চুক্তি রদ [প্রত্যাহার] ও বাতিল; ধারা ৩৫-৪০ |SR 08
আমরা কোন কাজ সম্পাদনের জন্য চুক্তি করি এবং আইনি সমাধান পাওয়ার জন্য চুক্তিটি রেজিস্ট্রি করি কিন্তু কিছু সময় দেখা যায় নানা প্রয়োজনে আমাদের চুক্তিটি বাতিল বা রদ করতে হয়। কিন্তু হুট করে চাইলেই তা করা যায় না এজন্য আদালতের কাছে আবেদন [মামলা] করতে হয় এই রদ বা বাতিলের যথাযথ করান থাকতে হয় এবং এই বাতিল বা রদের কারণে ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়ে। এই সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ধারা, ৩৫ থেকে ৪০ নীচে উল্লেখযোগ্য অংশ গুলো আলোচনা করা হোল।
চুক্তি রদের [প্রত্যাহার] মামলা [Rescission of Contract] ; ধারা – ৩৫
লিখিত চুক্তি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি নিচের কোন কারণে চুক্তিটি বাতিলের ঘোষণা দানের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন যখনো পর্যন্ত চুক্তির কার্য-সম্পাদন শুরু হয়নি। তার মানে, চুক্তির কার্য-সম্পাদন শুরু করতে বাধা প্রদান করা এবং চুক্তিটি বাতিল বা প্রত্যাহার করা।
- ক) যেখানে চুক্তিটি বাদীর দ্বার বাতিল যোগ্য বা রদযোগ্য
ব্যাখ্যা: ক খ’য়ে কাছে একটি জমি বিক্রি করেছে, ঐ জমিতে আবার একটি রাস্তা আছে যা জন সাধারণ ব্যবহার করে, যেটা একটি বিবেচ্য বিষয় কারণ অন্যের ইজমেন্ট অধিকার থাকলে সেখানে খ পুরো জমিটি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই রাস্তার কথা ক খ’য়ের কাছে গোপন রেখেছিল, তাই চুক্তিটি বালিতযোগ্য।
- খ) যেখানে চুক্তিটি দেখতে বৈধ মনে হলেও আসলে অবৈধ এবং যেখানে এবং যেখানে বাদীর চেয়ে বিবাদী এই অবৈধতার জন্য বেশী দায়ী।
ব্যাখ্যা: ক, একজন আইনজীবী। খ, একজন বিধবা ক’য়ের মক্কেল, ক খ’কে বুঝালো যে তার জমি ক’য়ের কাছে হস্তান্তর করলে (দান বা বিক্রি) খ’য়ের পাওনাদারদের আর টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এখানে চুক্তিটি দেখে বোঝার উপায় নেই এর উদ্দেশ্য অবৈধ কিন্তু আসলে অবৈধ তাই চুক্তিটি বাতিল করা যাবে।
- গ) যখন কোন বিক্রি বা লিজের চুক্তিতে কোন মামলার প্রেক্ষিতে কোর্ট কোন ডিক্রি প্রদান করে কিন্তু ডিক্রি অনুসারে ক্রেতার বা লিজ গ্রহীতা অর্থ অথবা আদালতের আদেশে অন্য কোন অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হয়।
ব্যাখ্যা, ক ও খ’য়ের মধ্যে চুক্তি হয়েছে, কিন্তু খ তা পালন না করতে চাওয়া ক আদালতে মামলা করে এবং আদালত খকে ১০ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে আদেশ দেয় কিন্তু খ তা করতে ব্যর্থ হয় এখন ক আবার আদালতে মামলা করে চুক্তি বাতিল করতে চাইতে পারে।
এক নজরে ধারা ৩৫
ধারা ৩৫ | চুক্তি রদ [Rescission of Contract] |
কাকে বলে? | চুক্তির কার্য-সম্পাদন শুরু করতে বাধা প্রদান, চুক্তি থেকে ফিরে আসা |
কে আবেদন করতে পারে? | পক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কেউ। |
কখন? |
|
তামাদি | ১ বছর [১১৪] |
ভুলের জন্য বাতিল করন। ধারা – ৩৬
কোন লিখিত চুক্তি সাধারণ ভুলের জন্য বাতিল ঘোষণা করা যাবে না, যদিনা যে পক্ষের বিপক্ষে বাতিলের ঘোষণা চাওয়া হয়েছে, চুক্তি বাতিল করলে তার যেন কোন ক্ষতি না হয় এবং সে যদি যথাযথ ভাবে তার আগের অবস্থায় ফিরত যেতে পারে।
চুক্তির সুনির্দিষ্ট সম্পাদনের মামলায় বিকল্প আবেদন। ধারা – ৩৭
বাদী যদি চুক্তির সুনির্দিষ্ট সম্পাদনের মামলা করেন তার সাথে তিনি চাইলে তিনি একটি বিকল্প আবেদন অর্থাৎ চুক্তি বাতিলের আবেদন ও করতে পারেন (দুটোর যেকোনো একটা হবে), যদি আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট সম্পাদনের আদেশ না দেন আদালত চাইলে বিকল্প আবেদন অর্থাৎ চুক্তি বাতিলের আবেদন গ্রহণ করে চুক্তি বাতিলে ঘোষণা দিতে পারেন।
তবে দুটি আবেদন একই বিষয় সম্পর্কিত হতে হবে।
আদালত বিবাদীর পক্ষে যাতে ন্যায় হয় তা দেখবেন। ধারা ৩৮
