সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে সম্পত্তি দখল ও পুনরুদ্ধার; ধারা ৮-১১ | SR 03

আমরা আমাদের আগের টিউটোরিয়ালে দখল সম্পর্কে জেনেছি এবং দখল ও বেদখল সম্পর্কে ধারনা পেয়েছি এবং জেনেছি দখল বিষয়টা আইনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি দখল নানা রকমের হয়ে থাকে তবে বিষয় অনুযায়ী ভাগ করলে আমরা প্রধানত দুই ধরনের দখল দেখতে পাই। ১. স্থাবর সম্পত্তির দখল ও ২. অস্থাবর সম্পত্তির আর এই দুই ধরনের দখল বেদল বিষয়ে আইন এবং সম্পত্তি ও দখল পূনরুদ্ধারের উপায় বলা আছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ধরা ৮ -১১ তে। আসুন এই গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো একটু বুঝে পড়ি।

স্থাবর সম্পত্তি ও দখল পুনরুদ্ধার 


স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার [ধারা, ৮]

যে ব্যক্তি পজিশন / দখল পাবার যোগ্য / অধিকারী (সাধারণ ভাষায় আইনগত মালিক, ষ্ট্রাষ্টি, লাইফ ইন্টারেস্ট প্রাপ্ত ব্যক্তি, লিজ বা ভাড়া নিয়েছে এমন কেউ বা যার আইনগত ভাবে ইন্টারেস্ট  আছে এমন কেউ ) সে তার সেই স্থাবর সম্পত্তিটি [অন্য কারো কাছে থেকে, যে পজিশনে আছে] পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

১২ বছরের মধ্যে এই দল পূনরুদ্ধারের মোকদ্দমা করতে হবে।

দখল পুনরুদ্ধার [ধারা, ৯]

কেউ যদি কোন স্থাবর সম্পত্তির দখলে থাকে এবং তাকে উচ্ছেদ করা হয় তবে সে সেই দখলে অবস্থান করার জন্য / ফিরে পাবার জন্য দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করবেন।

৬ মাসের মধ্যে এই মোকদ্দমা করতে হবে।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে সম্পত্তি ও দখল পুনরুদ্ধার

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে সম্পত্তি ও দখল পুনরুদ্ধার

অস্থাবর সম্পত্তি ও দখল পুনরুদ্ধার


অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার [ধারা, ১০]

যে ব্যক্তি কোন অস্থাবর [movable] পজিশন / দখল পাবার যোগ্য / অধিকারী (সাধারণ ভাষায় আইনগত মালিক, ষ্ট্রাষ্টি, লাইফ ইন্টারেস্ট প্রাপ্ত ব্যক্তি, লিজ বা ভাড়া নিয়েছে এমন কেউ বা যার আইনগত ভাবে ইন্টারেস্ট  আছে এমন কেউ ) সে তার সেই স্থাবর সম্পত্তিটি [অন্য কারো কাছে থেকে, যে পজিশনে আছে] পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

সহজ ভাষায় বলা যায়,

কোন ব্যক্তি যদি কোন সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তির দখলে থাকার অধিকারী হন (সাধারণত মালিক বা তার মাধ্যমে প্রাপ্ত) তবে তিনি সেই সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তিটি দেওয়ানি কার্যবিধিতে বর্ণিত উপায়ে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। (ধারা ১০)

চলুন ব্যাখ্যা ও উদাহরণের সাহায্যে বিষয়গুলো বুঝে নেওয়া যাক

ব্যাখ্যা

ব্যাখ্যা ১: একজন ট্রাষ্টি তার স্বত্বভোগীর (Beneficiary) উপকারের জন্য কোন অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারবে।ব্যাখ্যা ২: এই ধারায় বর্তমানে (মামলা করার সময়) কোন বিশেষ বা অস্থায়ী অধিকার থাকলে তাই মামালা কারার জন্য যথাযথ হবে।

