সুখাধিকার, এডভার্স পজিশন ও  সময়সীমা | তামাদি ০৬

আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন যে জমি কিনলে যাতায়াতের পথ দিতে হয়, আবার হয়তো এও অনেকে জানেন যে ১২ বছর কোথাও কেউ কোন সম্পত্তিতে দখলে থাকলে সে ঐ সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়। কিন্তু আসলে এই কথাগুলো কতটুকু সত্য এবং এর আইনি ভিত্তি-ই বা কি তা নিয়ে প্রশ্ন  আসতে পারে? এসব বিষয়ে তামাদি আইনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে,  চলুন এই বিষয়গুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

দখলের কারণে সুখাধিকার বা ইজমেন্ট (easement right) (ধারা ২৬)

সুখাধিকার কি?

যদি কোন ব্যক্তি বা তার সম্পত্তি একটানা ২০ বছর ধরে কোন বাধা ছাড়া, শান্তি পূর্ণ ভাবে এবং উন্মুক্ত ভাবে (সবাই জনে এমন) অন্য কোন ব্যক্তির জমির উপর দিয়ে আলাে বাতাস ভােগ করে বা যেখানে পথ বা পানির পথ/ নালার পথ হিসেবে ব্যবহার করে তখন ঐ ব্যক্তি ঐ অন্য ব্যক্তির ঐ ব্যবহার্য জমির উপর এক ধরনের অধিকার লাভ করে; যেসব সুযোগ (যেমন, জাতায়াত, আলো-বাতাস ইত্যঅদি) সে পেয়েছিল তা বজায় রাখার অধীকার। এই অধীকারের নাম  সুখাধিকার বা ইজমেন্ট (easement right)  যা অবাধ এবং অখণ্ডনীয়।

অর্থাৎ আমরা যদি ধরি ক ‘য়ের একটি জমি খ, এবং ক গ’য়ের জমি ড’য়ের উপর দিয়ে প পথ ২০ বছর ধরে ব্যবহার করেছে। এখন এই প পথের উপর ক য়ের জমি খ’য়ের একটি সম্পর্ক যুক্ত হয়েছে। এখন ক যদি তার জমি খ’টিকে র’য়ের কাছে হস্তান্তর করে তবে র’ও সেই প পথের। অধিকার লাভ করবে।

সরকারি জমির ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটবে তবে তার জন্য ২০ বছরের জায়গায় ৬০ বছর প্রয়ােজন হবে।

উদাহরণ:

ক একজন ইজমেন্ট অধিকারী যে খ য়ের জমির উপর ২০ বছর ধরে চলার পথ পেয়ে আসছে, ২১ বছর পরে সে চলা পথে জমির মালিকের দ্বারা বাধা পেয়ে আদালতে যায় এবং প্রমাণ করে সে ২০ বছর ধরে ইজমেন্ট অধিকার পেয়ে আসছিল, তখন রায় ক’য়ের পক্ষে যাবে।

অন্য দিকে একই ঘটনায় জমির মালিক যদি প্রমাণ করে ২০ বছরের মধ্যে ক তার কাছে পথের জন্য অনুমতি চেয়েছিল তবে রায় জমির মালিকের পক্ষে যাবে।

তামাদি আইন ও দখলের সময়

তামাদি আইন ও দখলের সময়

সুখাধিকারের সময় গণনার ব্যতিক্রম (ধারা ২৭)

এটা একটু গল্পের মধ্যমে বােঝাই শ্রেয়, ধরুন ক একজন হিন্দু বিধবা তিনি একটি জমি তার স্বামীর কাছে থেকে জীবন সত্ত্ব বা লাইফ ইন্টারেস্টে (Life Interest) পেয়ে ৫ বছর ধরে ব্যবহার করলেন, তারপর মারা গেলেন। (জীবন সত্ত্ব: আমরা জানি হিন্দু মহিলারা সম্পত্তির মালিক হয় না, তবে জীবনভর ভােগ করার অধিকার পায়।)

সেই জমির বর্তমান মালিক তার ছেলে খ, এখন এই জমির উপর দিয়ে গ ব্যক্তি ২০ বছর ধরে ইজমেন্ট অধিকার নিয়ে আসছে (ধরি পথের অধিকার), এখানে মালিক ছাড়া অন্য কেউ যদি কোন কোন অধিকার বলে (লিজ হতে পারে) ৩ বছরের বেশী সময় ধরে ভােগ দখল করে তবে ঐ সময় ইজমেন্ট হবার অধিকার হতে বাদ যাবে।

এখানে গ যদি ইজমেন্টের অধিকার অবিভাজ্য বলে দাবি করে তখন সে তা আইনগত ভাবে পাবে না কারণ তার ২০ বছর অধিকার ভােগের মধ্যে ঐ বিধবার ৫ বছরও ছিল যা বাদ দিয়ে হিসেব করতে হবে।

সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্ত হওয়া। (ধারা ২৮)

এই ধারা বলে তামাদি আইনে জোরপূর্বক অবস্থানে থাকার যে সময়ের মধ্যে মামলা করার অধিকার দেওয়া আছে (১২ বছর) সেই সময়ে পর মামলা করার অধিকারের সাথে সাথে সম্পত্তির অধিকারও চলে যাবে। তবে এই এডভার্স পজিশন (adverse possession) বা জোরপূর্বক অবস্থানের কারণে অধিকার জন্মানাের জন্য কিছু বিষয় প্রয়ােজন।

  • ১. শুধুমাত্র স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে।
  • ২. শুধুমাত্র মামলা করার জন্য প্রযােজ্য হবে।
  • ৩. প্রকৃত অবস্থায় থাকতে হবে।
  • ৪. যথাযথ ভাবে ও বিরতিহীন ভাবে অবস্থানে থাকতে হবে।
  • ৫. কোন ধরেনের বিনিময়ে বা আইনগত ভাবে অবস্থানে থাকলে হবে না।
  • ৬. যার সম্পত্তি তার এই অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত হতে হবে।
  • ৭. শুধুমাত্র জমির যে অংশে দখলে থাকবে সে অংশ এডভার্স পজিশন হিসেবে গণ্য হবে, পুরু সম্পত্তি নয়। |

এই ধারাটি, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ৮ এবং তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৪২ ও ১৪৪ এর সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে।

 

তামাদি আইন প্রযোজ্য হয় না (ধারা: ২৯)

কিছু ক্ষেত্রে এই তামাদি আইন এর প্রয়োগ হয় না বা বিশেষ অবস্থা বিবেচনা করতে হয়। যেমন:

  • তামাদি আইন চুক্তি আইনের ২৫ ধারাকে প্রভাবিত করে না। [যেখানে বলা আছে Consideration ছাড়া কোন চুক্তি হলে সেটা বাতিল বা বাতিল যোগ্য হবে]
  • বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৬৯ এ এই আইনের প্রয়োগ হবে না।
  • যেখানে Easement Act 1882 অনুসরণ করা হবে সেখানে এই আইনের ২৬ এবং ২৭ ধারার প্রয়োগ হবে না।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!