টর্ট আইনের প্রাথমিক ধারনা
রহিম সাহেব পথ দিয়ে হাটছিলেন, হঠাৎ কোথা হতে করিমের কুকুর দৌড়ে এসে দিল কামড়, আপনি ধরলেন করিম সাহেবকে তার দায়িত্বহীনতার জন্য কিন্তু সে বলল তার কি দোষ সে তো কুকুর ইচ্ছে করে কামড়াতে পাঠায়নি। কথা সত্য কিন্তু তাই বলে কি কোন দায় থাকবে না? করিম কিছু করুক আর না করুন রহিম সাহেবের হাটার অধিকারে বাধা পড়েছে? আইন কি বলে?
এখানেই টর্ট আইনের সার্থকতা, কেন সে প্রসঙ্গে আসছি, তার আগে দেখি টর্ট কি?
টর্ট বা টর্ট আইন কি?
Tort শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Tortam থেকে যার ইংরেজি করলে দাড়ায় Twist, একটু সহজে বুঝলে এমন কিছু কাজ করা ( বা করা থেকে বিরত থাকা ) যে গুলো সঠিক বা আইনানুগ নয় (ভুল / উল্টো), যা কিনা আমার ইংরেজ Wrong শব্দের সাথে তুলনা করতে পারি।
টর্ট কি তা আমাদের দেশের আইনে সুস্পষ্ট ভাবে বলা নেই। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা টি দিয়েছেন সালমন্ড,
তার সংজ্ঞা অনুযায়ী: ” Tort is a civil wrong for which the remedy is a common law action for unliquidated damages, and which is NOT exclusively the breach of a contract, or, the breach of a trust, or, other merely equitable obligation”
যা বাংলায় দাড়ায়: “টর্ট হচ্ছে এক ধরনের দেওয়ানি ক্ষতি যার প্রতিকার হচ্ছে অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণ, এবং যেটি চুক্তি কিমবা বিশ্বাস ভঙ্গে না আবার সাধারণ ন্যায়সঙ্গত দায়ও নয়।” আর টর্ট কি বুঝলেই আমরা টর্ট আইন বুঝতে পারি।
এবার আসুন এর মানে কি দাড়ায় তা একটু ভেঙ্গে বুঝি।
দেওয়ানি ক্ষতি
দেওয়ানি ক্ষতি (Civil wrong): ক্ষতি দুই ধরনের হয় দেওয়ানি ক্ষতি ও ফৌজদারি ক্ষতি, দেওয়ানি ক্ষতি হিসেবে সেই সব ক্ষতিকে ধরা হয় যা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়। এটা কোন কাজ করা বা যে কাজ করার কথা ছিল তা না করাও হতে পারে (Act or Omission), প্রথম দিকের যেই ঘটনাটা যদি আমরা দেখি, এখানে যেহেতু করিম সাহেবের পালা কুকুর কার উপর একটা দায় বর্তায় কুকুরটি দেখভাল করারা এবং সেই কুকুর যাতে অন্য কারো ক্ষতি না করতে পারে তা দেখার, এখানে নিশ্চিত ভাবে তার যে কাজটি সঠিক ভাবে করার কথা ছিল সেটা সে পালন করেন নি (omission) তাই রহিম সাহেবের একটি ক্ষতি হয়েছে, এটি একটি দেওয়ানি ক্ষতি বটে, তাই তার উপর একটা দায় বর্তায়। দেওয়ানি ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্তকে আদালতে গিয়ে নিজের প্রতিকারের জন্য আবেদন করতে হয়।
অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণ
অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণ (Unliquidated damages) : ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত বা অনির্ধারিত দুই হতে পারে। ধরুন মিউনিসিপালের একটা নিয়ম আছে যে পোষা কুকুর বাইরের মানুষকে কামড় দিলে তাকে ৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, এটা একটা নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ, যদি বিষয়টা এমনি হয়ে থাকে তবে তা টর্টের আওতায় পড়বে না। কিন্তু যদি ঘটনাটি এমন হয় যে আগে থেকে কোন নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা নেই বা সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। তখন বিষয়টি টর্টের মাধ্যমে আদালতের সামনে আসে।
অতএব সংজ্ঞায়নের এই প্রথম অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে কোন কোন ক্ষেত্রে একটি মামলাটি টর্টের অধীনে করা যাবে, সংজ্ঞানের পরের অংশেই রয়েছে যে সব বিষয় থাকলে (Exclusion) ব্যাপারটি টর্টের আওতায় পড়বে না। যেমন:
চুক্তি কিমবা বিশ্বাস ভঙ্গ না (Breach of contract or Breach of trust) : অনেক ধরনের দেওয়ানি ক্ষতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি হল
১. চুক্তি ভঙ্গ করার কারণে ক্ষতি: ধরুন ক, খয়ের সাথে ১০০মন চাল কেনার চুক্তি করেছে যা ক শেষ পর্যন্ত সম্পাদন করতে পারে নি, এখানে এটি একটি দেওয়ানি ক্ষতি কিন্তু যেহেতু এটি চুক্তি ভঙ্গের কারণে হয়েছে তাই এই ক্ষতি টর্টের আওতায় পড়বে না।
২. বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে ক্ষতি: ধরুন বড় ভাই ছোট ভাইর কাছে তার ১ লক্ষ টাকা রাখতে দিয়েছে (As a Baile) কিন্তু সে সেটা খরচ করে ফেলল, এখানে এটিও একটি দেওয়ানি ক্ষতি কিন্তু যেহেতু বিশ্বাসপূর্ন সম্পর্ক ছিল (Feduciry Relation) তাই এখানে টর্ট হবে না।
সারা বিশ্বে টর্টের ব্যাপক ব্যবহার হলেও আমাদের দেশে এই আইনের ব্যবহার বেশ কম হয় যদিও এর পরিধি অনেক বেশী এবং যুক্তি ও আইনের সূক্ষ্ম ব্যবহার করে অনেক মামলায় জয়ী হওয়া সম্ভব যা সাধারণ দেওয়ানী বা ফৌজদারি মাধ্যমে গিয়ে সম্ভব নয়।
Thanks for this article.
আপনাকেও পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Very good discussion