Site icon আইন সেবা [ল হেল্প বিডি]

কিভাবে একটি কোম্পানি নিবন্ধন করবেন?

প্রত্যেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন থাকে যে তিনি একটি কোম্পানি নিবন্ধন করবেন তার প্রতিষ্ঠানটি একদিন বড় একটি কোম্পানি হবে, তিনি ডিরেক্টর হবেন, শত-সহস্র শ্রমিককে তার কোম্পানি চাকরি দেবেন, তিনি দেশ ও সমাজের জন্য বড় ভূমিকা রাখবেন। অনেকেই ভেবে থাকেই এই কোম্পানি গঠন করা বেশ কঠিন একটা কাজ এবং এটি করলে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় কারণ অনেকেই এই কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না বা অনেক সময় ভুল জানেন। আমরা আমাদের এই লেখায় সহজ ও বোধগম্য ভাবে কোম্পানির গঠন প্রক্রিয়া এ টু জেড উল্লেখ করবো। তাছাড়াও এই লেখায় আপনি এই লেখায় কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য সকল প্রয়োজনীয় গাইড লাইন পাবেন। যা আপনাকে প্রয়োজনীয় টার্মস ও বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করবে। আর যে কোন সাহায্যের জন্য আমরা তো আছি-ই।

আমাদের বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি আছে; তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত এবং সবচেয়ে বেশি যেই ধরনের কোম্পানি হয় সেটা হচ্ছে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। তাই আমরা আমাদের এই লেখায় মূলত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও তার নিবন্ধন নিয়ে আলোচনা করব। উল্লেখ্য যে আমাদের দেশের ৯৫-৯৭ ভাগ কোম্পানি-ই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি কারন এটা সহজে করা যায়, এর নিয়ম কানুন সহজ এবং নির্ভরযোগ্য।

 

কোম্পানি গঠনের আগে যেসব জানা ভালো

 

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি কি?

কিছু ব্যক্তি যখন ব্যক্তিগত ভাবে বা প্রাইভেটলি কোন কোম্পানি গঠন করেন তখন তাকে বলা হয় প্রাইভেট কোম্পানি। উল্লেখ্য যে চাইলেই যে কেই নিজের ইচ্ছামত এই কোম্পানির অংশীদার হতে পারে না যদি না মূল অংশীদাররা নতুনদের যুক্ত করতে অনুমোদন দেয়।

আর লিমিটেড কথাটি এসেছে শেয়ার লিমিট ও শেয়ার হোল্ডার / অংশীদার লিমিট থেকে, একটি লিমিটেড কোম্পানিতে কত টাকা বিনিয়োগ করা যাবে তা আগেই অথরাইজড ক্যাপিটালে মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় বা লিমিট করা হয়। সেই লিমিটের বাইরে কোন লিমিটেড কোম্পানি শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না।

আবার লিমিটেড কোম্পানিতে যারা অংশীদার থাকেন তাদের লাভ ও দায় তাদের শেয়ারের অনুপাতে তাদের উপর বর্তায় তাই এটাকে বলে লিমিটেড লায়াবেলিটি, এখানেও একটা লিমিট আছে। তাছাড়া একটি প্রাইভেট বা লিমিটেড কোম্পানিতে ২-৫০ জন পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডার বা অংশীদার রাখা যায় যেটাও লিমিটেড।

কোম্পানির আইন

আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ দ্বারা নিবন্ধিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য যে এই কোম্পানি আইনে ২০২০ সালে একটি উল্লেখযোগ্য সংশোধনী এসেছে।

প্রাক  পরিকল্পনা

আপনার কাছে অল্প কিছু টাকা থাকলেই আপনি একটি ফার্মের সাহায্য নিয়ে একটি কোম্পানির নিবন্ধন করতে পারেন তবে সেটা করার আগে অবশ্যই একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তার কিছু প্রাক পরিকল্পনা করতে হবে এবং তার ভবিষ্যৎ লক্ষ স্থির করতে হবে। একটি কোম্পানি গঠন করার আগে নিচের বিষয়গুলো আপনার বা আপনার (কোম্পানির) অংশীদারদের কাছে পরিষ্কার হওয়া বঞ্চনীয় ।

আপনি যদি ইতোমধ্যেই চিন্তায় পরে যান বা ভাবতে থাকে যে এতকিছু কি দরকার, তাহলে বলব চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার যদি বিষয়গুলো নিয়ে কনফিউশন লাগে সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসুন আপনার সহযোগিতার জন্য আমারা সর্বদা প্রস্তুত। আর কেন বিষয়গুলো আগেই ভেবে রাখা ভাল সেটা এই লেখাটি সম্পূর্ণ ভাবে পড়লেই আইডিয়া পেয়ে যাবেন।

 