উদাহরণ

  • ক) ক একটি জমি খ’য়ের নামে ইচ্ছাপত্র দ্বারা দান করে গেল, যেটা গ এর কাছে ছিল। এরপর ক মারা গেল, খ সেই জমি দখল করল কিন্তু গ খ’য়ের সেই দলিল তার অনুমতি ছাড়া দখল করে রাখল। এখানে খ ইচ্ছাপত্রটি দখলে পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারবে।
  • খ) ক কিছু অলংকার খ এর নিকট বন্ধক রেখে ধার নিলো। খ সেই অলংকার টাকা পরিশোধের সময় শেষ হবার আগেই অন্য একজনের কাছে হস্তান্তর করে ফেলল। তারপর ক টাকা পরিশোধ না করেই সেই অলংকার ফিরত চেয়ে মামলা করল। এইখানে এই মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে। কারণ মামলা করার সময় কেবলমাত্র খ’য়ের-ই অধিকার ছিল অলংকার দখলে রাখার, সেই মুহূর্তে ক’য়ের সেই অলংকার দখলে রাখার অধিকার ছিলনা।
  • গ) ক কিছু বই ও কাগজ খ’য়ের কাছে রাখতে দিল, যেগুলো খ হারিয়ে ফেলে এবং গ সেগুলোকে খুঁজে পায় কিন্তু গ সেগুলো ফিরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এখান খ সেগুলো ফেরত পাবার জন্য মামলা করতে পারবে। যেহেতু সে সময়ে ঐ বস্তু গুলোর উপর খ’য়ের অস্থায়ী দখলাধীকার ছিল।
  • ঘ) ক, একজন গুদাম রক্ষক, কিছু পণ্য গ’য়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্বে ছিল, যেটা কিনা খ দখল করে, ক এখানে খ’র বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।

অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার [ধারা, ১১ ]

মালিক না হয়েও যদি কোন ব্যক্তি কোন বস্তু তার দখলে রাখে, তবে তিনি এই ধারার মাধ্যমে ঐ বস্তুটি পাওয়ার অধিকারী ব্যক্তির নিকট প্রদান করতে বাধ্য হবেন।

কখন কখন এমন হতে পারে?

  • যখন দখলদার এজেন্ট বা ট্রাষ্টি।
  • যখন টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়।
  • যখন একচুয়াল ক্ষতি পরিমাপ করা যায় না।
  • যখন ঐ বস্তুটি ভুল / অন্যায় ভাবে দখলদারের কাছে যায়।

চলুন এটাকেও আমরা একটু সহজ করে নেই;

কোন ব্যক্তির দখলে যদি কোন অস্থাবর সম্পত্তি থেকে থাকে যার মালিক তিনি নন তবে তাকে সেই অস্থাবর সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের (Immediate possession) নিকট নিম্নোক্ত অবস্থায় দখল হস্তান্তরে বাধ্য করা যেতে পারে।

যখন;

  • ক. বিবাদী যখন বাদীর ট্রাষ্টি বা এজেন্ট হিসেব কাজ করেন, এবং অবৈধ ভাবে দখল করেন।
  • খ. যখন টাকার দ্বারা ক্ষতির মূল্য দেওয়া যায় না।
  • গ. যখন পণ্যটির বা ক্ষতির মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।
  • ঘ. যখন বস্তুটি বেআইনি ভাবে হস্তান্তরিত হয়।

উদাহরণ

আসুন এবার আমারা সংক্ষেপে উদাহরণের সাহায্যে বিষয়গুলোর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নেই।

  • ক. এ ইউরোপে যাওয়ার আগে বি এর কাছে এজেন্ট হিসেবে তার আসবাবপত্র গুলো রেখে যায়, বি আবার এ’র অনুমতি ছাড় সেগুলো সি এর কাছে বন্ধক রাখে, সি পুরো বিষয়টা জেনেও সেগুলো রাখে এবং পরে বিক্রি করতে চায়। এখানে, সি’কে পণ্যগুলো এ’এর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্য করার যেতে পারে।
  • খ. জেড জনাব এ’এর একটি পারিবারিক ধর্মিয় মূর্তি পেল, যা তার পরিবারের একটি ঐতিহ্য। জেড’কে ঐ মূর্তিটি ফেরত দিতে বাধ্য করা যেতে পারে। এখানে মূর্তিটি তাদের কাছে অমূল্য যা কোন অর্থ এর মূল্য নির্ধারণ করতে পারে না।
  • গ. এ একটি ছবি ও একটি ফুলদানির স্বত্ববান, সেই ছবিটি আবার একজন বিখ্যাত চিত্রকারের আকা যে কিনা বর্তমানে মৃত। বি এই যেকোনো ভাবে এই ছবি ও ফুলদানির দখল পেল। বি’কে এই ছবি ও ফুলদানি এ এর কাছে হস্তান্তরে বাধ্য করা যাবে। এখানে যেহেতু ঐ চিত্রকার মৃত তাই ঐ চিত্রকর্ম আর নতুন করে পাওয়া সম্ভব নায় তাই পণ্যটির বর্তমান দাম নির্ধারণ করা সম্ভব না।

আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!