জামিন, মুক্তি, অব্যহতি ও খালাস কি ও এদের পার্থক্য

আমাদের মধ্যে অনেকেই  জামিন, মুক্তি, অব্যাহতি , খালাস এই সব শব্দ গুলোর মধ্যে তালগোল মিলিয়ে ফেলেন। শুনতে একরকম হলেও কার্যত এদের মধ্যে রয়েছে বিস্তার তফাত। এদের প্রত্যেকটির পদ্ধতি, ফলাফল ও সংশ্লিষ্ট আইন আলাদা। চলুন সংক্ষেপে পার্থক্য সহ এই বিষয়গুলো একটু বুঝে নেয়া যাক।

জামিন(Bail):

জামিন আপনি যে কোন সময় পেতে পারেন । আসামী যদি আদালতকে বিশ্বাসযোগ্য কারন দেখাতে পারে এবং আদালত যদি মনেকরে আসামী কে জামিন দেয়া যায় তাহলে মামলা চলা অবস্থায় আসামী কে কারাগারে না রেখে জামিন দিতে পারে । অনেক সময় আদালত আসামী কে শর্ত বা লিখিত বন্ডের মাধ্যমে জামিন দিয়ে থাকেন । (ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা ৪৯৬-৪৯৮) আলোচনা করা আছে।

জামিন, মুক্তি, অব্যহতি ও খালাস

জামিন, মুক্তি, অব্যহতি ও খালাস

মুক্তি

আসামীর মুক্তির বিধান রয়েছে (ফৌজদারী কার্যবিধি দু’টি ধারায়:

  • ১১৯ ধারা: কার্যবিধি ১০৭ ধারার অভিযোগে ১১৭ ধারা অনুসারে ইনকোয়ারীর পর যদি প্রমাণ হয় যে, যার সম্পর্কে ইনকোয়ারী করা হল তাকে শান্তি রক্ষার বন্ড সম্পাদনের আদেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই তাহলে উক্ত ব্যক্তি যদি হেফাজতে থাকে তবে সে মুক্তি পাবে আর যদি হেফাজতে না থাকে তবে সে অব্যাহতি পাবে।
  • ২৪৯ধারা : কোন কারনে মামলার কার্যক্রম বন্ধ হলে আসামী মুক্তি পাবে। বা যদি এমন হয় যে আভিযোগ ছাড়া অন্য কোন ভাবে মামলা দায়ের করা হয়ে ছে তবে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সেই কারণ লিপিবদ্ধ করে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে আসামিকে মুক্তি দিতে পারবে।

বি.দ্র: জামিনে মুক্তি এবং মুক্তি এক নয়, অনেকে এই দুটিকে এক করে ফেলে। জামিনে মুক্তি সাময়িক ভাবে পুলিসের থেকে বা হাজেত থেকে মুক্তি মাত্র।

অব্যহতি (Discharge)

আসামীর অব্যাহতির বিধান রয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১১৯, ২০২-২(খ), ২৪১(এ), ২৬৫(গ) ও ৪৯৪(এ) ধারায় তা হল:

  • ১১৯ ধারা: কার্যবিধি ১০৭ ধারার নালিশ ইনকোয়ারীর পর যথার্থ বলে প্রতীয়মান না হলে যার বিরুদ্ধে নালিশ করা হয়েছে সে অব্যাহতি পাবে।
  • ২০২-২(খ) ধারা:  পুলিশ কোন মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে এবং ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত রিপোর্ট গ্রহণ করলে আসামী অব্যাহতি পারে।
  • ২৪১(এ) ধারা: কোন মামলায় আসামী হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবী করলে ম্যাজিস্ট্রেট চার্জ গঠনের পূর্বে ফরিয়াদী বা রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ পূর্বক যদি মনে করেন যে, অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং চার্জ গঠনের মত উপাদান নেই তবে তিনি কারণ লিপিবদ্ধ করে আসামীকে মামলা হতে অব্যাহতি দিতে পারেন।
    • মামলার শুরুতে মামলার নথি, পুলিশ রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট (যদি থাকে)ও অন্যান্য কাগজপত্র বিবেচনার পর যদি আসামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ না থাকে তবে আসামী অব্যহতি পাবে (আসামীর দাখিল করা কোন কাগজ বিবেচনায় আসবে না)।
  • ২৬৫(গ) ধারা: মামলার নথি, দাখিল দলিলাদি এবং তৎসম্পর্কে আসামী ও অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালাবার যথেষ্ট কারণ নেই, তাহলে আদালত আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিবেন এবং তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
  • ৪৮৪ ধারা: আইন অনুসারে করতে বাধ্য হওয়ায় স্বত্বেও কোন কাজ করতে অস্বীকার করলে, আদালতের প্রতি অবমাননা দেখালে আদালত কার্যবিধি ৪৮০ ও ৪৮২ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিলে এবং উক্ত ব্যক্তি আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন, এরূপ ক্ষমা করা হলে আদালত আসামীকে অব্যাহতি দিবেন।
  • ৪৯৪(এ) ধারা: পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদালতের অনুমতি নিয়ে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে পারবেন এবং এরূপ প্রত্যাহার যদি চার্জ গঠনের পূর্বে করা হয় তবে আসামী অব্যাহতি পাবে। অন্য ভাবে বলা যায়, পুলিশি মামলায় রাষ্ট্র পক্ষ চার্জ গঠনের পুর্বে মামলা প্রত্যাহার করিলে আসামী অব্যহতি পাবে।