কোম্পানির কিছু টার্মস (শব্দ) ও অর্থ

কোম্পানি গঠন করতে বা কোম্পানির নিয়ে কাজ করতে আপনাকে কিছু টার্মস বুঝতে হবে, আমরা জানি যে এই টার্মসগুলো প্রায় সবাই জানেন তবুও সহজ ভাষায় টার্মস গুলো একবার জেনে নেওয়া ভাল।

 

 

এখানে প্রতিটি বিষয় অতি-সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যদিও এখানকার প্রতিটি টপিক একটি করে নতুন আর্টিকেল দাবি করতে পারে, তবে সাধারণ পাঠকদের জন্য এই বিষয় গুলো বুঝলেই আপাতত যথেষ্ট হবে।  আপনি যদি এই বিষয়গুলো নাও বোঝেন তাতেও সমস্যা নেই শুধু একটা আইডিয়া নিলেই হবে।

ভিডিও: কিভাবে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নিবন্ধন করবেন

 

কি কি কাগজপত্র ও তথ্য লাগবে

একটি কোম্পানি গঠন করতে প্রত্যেক জন অংশীদারের নিচের কাগজপত্র ও তথ্যগুলো লাগবে।

প্রত্যেক অংশীদারের এই তথ্য ছাড়াও কোম্পানির জন্য একটি ঠিকানা প্রয়োজন হবে।

 

খরচ

খরচকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি

সরকারি খরচ

 

সরকারি খরচটা নির্ভর করে যে আপনার অথরাইজড ক্যাপিটাল কত করতে চান তার উপরে। নিচের টেবিল থেকে সংক্ষেপে দেখে নিতে পারেন যে কত টাকা অথরাইজড ক্যাপিটাল হলে কত টাকা সরকারি ফি হবে।

 

Private / Limited company (RJSC) registration fee list 2021

Based on authorised capital

কনসালটেন্সি, ডকুমেন্টেশন ও প্রসেসিং ফি

সরকারী খরচ ছাড়াও পুরো বিষয়টাতে আপনাকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে, আপনার ডকুমেন্টস তৈরি করতে ও পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আপনার একজন কনসাল্টেন্ট অথবা একজন আইনজীবীর প্রয়োজন হবে। তাছাড়াও আরও অন্যান্য খরচ হতে পারে যা একা একা নতুন করো পক্ষে করতে গেলে বিভ্রান্তি ও ভোগান্তির স্বীকার হওয়া সম্ভাবনা থাকে।

 

পেইড-আপ ক্যাপিটাল, কোম্পানির ধরন, শেয়ার হোল্ডারদের সংখ্যা, কোম্পানি নিবন্ধনের আগে ও পরের কাজের হিসাব করে। সাধারণত বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। এটা কোন ফার্মের অভিজ্ঞতা, কারা কাজ করছেন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। তবে এই কাজ কোন প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে করানোই ভাল। যাতে করে ভবিষ্যতে আপনি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন।

 

ল হেল্প বিডি ও বল এন্ড এসোসিয়েটস সুনামের সাথে বহুবছর ধরে কোম্পানির নিবন্ধন করে আসছে। আপনি যে কোন সময় কোম্পানির যে কোন বিষয় জানতে সরাসরি আমাদের চেম্বারে চলে আসতে পারেন। আমরা আপনাকে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আপনার কাঙ্ক্ষিত মূল্যে আপনাকে সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর।

 

উপরের বিষয়গুলোর একটি আইডিয়া নেয়ার পর আপনি যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে আপনি একটি কোম্পানি করতে যাচ্ছেন তবে আপনাকে অভিনন্দন। আর যদি আপনি এখনো কনফিউশনে থাকেন তবে আমাদের চেম্বারে আপনার দাওয়াত রইল। আমরা আপনার সমস্যা ও চিন্তা শুনে সহজ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব। সে যাই হোক, ধরে নেই আপনি একটি প্রাইভেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। চলুন তাহলে আমরা নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি দেখে নেই।

কোম্পানির নিবন্ধন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ Registrar of Joint Stock Companies And Firms (RJSC) বা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর যে কোন কোম্পানির নিবন্ধন দিয়ে থাকেন। কোন কোম্পানির বৈধ কাজ করার জন্য এই পরিদপ্তরের অধীনে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।

 

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ।

 

নামের ছাড়পত্র গ্রহন

কোম্পানি নিবন্ধনের প্রথম ধাপটি হচ্ছে নামের ছাড়পত্র নেওয়া কিন্তু নামের ছাড়পত্র নেয়ার আগে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে।

 

ভিডিও; কিভাবে কোম্পানির জন্য নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবেন

 

নাম খুঁজুন / সার্চ করুন।

 

অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন

নামের ছাড় পত্রের জন্য আবেদন করুন।

ধাপে ধাপে কোম্পানির নিবন্ধন করুন

নামের ছাড়পত্রের সাধারণ শর্তাবলী:

 

