কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা Central Bank কি?

সেন্ট্রাল/কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি?

নাম থেকেই ধারনা পাওয়া যায় সব ব্যাংকের কেন্দ্র এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা Central Bank। প্রতিটি দেশে সাধারণত একটি মূল ব্যাংক থাকে যা অন্য সকল ব্যাংকে নিয়ন্ত্রণ করে, দেশের মুদ্রা ছাপায়, সংরক্ষণ ও বিতরণ করে ও এর তদারকি করে। মূলত দেশের সকল অর্থনৈতিক কর্ম কাণ্ডকে দেখভাল করা এবং দেশের অর্থ তথা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এই ব্যাংকের লক্ষ ও উদ্দেশ্য।

দুজন ব্যক্তি ভালভাবেই সেন্ট্রাল ব্যাংকের সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন।

সেন্ট্রাল ব্যাংক হলো ঋণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল – অধ্যাপক হট্টে
সেন্ট্রাল ব্যাংক হলো একটি ঋণ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যাংক – অধ্যাপক শ

সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাজঃ

সেন্ট্রাল ব্যাংককে কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। যেমন সেন্ট্রাল ব্যাংকঃ

  • দেশে নোট ও মুদ্রার প্রচলন করে।
  • বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বদা দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিসার্ভ বাড়ানোর কাজ নিয়ন্ত্রন করে। অন্য দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোও বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপারে তাদের নীতিমালা ঠিক করে এবং বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রন করে।
  • মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা করে। দেশের অর্থনীতিতে সমতা বিধান ও মূল্যস্তর স্তিতিশীল রাখে। দেশের মুদ্রা বাজার গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে।
  • তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কার্যাবলী নিয়ন্ত্রন করে এবং তাদের রিসার্ভ সংরক্ষণ করে থাকে। অন্যান্য সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোও এভাবে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কিছু কার্যাবলী নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
  • দেশের ঋণের পরিমাণ কাম্যস্তরে বজায় রাখে। অন্যান্য দেশ থেকে কি পরিমাণ ঋণ নেয়া হবে, কিভাবে খরচ হবে ইত্যাদি নির্ধারণ করে। ফিসকাল সমস্যা নিয়ন্ত্রনে পদক্ষেপ গ্রহন করে।
  • সেন্ট্রাল ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট নির্ধারণ করে।

ফরেক্স মার্কেটে প্রভাবঃ

মুদ্রা ছাপানোঃ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে সেন্ট্রাল ব্যাংক নোট এবং মুদ্রা ছাপায় এবং সংকট সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। আমরা যে কিছুদিন পর পর নতুন নতুন নোট দেখতে পাই, তা বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক – বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানেই হয়ে থাকে। যখন সরকার বন্ড বিক্রি করে লোণ পরিশোধ করতে পারেনা, তখন মুদ্রা ছাপিয়ে অবস্থা সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপানোর ফলে অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়ার সুযোগ থাকে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনঃ বাজারে অতিরিক্ত মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে মুদ্রাস্ফীতি বা Inflation বেড়ে যায়। এতে মুদ্রার মান কমে জায় এবং কারেন্সি দুর্বল হয়ে পরে। সেন্ট্রাল ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে কাজ করে থাকে।

ইন্টারেস্ট রেট নির্ধারণঃ সেন্ট্রাল ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট নির্ধারণ করে থাকে। ইন্টারেস্ট রেট বৃদ্ধির মাধ্যমে সেন্ট্রাল ব্যাংক নতুন ইনভেস্টরদেরকে মার্কেটে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী করে তোলে। ফলে ঐ দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয় এবং কারেন্সিও শক্তিশালী হয়। অপরদিকে ইন্টারেস্ট রেটের হার কমাতে থাকলে ‘ইকনোমিক বাবল’ হওয়ার সুযোগ থাকে।

ফিসক্যাল সমস্যা সমাধানঃ ফিসক্যাল বা জাতীয় ঋণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে সেন্ট্রাল ব্যাংক কাজ করে এবং নীতিমালা নির্ধারণ করে।

ক্যাশ রিসার্ভ রেশিওঃ ক্যাশ রিসার্ভ রেশিও নির্ধারণের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ব্যাংক মার্কেটে মানি সাপ্লাই নিয়ন্ত্রন করে।

এছাড়াও সেন্ট্রাল ব্যাংক নানা কাজ করে থাকে। ফরেক্স ইকনোমিক ক্যালেন্ডারে দেখবেন প্রায় প্রতিদিন সেন্ট্রাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন মিটিং থাকে। এসব মিটিংয়ে এই সকল বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর ব্যাপারে কথা বললে বা ইঙ্গিত দিলে বা মুদ্রা ছাপানোর কথা বললে তা কারেন্সিকে শক্তিশালী করে। এটাকে More hawkish than expected বলা হয়। ইন্টারেস্ট রেট কমানোর ব্যাপারে কথা বললে বা নেতিবাচক ইঙ্গিত দিলে তা কারেন্সিকে দুর্বল করে। এটাকে More Dovish than expected বলা হয়। এসব ইকনোমিক ইভেন্ট ফরেক্স মার্কেটে ভাল প্রভাব ফেলে থাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রতিষ্ঠার সাল ও মুদ্রার নাম :

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকা ও সাল

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, তালিকা ও সাল

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিকানার ধরন :

বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিকানার ধরন:

মজার বিষয় হল যে অনেক দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক সরকারী মালিকানাধীন নয়। এগুলো বেসরকারি কিংবা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকানাধীনও হয়ে থাকে। এমনকি আমেরিকার ফেডারেল রিসার্ভ সিস্টেমও একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকানাধীন।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!