আদালতের স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন (Injunction) কি? SR 11

আমরা যারা দেওয়ানি মামলার সাথে সম্পর্কিত বা জানি তাদের কাছে স্থাগতাদেশ বা ইনজাংশন একটি বহুল ব্যবহৃত ও প্রয়োজনীয় টার্ম। আমরা অনেকেই নিজেদের বর্তমান অবস্থাকে একটি ভিত হিসেবে পেতে স্থাগতাদেশ চেয়ে থাকি কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আদালতের কাছে সেই আবেদন কোন কাজেই আসছে না তাই চলুন স্থাগতাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি যাতে করে প্রয়োজনে এই জ্ঞানকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি।

স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন

স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন কি?

স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন কি?

আদালতের স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন (Injunction) সাধারণত Status que (স্থিতাবস্থা) বজায় রাখতে দেওয়া হয়, সহজ কথায় কোন সম্পত্তি ঠিক যেমন ছিল তা যেন তেমন-ই থাকে সেই আদেশ দেওয়া।

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি পরিষ্কার হবে;

ধরুন, ক ও খ’য়ের মধ্যে একটি জমি “গ” নিয়ে দ্বন্দ্ব, এখন ক এ জমির দখলে আছে, মামলা চলাকালীন সময় ক তার জমি “গ” তে একটি পুকুর খননের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে, এমন সময় খ আদালতের কাছে গিয়ে স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করলো, এর প্রেক্ষিতে আদালত বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইনজাংশনের আদেশ প্রদান করলো।

ইনজাংশন দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত তার বিচক্ষণতা ব্যবহার করবেন, যদিও এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত বলা নেই তবে এই আইনের ধারা ৫৩-৫৭ পর্যন্ত কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে, যা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করবো।

এই ইনজাংশন যেহেতু কোন ঘটনা ঘটার আগেই দেওয়া হয় তাই একে নিবর্তনমূলক ব্যবস্থাও বলা হয়। নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা আদালতের বিচক্ষণতা ব্যবহার করে স্থগিতাদেশের (Injunction) মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। এই ইজাংমশন বা নিষেধাজ্ঞা মূলত তিন ধরেনর হয়।

  • ১. অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
  • ২. স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এবং
  • ৩. বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা

১. অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা [Temporary Injunction] (ধারা ৫৩)

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সাধারণত কোন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেওয়া হয় অথবা আদালতের পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবত থাকে। মামলা চলাকালীন যে কোন সময়ে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারেন, যা দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। (ধারা: ৫৩)

বিস্তারিত দেখুন এখানে: অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) কাকে বলে ?

২. স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা [Perpetual Injunction]

স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সাধারণত শুনানির পর মামলার যোগ্যতা এবং অবস্থা বিচার করে ডিক্রির মাধ্যমে আদালত প্রদান করে থাকেন, এটা কারো অধিকারের পক্ষে স্থায়ী ভাবে কোন পক্ষকে প্রদান করা হয়। (ধারা: ৫৩ +৫৪) এবং

৩. বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা [Mandatory Injunction]

যখন কোন দায় ভঙ্গ ঠেকাতে কোন পক্ষকে কোন কাজ করতে বাধ্য করা জরুরি হয়ে পরে, যাকিনা আদালত তার ক্ষমতা দ্বারা বাধ্য করতে পারবে, সেক্ষেত্রে আদালত তার বিচক্ষণতা ব্যবহার করে স্থগিতাদেশ প্রদান করবেন। (ধারা ৫৫)

উদাহরণ:
ক) খ’য়ের জমির আলো-বাতাসের অধিকার, ক’য়ের জমির উপর গড়ে তোলা নতুন ভবনের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, খ এখানে স্থগিতাদেশের মাধ্যমে ক কে তার ভবন তোলা থেকে বিরত রাখতে পারবেন।

খ) আবার, খ’য়ের জমির উপর কয়ের বাড়ির চাল চলে এসেছে, আগের উদাহরণের মতই এখানেও খ স্থগিতাদেশের মাধ্যমে ক কে তার চাল / শেড কমাতে বাধ্য করতে পারেন।

গ) ক খ’কে হুমকি দিল যে, সে খয়ের সম্পর্কে কিছু বক্তব্য প্রকাশ করবে যা কিনা আবার পেনাল কোড মতে দণ্ডনীয় অপরাধ (এমন খবর প্রকাশ করা, উদা: মানহানিকর খবর) এখানে আদালত খ’য়ের পক্ষে স্থগিতাদেশ দিয়ে ক কে খবরটি প্রকাশ না করতে বাধ্য করতে পারবেন।

ঘ) ক একজন ডাক্তার, খ তার মক্কেল, ক খ’কে হুমকি দিল যে ক ও খয়ের সাথে যেসব লিখিত যোগাযোগ হয়েছে তা ক প্রকাশ করে দেবে যাতে করে খ যে অনৈতিক জীবন-যাপন করে তা প্রকাশ হয়ে যাবে, খ এখানে স্থগিতাদেশ পাওয়ার মাধ্যমে ক কে এমন কাজ করা হতে বারিত করতে পারে।

সমাজের সুবিচারের স্বার্থে ইনজাংশন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি পক্রিয়া, তবে এর যথাযথ প্রয়োগের বপারেও খেয়াল রাখতে হবে।

স্থগিতাদেশ (ইনজাংশন) কখন হবে কখন হবে না:

যখন ইনজাংশন দেওয়া যাবেনা (ধারা ৫৩)

