জাল দলিল চিনুন

আমরা যারা আইন আদালত একটু কম বুঝি সহজেই মানুষ তাদের জাল দলিল দিয়ে ঠকানোর চেষ্টা করতে পারে তাই এই বিষয়ে সতর্ক না হলে আমার নিস্বও হয়ে যেতা পারি তাই আসুন জার দালিল চেনার  কিছু উপায় আজকে জেনে রাখা যাতে করে আমার প্রাথমিক ভাবে কোন দলিলের সম্পর্কে ধারনা পেতে পারি। তবে ফাইনাল কিছু কারার আগে অবশ্য এক্সপার্টদের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ, চলুন দেখি;

জাল দলিল চেনার কিছু উপায় :

ক) দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে। যদি কোন দলিল নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।

খ) একই জমি একাধিক মালিকের নামে মালিকানা করা থাকলে সরেজমিনে জমিটি যে এলাকায় সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে, তা খুঁজে বের করতে হবে।

গ) স্বাক্ষর জালিয়াতির ক্ষেত্রে ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করে ও স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করিয়ে নকল স্বাক্ষর নির্ণয় করতে হবে। তবে এ সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে । যেমন :
# পুরনো দলিল কিন্তু সিল নতুন, কিংবা সরকারী বন্ধের দিনের উল্লেখিত তারিখ,
# পুরোনো চিহ্নিত সিল কিন্তু নতুন, বিশেষ করে অর্পিত বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে নকল করা।

ঘ) মিউটেশন বা নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে তা জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে :
# বিক্রেতার খতিয়ানের সঙ্গে সিএস জরিপের মিল,
# জমিটি যতবার বিক্রি হয়েছে জরিপ খতিয়ানে জমির ঠিকানা ও দাগ নম্বরের পরিমাণ ততবার ঠিক উল্লেখিত আছে কিনা।

ঙ) বিক্রেতার কাছ থেকে জমির সঠিক মালিকানা জানতে ভায়া দলিল সহ সব দলিল চেয়ে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমির ক্রমিক ও দলিল নম্বর মেলাতে হবে ।

চ) জমিটির কোনো আমমোক্তারনামা দলিল করা হয়ে থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে ।

ছ) দানকৃত জমির ক্ষেএে :
# দলিল সম্পাদনের ও দখলের তারিখ,
# দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক এবং দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে ।

জ) সর্বশেষবার জমিটি বিক্রির সময় যে দলিল লেখকের সহায়তা গ্রহন করা হয়েছে তার নাম এবং ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রয়োজনে তার সাথে সরাসরি দেখা করে আলাপ করে নিতে হবে ।

ঝ) দলিলের উল্টো পৃষ্টায় উল্লেখিত স্ট্যাম্প ভেন্ডারের নাম, ঠিকানা ও ক্রমিক নম্বর এবং বিক্রির তারিখ দেখে এর সত্যতা জেনে নিতে হবে।

এতো গেল কিভাবে চিনবেন কিন্তু কেউ যদি আপনার বৈধ দলিলের প্রেক্ষিতে জাল দলিল করে তখন কি করবেন?

তামাদি আইনের প্রথম তফসিলের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাল দলিল তৈরি সম্পর্কে জানার তিন বছরের মধ্যে এ মামলা করা যাবে।

দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা হলে বিচারক বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করবেন এবং বিস্তারিত শুনে সাক্ষীর মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করবেন। এ ক্ষেত্রে জাল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করে ভুয়া প্রমাণ করা যায়।

জাল দলিল বাতিলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিধান অনুযায়ী দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪০ ধারা অনুসারে দলিল আংশিক বাতিলের মামলাও করা যাবে। দলিল বাতিলের সঙ্গে সম্পত্তির দখল পাওয়ার মামলাও করা যায়।

আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় দিলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠাতে হবে। এর পর সেই কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালাম বইতে লিপিবদ্ধ করে রাখবে।

আবার,  জাল দলিল তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারায় মামলা করা যায়। বিচারক চাইলে সেই মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিতে পারেন। তা ছাড়া মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠাতে পারেন। তদন্তে দলিল ভুয়া প্রমাণিত হলে আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারবেন আদালত।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!