Site icon আইন সেবা [ল হেল্প বিডি]

তামাদি আইন কি? | তামাদি ০১

প্রতিটি মামলা বা মোকদ্দমা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হয় নয়তো সেটি তামাদি বা তামাদি আইন দ্বারা বাড়িত হয়। সহজ ভাষায় কেউ যদি কোন একটি বিষয়ে মামলা করতে চায় তে সেই ঘটনাটি ঘটার পর একটি (আইন দ্বারা) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তার প্রতিকার তা চাইতে হবে তা না হলে আদালত তা বিচারের জন্য গ্রহণ করবেন না এবং সেই দাবিটি বাতিল হবে।

চলুন গল্পের ছলেই শুরু করি যাতে বাস্তব জীবনের সাথে সহজে বিষয়টি বোঝা যায়।

রহিম মিয়া, করিম সাহেবের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার নিয়েছি। করিম সাহেব ৭ বছর পর বলল, রহিম মিয়াতো আমার টাকা ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে করিম মিয়াতো বলেন, না সে টাকা ফেরত দিয়েছে তাও আবার ২ বছরের মধ্যেই কিন্তু ঘটনাটা বেশ আগে ঘটায় কেউ যথাযথ দলিল বা সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে পারছে না। এখন ঘটনাটি অনেক আগের ঘটায়, কে সত্য বলছে বা কে মিথ্যা বলছে তা বের কর কঠিন, কখনো কখনোবা অসম্ভব।

তাই এখানে করিম সাহেবের দায়িত্ব-জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে। সে যদি টাকা পেত তবে কেন এতদিন পর সেটা চাইল? এখানে আইনের একটি বহুল ব্যবহৃত নীতি চলে আসে “Equity aids the vigilant, not those who slumber on their rights” অর্থাৎ যে তার অধিকার নিয়ে জাগ্রত থাকে আইন তাকে সাহায্য করে, যে তার অধিকার বুঝেও ঘুমিয়ে থাকে তাকে নয়।

আর ঠিক এমন সব বিষয় সমাধান করতে, কখন বা কত দিনের মধ্যে কোন মামলা / মোকদ্দমা করতে হবে এবং তা কিভাবে গণনা করতে হবে এবং মানতে হবে তামাদি আইনের সূত্রপাত। চলুন তাহলে এক নজরে তামাদি আইন সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক।

কেন তামাদি আইন জানা দরকার?

তামাদি আইন দেওয়ানি মামালা করার সময় নির্ধারণ করে দিয়ে ন্যায় বিচার চাওয়ার জন্য একটি বাদী-গনকে একটি সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। মামালার ধরন, কারণ, উৎপত্তি ভেদে এই সময়কে নানান ভাবে ভাগ করা হয়েছে, আবার সময় কখন কিভাবে গণনা করা হবে এবং বিশেষ সুবিধা অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা কিভাবে হিসেব করা হয় তাও ব্যাখ্যা করা আছে।

এইবার যদি আমারা এক কথায় উত্তর চাই যে,

তামাদি আইন কি?

তামাদি আইন হল সেই আইন যার মাধ্যমে কোন মামলা বা অন্য কোন বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময়ের নিয়ম মানতে হয় সেই নিয়ম সমৃদ্ধ আইন। এই আইনে বলা আছে কখন মামলা করতে হবে, কত দিনের মধ্যে, সময় গণনার পদ্ধতি ব্যতিক্রম কিছু বিষয় ইত্যাদি।

আমাদের দেশের তামাদি আইন হচ্ছে The Limitation Act, 1908 তাছাড়াও অন্যান্য আইনেও বিভিন্ন বিষয়ে তামাদির কথা বলা হয়েছে।

তামাদি আইনের মূল ভাগ

তামাদি আইনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১. সীমাবদ্ধতা (Limitation) : কখন আর মামলা করা যাবে না, অর্থাৎ মামলা করার সময় সীমা ও তদসংশ্লিষ্ট ধারা গুলো আছে এই আইনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খণ্ডে, ধারা ৩ থেকে ২৫ এর মধ্যে। এই আইনের এই বড় অংশটি পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law), এখানে কিভাবে কার্য পরিচালনা হবে তা বলা আছে। এটি কোন অধিকারে বাধা প্রদান করে না শুধুমাত্র আদালতে প্রতিবিধান চাওয়ার সময়কে নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বাদী চাইলে অন্য ভাবে তার অধিকার আদায় করতে পারেন। যেমন ধরুন মীমাংসার মাধ্যমে।

২. বিধি নিষেধ (Prescription / Extinction Prescription) : এই অংশে (চতুর্থ খণ্ড) শুধুমাত্র কখন মামলা করা যাবেনা তাই বলেনি বরং এটি Substantive আইনের মত বিধি বিধানও সংযুক্ত করে বলে দিয়েছে যে কখন অধিকার আর থাকবে না । এই ধারাগুলো অধিকারে বাধা প্রদান করে এবং অধিকার বাতিল করে অর্থাৎ পরে আর কোন উপায়ে অধিকার আদায় করার চেষ্টা করা যাবে না।

৩. অর্জন বিধি বিধান (Acquisition prescription) : এটি এক ধরনের বিধি বিধান (prescription) যেখানে (চতুর্থ খণ্ডে) বলা হয়েছে কখন অধিকার থাকবেনা এবং নতুন অধিকার জন্মাবে। যেমন এই আইনের ২৬ থেকে ২৮ ধারার মধ্যে ইজমেন্ট অধিকারের কথা বলা আছে।

তামাদি আইনের সাধারণ নিয়ম

তামাদি আইনের গুরুত্ব

আইন ও সাক্ষী সঠিক থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ তামাদি আইন সঠিক ভাবে না মানেন, সহজ ভাষায় বলা যায় সঠিক সময়ে মামলা না করেন তাহলে আসলে কোন লাভ-ই হবে না। তাই বাস্তবিক জীবনে তামাদি আইন যানা খুব-ই প্রয়োজন। তাছাড়াও বার কাউন্সিল এমসিকিউ (MCQ) ও লিখিত পরীক্ষায় ভাল করার অন্যতম উপায় হচ্ছে ভাল তামাদি আইন জানা। চলুন আমরা একটু একটু করে বুঝে আইনটি পড়া শুরু করি।


আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।

বন্ধুদের জানান
Exit mobile version