ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কি?

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

কোন একটা ঘটনা ঘটার পরপরই আমরা বিভিন্ন দল মত থেকে তাদের মত করে ঘটনাকে শুনতে পাই , এই শোনকে আসলে তথ্য বলা যায় না কারণ অধিকাংশই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হচ্ছে কোন কথা শুনে সেই সম্পর্কে নিজের অবস্থান নিয়ে নেওয়া যার ঠিক কোন যৌক্তিক ভিত্তি প্রয়োজন হয় না। একেক শ্রেণী ও পেশার মানুষ  একটি বিষয়কে একেক ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।

এই বিষয়গুলো আমার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক বেশী দেখতে পাই। দেখা যায় কোন একটি খারাপ ঘটনা ঘটলে সরকারি দল বিরোধী দল কাজটির স্বার্থে সম্পর্কযুক্ত বলে তত্ত্ব দেয় আর বিরোধী দল সরকার কাজটি করিয়েছে বলে এমন তত্ত্ব দেয়।

তত্ত্ব এ কারণে বলছি যেহেতু বিষয়টা প্রমাণিত না, বলছিনা এ তত্ত্ব সত্য বা মিথ্যে, এমন তত্ত্ব গুলো যেগুলো সাধারণত উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কাউকে দোষী করার জন্য প্রচার করা হয় তা হচ্ছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy theory)

একটু ভেঙ্গে বলতে গেলে; কোন ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যামূলক অনুমান; যা যে কোন একাধিক ব্যাক্তি বা সংস্থা মিলে কোন বিশেষ স্বার্থ রক্ষায় গোপনে ও সু-পরিকল্পিত ভাবে করে।

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কি?

একেবারে সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে; আমাদের সীমিত ও অপ্রমাণিত জ্ঞান দ্বারা, আমাদের ব্যক্তিগত পক্ষপাত মূলক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে অথবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কাউকে ছোট করার জন্য একটি কাহিনী দাড় করানো (তত্ত্ব) যার সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত যৌক্তিক ভিত্তি নেই কিন্তু যা অনেক সময় কিছু সিলেক্টেড তথ্য দিয়ে বিবেচনা করলে সত্য বলে মনে হয়, এটি হচ্ছে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

এই ধরনের তত্ত্ব মূলত তিনটি নীতির বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে টিকে থাকে:

  • ১. কোন কিছুই দুর্ঘটনা না,
  • ২. যেমনটা দেখায় প্রকৃত ঘটনা তেমনটা না
  • ৩. একটি সাথে আরেটি ঘটনা সর্বদা সম্পর্ক যুক্ত।

মানুষ যখন কোন ব্যাখ্যা খুঁজে না পায় তখন সে অনেক সময় অপব্যাখ্যাকে ব্যাখ্যা হিসেবে ধরে নিতে পছন্দ করে,মানুষে জ্ঞানী হবার প্রবৃত্তি এবং যেহেতু সহজে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না তাই এই অপব্যাখ্যা গুলো সহজই ছড়িয়ে যায় ও যুক্তি হিসেবে স্থান করে নেয়।

সমস্যা হল এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সাধারণত উদ্দেশ্য মূলক ভাবে তৈরি করা হয় (objectively), এবং স্বাভাবিক ভাবে কোন ঘটনা ঘটার পর এ তত্ত্ব প্রকাশ করা হয় যা এর অন্যতম দুর্বলতা। যেখানে যুক্তির চেয়ে বিশ্বাসকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং সেই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতেই সকল যুক্তি দেয়া হয়।

এ ধরনের তত্ত্বে সাধারণ কোন সত্যি ঘটনা ঘটার পর পর, পূর্বের কিছু সত্যের সংমিশ্রণে ও কিছু অনুমান নির্ভর কর তথ্য ঢুকিয়ে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে বিশেষ কোন গোষ্ঠী কাজটি করেছে এবং যখন তারা (যাদের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ) কোন ব্যাখ্যা দিতে চায় তাকে অপপ্রচার বলে মন্তব্য করা হয়, অন্যদিকে তত্ত্ব প্রকাশকারী-গন যখন প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন তখন তারা সেটা অপর পক্ষের গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে তা সম্ভব নয় বলে ব্যক্ত করেন।

তবে সাধারণত কিছু যুক্তি থাকে যা দেখে এই সব তত্ত্ব সম্পর্কে কিছুটা হলেও আস্থা আসে। কিন্তু বাঙ্গালী কি আর যুক্তির ধার ধারে, আবেগের তোড়ে  আর অন্ধ বিশ্বাসে চাঁদে মুখ দেখে মানুষ পর্যন্ত খুন করে ফেলে। সে যাই হোক এমন সব তত্ত্বের বেলায় যদি তা সত্য হয় সত্য প্রমাণের জন্য কছু না কিছু পাওয়াই যায়।

বলছিনা এ তত্ত্ব গুলো একেবারেই মিথ্যা, এমন হাজারো তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে যা নানা সময়ে পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিয়েছে তবে তার চেয়ে অনেক বেশী আজও আশার আলো খুঁজে পায় নি, হতে পারে তা সেই ষড়যন্ত্রের প্রভাবে চাপা পরা, হতে পারে আসলেই তেমন কিছু হয়নি শুধুমাত্র ভ্রান্ত কল্পনা।

বর্তমানে চিনকে নিয়েও এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চলছে চাইলে কিভাবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার এবং প্রসার হয় তা এই ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন।

প্রোপাগান্ডা

অন্যদিকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অন্যদিক হচ্ছে প্রোপাগান্ডা (propaganda) বা প্রচারণা। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আর প্রোপাগান্ডা হচ্ছে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ, আপনি একটি বুঝলেই আরেকটি বুঝতে পারবেন।

প্রোপাগান্ডায় ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মত কিছু সিলেক্টিভ তথ্য নেয়া হয় এবং সেগুলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বড় করে ও ভাল ভাবে জাতির কাছে তুলে ধরা হয় যেখানে কোন জটিল যৌক্তিক চিন্তাকে বাতিল করা হয় এবং এ কাজগুলো করা হয় কোন মানুষের পার্সোনাল বায়াসনেস,পক্ষপাতমূলক বিশ্বাস) বা লাভের জন্য।

আমরা এই প্রোপাগান্ডা রাজনৈতিক দলগুলোতে খুব ভাল ভাবে লক্ষ করে থাকি, তারা যতটানা করে তার চেয়ে বেশী প্রচার করে, তারা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে নিজেদের নেতাদের ঈশ্বরের অবস্থানে নিয়ে যায় এবং তাদের কাজের বিরুদ্ধে কো প্রশ্ন করা যায় না, যৌক্তিক বিশ্লেষণ করা যায়না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন।

এ ছাড়াও আমি, বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি তদের নিয়োগ, বিক্রি বাড়ানোর জন্যও অনেক সময় প্রোপাগান্ডা ছড়ায়।

আশাকরি প্রোপাগান্ডা নিয়ে সময় হলে একদিন আরও বিস্তারিত লিখবো এবং আশা করি এই লেখাটি অন্তত বর্তমান জীবনে চিন্তা চেতনায় ও সিদ্ধান্ত নিতে আপনাদের সাহায্য করবে।

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল lawhelpbd@gmail.com বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: rayhan@lawhelpbd.com more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!