উপরের শর্তগুলো মেনে নামের আবেদন করার পর নেক্সট এ ক্লিক করলে আপনার কাছে একটা Submission Details information চলে আসবে। সেটা সংক্ষিপ্ত ভাবে দেখে আপনি Continue তে ক্লিক করবেন। তারপর আপনাকে একটা Acknowledgement পেইজ দেখাবে যেটা আপনার সেভ করে রাখতে হবে। তারপর আপনি কোন ব্যাংকে টাকা প্রদান করতে চান তা সিলেক্ট করলে আপনাকে সেই ব্যাংকের একটা রশিদ প্রদান করবে।

 

রিসিটি পাবার পরে আপনাকে ব্যাংকে নামের ছাড়পত্রের জন্য টাকা ২৩০ টাকা জমা দিতে হবে।

 

টাকা জমা দেওয়ার সাধারণত ২-৩ কর্ম দিবসের মধ্যে আপনি নামের ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন। এই লিংকে গিয়ে আপনি Submission Status এ ক্লিক করে Acknowledgement পেইজের নাম্বারটি প্রদান করে আপনার নামের ছাড়পত্র হয়েছে কিনা তা চেক করতে পারবেন।

ভিডিও; কিভাবে কোম্পানির নাম ঠিক করবেন এবং নতুন নিয়মে নামের ছাড়পত্র নিবেন

নিবন্ধনের জন্য আবেদন 

 

নামের ছাড়পত্র পেলে আপনাকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি একটু জটিল ও অনেক কিছু বোঝার ব্যাপার আছে তাই অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিলে কাজ সহজ হবে তবে যে যাই হোক এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে একটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা হোল।

 

 

আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করে ধাপে ধাপে ওয়েব সাইটের নির্দেশনা মতে এইসব দলিলে তথ্যগুলো আপলোড দিতে হবে। এবং দলিলগুলো সাইন করে, ছবি সংযুক্ত করে স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।

 

নামের ছাড়পত্র পবার ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। ৩০ দিনের পর আবেদন করতে চাইলে আবার নতুন করে নামের ছাড়পত্র নিতে হবে।

 

রেজিস্ট্রেশনের আবেদন সম্পন্ন হবার পর

 

রেজিস্ট্রেশনের আবেদন সম্পন্ন হবার পর, এক মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের সরকারি ফি জমা দিতে হবে।

 

আপনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এবং যথা সময়ে টাকা জমা দিলে সাধারণত টাকা জমা দেওয়ার ৭ দিনের মধ্যেই আপনার কোম্পানি নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

 

রেজিস্ট্রেশন হলে যেসব ডকুমেন্ট পাবেন

 

আপনার কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়ে গেলে আপনি একে একে তিনটি দলিল পাবেন। দলিল তিনটি হচ্ছে।

  1. Certificate of IncorporationCertificate of Incorporation
  2. Certified copy of Article of Association (AOA) and Memorandum of Association (MOA)
  3. Form XII

 

নিবন্ধনের পর

 

একটি কোম্পানি নিবন্ধনের পর আপনাকে অবশ্যই কিছু কাজ সতর্কতার সহিত করতে হবে।

 

নিবন্ধনের পর  আপনি যেসব ডকুমেন্ট পেলেন সেখানে সব তথ্য সঠিক আছে কিনা চেক করবেন। অনেক সময় অফিস থেকে কারণে বিনা কারণে কিছু ভুল করে থাকে।

যদি ভুলের কোন বিষয় না থাকে আপনি কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত কাগজপত্র নিয়ে দ্রুততার সাথে কোম্পানির একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে ফেলবেন। তারপর অংশীদারেরা তাদের শেয়ারে উল্লেখিত টাকা বা তাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল তাদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে কোম্পানির ক্রস চেকের মাধ্যমে কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করবেন। এই কাজটি অবশ্যই তিন মাসের মধ্যে করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এই টাকা জমা হওয়ার পর যে কোন সময় কোম্পানির যে কোন কাজে তোলা যাবে এবং ব্যবহার করা যাবে। এই টাকা কোম্পানির ইনভেস্ট হিসাবে বিবেচিত হবে।

 

এরই মাধ্যমে আপনি সহজে ও সুন্দর ভাবে একটি কোম্পানি নিবন্ধনের মাধ্যমে গঠন করতে পারেন এবং দেশ ও দশকে সামনের দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আপনার এই অগ্রযাত্রায় আমাদের সঙ্গী করলে আমরা কৃতজ্ঞ হব। কোম্পানি বিষয়ক যে কোন প্রয়োজনে আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন।

Read in English: Company registration process in Bangladesh.

 

সরাসরি যোগাযোগ করতে পারনে;
Adv. Rayhanul Islam
Baul & Associates, House # 4/2 (1st Floor) Block# C, Lalmatia, Dhaka – 1207
আমাদের ই-মেইল করুন:
lawhelpbd@gmail.com এ বা প্রয়োজনে ফোন করুন: +880 1711386146 নম্বরে।

আরো দেখুন:

বন্ধুদের জানান
Exit mobile version