আদালত যদি কোন চুক্তি বাতিল করেন, আদালত বিবাদীর যাতে কোন ক্ষতি না হয় বা সে যেন ন্যায়পরায়ণ বিচার পায় সেই দিকে লক্ষ রাখবেন তাই আদালত তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে পারেন।
দলিল বাতিলে মামলা [Cancellation of contract deed]; ধারা -৩৯
কোন ব্যক্তি যার জন্য চুক্তির দলিলটি অকার্যকর বা বাতিল যোগ্য, সে যখন যুক্তিসম্মত ভাবে মনে করেন যে, চুক্তিটি যদি একই ভাবে রেখে দেওয়া হয় তবে তার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তখন সেই ব্যক্তি ঐ চুক্তিকে বাতিল করার জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন। আদালত তার বিচক্ষণতার মাধ্যমে সেটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেবেন।
চুক্তিটি রেজিস্টার কথা হয়ে থাকলে আদালত ডিক্রির একটি কপি যেই রেজিস্টারের আওতায় রেজিস্ট্রেশন হয়েছে তার কাছে পাঠাবেন এবং তিনি কপিটি নোট করে এবং বাতিলের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করবেন। [ধারা -৩৯]
ব্যাখ্যা: ক তার জাহাজটি সমুদ্রে যাওয়ার যোগ্য বলে, খ’য়ের নিকট বিমা করলেন, যেখান ক’য়ের জাহাজটি আসলে সমুদ্রে যাওয়ার যোগ্য নয়, এখন এই মিথ্যের কারণে ঐ বিমার চুক্তি/ দলিলটি বাতিল যোগ্য তাই খ আদালতে মামলা করে চুক্তিটি বাতিল করতে পারবেন। এবং এর পর দলিলটির আর কোন কার্যকারিতা থাকবে না।
যে দলিলগুলো আংশিক ভাবে বাদ করা যায়। ধারা – ৪০
যখন একটি দলিল এমন ধরনের হয় যেটা একাধিক ভিন্ন/ ভাগ-যোগ্য অধিকার বা দায়িত্ব বর্তায়, তখন কোর্ট সঠিক ভাবে আবেদন করলে, তার একটি অংশ যা বাতিল যোগ্য তা বাতিল করবেন এবং বাকি অংশ আগের মতই (পালন যোগ্য) থাকবে। এটি আইনের সাধারণ নিয়ম, চুক্তি বাতিল করলে পুরোপুরি বাতিল করতে হবে এর ব্যতিক্রম।
ব্যাখ্যা: ক খ’য়ের সাথে একটি চুক্তি করলো যে সে খ’কে তার তত্ত্বাবধানে থাকা দুটি আম বাগান থেকে প্রতি বছর ৫০০০ আমা ৫ বছর ধরে সরবরাহ করবে, এখানে ক’য়ের তত্ত্বাবধানে দুটি বাগানের একটি তার নিজ গ্রামে এবং নিজের, এবং অন্যটি সে অপর গ্রামের আরেকজনের থেকে লিজ নিয়েছে (ধরি এটি “অ” বাগান), এই “অ” বাগানের মালিককে “ক” যথাযথ লিজের টাকা না দেওয়ায় তাকে “অ” বাগানের মালিক ক কে উচ্ছেদ করেছে, এমন অবস্থায় ক’য়ের পক্ষে আর খ’য়ের সাথে চুক্তি পুরোপুরি পালন করা সম্ভব নয়। এখন সে আদালতে গেলে আদালত দেখবে দুটি ভাগযোগ্য অংশ আছে কিনা যেহেতু দুটি বাগান দুই গ্রামে অবস্থিত আদালত আছে বলে ধরে নেবে এবং “অ” বাগানে অংশটি বাতিল করে চুক্তির বাকি অংশ বাজায় রাখতে আদেশ দেবেন। – 7 Cal 474
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা। ধারা – ৪১
আদালত যার আবেদনে চুক্তি আংশিক বাতিল করবেন তার দ্বারা অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন, যাতে করে অন্য পক্ষের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে।
পার্থক্য (ছক)
দলিল সংশোধন (৩১) [Rectification] | চুক্তি রদ [প্রত্যাহার] (৩৫) [Rescission] | দলিল বাতিল (৩৯) [Cancellation] | |
কাকে বলে | পক্ষগনের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরনের জন্য দলিল সংশোধন | চুক্তির কার্য-সম্পাদন শুরু করতে বাধা প্রদান | কার্যকারিতা থাকবে না |
কে আবেদন করতে পারে | পক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কেউ। | পক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কেউ। | যে কোন ব্যক্তি যার যুক্তি সঙ্গত ভাবে ক্ষতি হবার আশংকা আছে। |
কখন |
|
|
|
তামাদি | ৩ বছর | ১ বছর [ অনুচ্ছেদ ১১৪] | ৩ বছর [অনুচ্ছেদ ৯১] |
কোর্ট ফি | এড ভোলারেম | ||
এর সাথে পড়তে হবে | ধারা, ৩৪ | ধারা, ৪০ |
- অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) কাকে বলে ? SR 09
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।
আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।