খালাস (Acquittal)

আসামী খালাসের বিধান রয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৫(১), ২৪৭, ২৪৮, ২৬৫ এইচ, ২৬৫ কে, ২৪৫(৬) ও ৪৯৪ বি ধারায়:

  • ২৪৫(১) ধারা: শুনানিতে আসামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হলে আসামী খালাস পাবে।
    • মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের পর আদালত যদি আসামীকে নির্দোষ বলে সাব্যস্ত করেন তবে আদালত কারন লিপিবদ্ধ করে আসামেিক খালাস দিবেন।
  • ২৪৭ ধারা: নালিশি মামলায় শুনানির তারিখে ফরিয়াদি অনুপস্থিত থাকলে আসামী খালাস পাবে।
    • ফরিয়াদীর নালিশক্রমে সমন জারির পর পরবর্তী শুনানীর তারিখে ফরিয়াদী হাজির না হলে (যৌক্তিক সময় পর্যন্ত দেখা উচিত) ম্যাজিষ্ট্রেট আসামীকে খালাস দিতে পারেন।
  • ২৪৮ ধারা: নালিশি মামলায় ফরিয়াদি যদি মামলা বা নালিশ প্রত্যাহার করে তবে আসামী খালাস পাবে।
    • কোন মামলায় চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার পূর্বে ফরিয়াদী যদি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশ প্রত্যাহারের আবেদন দেয় এবং ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন আবেদন যথার্থ তবে তিনি আবেদন গ্রহণ করবেন এবং আসামীকে খালাস দিবেন।
  • ২৬৫(এইচ) ধারা: অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর জবানবন্দি গ্রহণ এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে বলে কোন সাক্ষ্য প্রমান নাই, তাহলে আদালত আসামীকে খালাস দেবেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
  • ২৬৫(কে) ধারা: দায়রা আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণের পর যদি আসামীকে দোষী বলে সাব্যস্ত করেন তবে কারণ লিপিবদ্ধ করে আসামীকে খালাস দিবেন।
  • ৩৪৫(৬) ধারা: মামলার উভয় পক্ষের আপোষমীমাংসায় মিমাংসা হলে আসামী খালাস পাবে, তবে শর্ত থাকে মামলাটি মীমাংসাযোগ্য হতে হবে।
  • ৪৯৪(বি): পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদালতের অনুমতি নিয়ো কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে পারবেন তবে এরুপ মামলা সরকার কতৃক দায়েরকৃত হতে হবে এবং এরূপ প্রত্যাহার যদি চার্জ গঠননের পরে করা হয় তবে আসামী খালাস পাবে।

অব্যাহতির ক্ষেত্রে শুধু অনুসন্ধান করা হয়, বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয় না। যদি অব্যাহতির পর নতুন সাক্ষ্য প্রমান উদঘাঁটিত হয়, তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ ঘটন করা যায়। অন্যদিকে কোন আসামীকে বিচারে খালাস প্রদান করলে, পুনরায় তার বিরুদ্ধে একি অপরাধের অভিযোগ ঘটন করা যায় না। অব্যাহতির আদেশ আদালতের কোন রায় নয়। কিন্তু খালাসের আদেশ আদালতের একটি রায়।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!