তিন ধরনের ইনজাংশনের ক্ষেত্রেই এই নীতিগুলো অনুসারন করা হবে।

  • ১. যখন এটি শোষণ মূলক ভাবে বা অপর্যাপ্ত ভাবে বা প্রকৃত ন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে কাজ কাজ করবে।
  • ২. যখন ইনজাংশনটি প্রতিবিধানের জন্য যথার্থ বা সঠিক নয়।
  • ৩. যখন ইনজাংশনটি কারণে তাৎক্ষনিক বা মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
  • ৪. যখন ইনজাংশন দিলে তা অযৌক্তিক বা অসুবিধাজনক হবে।

যখন বিবাদী বাদীর পক্ষে থাকা কোন দায়িত্ব ভঙ্গ করতে চায়, প্রকাশিত ভাবে বা কাজের মাধ্যমে তখন আদালত সেই দায়িত্ব ভঙ্গকে রোধ করারা জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন। যদি এই দায়িত্বগুলো কোন চুক্তি থেকে উদ্ভূত হয় তখন আদালত এই আইনের ২য় অনুচ্ছেদ অনুসরণ করব।

যখন ইনজাংশন দেওয়া যাবে (ধারা ৫৪)

যখন বিবাদী দখলে জন্য আক্রমণ করে বা দখলের হুমকি দেয় এবং বাদীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করে বা করতে চেষ্টা করে বা ব্যাঘাত ঘটায় তখন নিচের বিষয়ে আদালত স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারেন।

  • ক) যখন বিবাদী বাঁদির সম্পত্তির ট্রাষ্ট হিসেবে কাজ করেন।
  • খ) যখন এমন অবস্থা হয় যে, দখল করলে বা দখলে ফরে যে ক্ষতি হবে তা পরিমাপ করারা যথাযথ কোন মাপকাঠি না থাকলে।
  • গ) যখন দখল হলে সেটা আর আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যম্যে পর্যাপ্ত ভাবে প্রতিবিধান করা যাবে না।
  • ঘ) যখন এটা সম্ভাব্য যে, দখলের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।
  • ঙ) যখন একাধিক বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করতে স্থগিতাদেশ প্রয়োজন হয়।

স্থগিতাদেশ যেসব বিষয়ে প্রত্যাখ্যাত হবে (ধারা ৫৬)

স্থগিতাদেশ নিম্ন লিখিত বিষয়ে প্রত্যাখ্যাত হবে।

  • ক) যে আদালতে মামলা চলছে সেই আদালতে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করতে যদি স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়, তবে এর ব্যতিক্রম হল, যদি মামলার একাধিক্য রোধের জন্য এ আবেদন করা হয়।
  • খ) কোন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করতে যদিনা সেই আদালতে আবেদন দায়ের কার আদালতে অধস্তন না হয়ে থাকে।
  • গ) কোন ব্যক্তিকে আইন প্রণয়নকারী দলের কাছে আবেদন করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলে।
  • ঘ) যদি কোন সরকারি কাজের উপর বা কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাজের উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়।
  • ঙ) কোন ফৌজদারি ব্যাপারে স্থগিতাদেশ চাইলে।
  • চ) বিশেষ ভাবে সম্পাদন-যোগ্য নয় এমন কোন চুক্তি ভাংতে স্থগিতাদেশ চাইলে।
  • ছ) উপদ্রবের মামলায় যেখানে উপদ্রবের বিষয়টি যথাযথ ভাবে পরিষ্কার নয়/ প্রমাণিত নয়, সেখানে উপদ্রব কমাতে স্থগিতাদেশ চাইলে।
  • জ) ক্রমাগত দায় ভঙ্গ থেকে বিরত রাখতে স্থগিতাদেশ চাইলে, যেখানে যিনি স্থগিতাদেশ চাইছেন তিনি ঐ দায় ভঙ্গর সুযোগ দিলে বা চুপ থেকে মৌন সম্মতি দিলে।
  • ঝ) ট্রাষ্ট ভঙ্গ ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে, যেখানে স্থগিতাদেশ বাদে অন্য কোন ভাবে যথাযথ প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
  • ঞ) যখন কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির ব্যবহারের / কাজের কারণে স্থগিতাদেশ পাওয়ার যোগ্যতা হারায়।
  • ট) যখন যিনি স্থগিতাদেশ চান তার মামলায় কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ না থাকে।

না বোধক চুক্তিতে স্থগিতাদেশের সম্পাদনা (ধারা ৫৭)

ধারা ৫৬ এর উপধারা (চ)-তে যাই বলা থাকুক না কেন, যদি কোন চুক্তিতে একটি হ্যাঁ বোধক এবং একটি না বোধক অংশ / মতৌক্য থাকে (Agreement), এ দুটি বিষয় আলাদা করা যায়, এখানে না বোধক মতৌক্য (Agreement) টি যদি প্রকাশিত বা সুপ্ত (Expressed or Implied) অবস্থায় থাকে, এবং বাদী যদি তখন পর্যন্ত চুক্তি পালনে ব্যর্থ না হয়ে থাকে তবে, আদালত যদি হ্যাঁ বোধক চুক্তিটি বিশেষ ভাবে বাস্তবায়ন করতে অপারগ হয় তবুও না বোধক চুক্তিটিকে বিশেষ ভাবে সম্পাদন করা হতে বারিত করবেন না।


  • স্থগিতাদেশের আবেদনের ধরন দেখতে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের এই লিংকে

আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল lawhelpbd@gmail.com বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: rayhan@lawhelpbd.com more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!