১৫৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য হয় তবে সে বিষয়টি বইয়ে (ডায়েরীতে) অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পাঠাবেন। এই জিডির যথাযথ ব্যবহারের ফলে আমরা মুক্তি পেতে পারি অনেক অযথা ঝামেলার হাত থেকে, তাই প্রয়োজনে জিডি করুন পুলিশকে ও নিজেকে সহযোগিতা করুন।

 

আশা করি এই লেখার মাধ্যমে সাধারণ ডায়েরি বিষয়ক আপনাদের সকল কনফিউশন দূর করতে পেরেছি। নিজে এই লেখাটি সংরক্ষণ করে রাখুন এবং অন্যদের উপকারে জন্য অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।


আরো দেখুন:

বন্ধুদের জানান
Exit mobile version