বাংলাদেশের হিন্দু আইনে বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাক সম্ভব নয়, তবে আলাদা থাকার ব্যবস্থা আছে। কোন কারনে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব না হলেও বিবাহ বিচ্ছেদের কোন উপায় বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য এখনো পর্যন্ত নেই। হিন্দু ধর্ম অনুসারীরা মূলত তাদের শাস্ত্র এবং প্রথা মতে তাদের নিজস্ব পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত বিষয়ে অনুসরণ করে এবং বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে অবস্থা যদি খুবই সঙ্গিন হয় যে স্বামী – স্ত্রীর আর এক সঙ্গে বসবাস করা চলে না তখন হিন্দু স্ত্রী আইনের মাধ্যমে পৃথক ভাবে বসবাস করতে পারে এবং সেই সময়ে তার স্বামী তাকে ভরণ পোষন দিতে বাধ্য।
হিন্দু ধর্মে ধরে নেওয়া হয় একজন মানুষ তার পূর্ণতা পায় বিয়ের মাধ্যমে এবং দুজনে মিলে এক হয় (দুজন অর্ধেক ধরে) এবং ধরে নেওয়া হয় বিয়ের মাধ্যমে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু বাস্তবতায় আধুনিক পারিবারিক ব্যবস্থায় অনেক সময়েই এর উলটটা লক্ষ করা যায় যেখানে স্বামী স্ত্রীর বনিবনা হয় না বা অন্য কারনে তারা বিচ্ছেদ চান। কখনো একজন আবার কখনো দু জন-ই বিবাহ বিচ্ছেদ চান তবে দু:খে বিষয় হলেও সত্যি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হিন্দু দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের কোন আইন নেই। তবে সুধু কিছু নির্দিষ্ট কারণেই হিন্দু স্ত্রী পৃথক থাকার ও ভরণপোষণ পাবার অনুমতি পেতে পারেন।
যেসব কারনে হিন্দু স্ত্রী পৃথক থাকার ও ভরণপোষণ পাবার অনুমতি পেতে পারেন:
- যদি স্বামী কোন ঘৃণ্য বা নিকৃষ্ট রোগে ভোগে যা তার স্ত্রীর কাছ থেকে আসেনি।
- যদি এমন হয় যে স্বামী খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির এবং তার সাথে থাকা অনিরাপদ বা অনাকাঙ্ক্ষিত।
- যদি স্বামী তার স্ত্রীকে জানিয়েই অথবা তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে পরিত্যাগ করে।
- যদি স্বামী আবার বিয়ে করে।
- যদি তিনি (স্বামী) বাড়ীতে উপপত্নী রাখেন বা উপবাসের সাথে বসবাস করেন।
- যদি স্বামী অন্য কোন ধর্ম ধর্মান্তরিত হয়।
- অন্য কোনও যুক্তিযুক্ত কারণের জন্য।
১৯৪৬ সালের ‘বিবাহিতা নারীর পৃথক বাসস্থান ও ভরণপোষণ আইনের’ অধীনে আদালতে ‘দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের’ জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন৷ তবে স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত নারী, এ আইনের অধীনে স্বামীর কাছ হতে পৃথক হয়েও ভরণপোষণের অধিকারী হতে পারেন, কিন্তু কোন মতেই বিবাহ-বিচ্ছেদ পাবেন না।
ভারতে ১৯৫৫ সালে ‘হিন্দু বিবাহ আইন’পাশ হওয়ার পর থেকে স্বামী-স্ত্রী যে কোন পক্ষ সুনির্দিষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত কারণ আদালতে উপস্থাপনার মাধ্যমে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এ আইন প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশে অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন যারা বিবাহ বিচ্ছেদের মত একটি সাধারণ বিষয়ের একটি সহজ সমাধান চান কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নানা প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মতভেদের কারনে ও সদিচ্ছার অভাবে তা হয়ে ওঠেনি।
আরো বিস্তারিত দেখুন এখানে (ইংরেজীতে)