যখন দলিলের অনুমোদন (সংশোধন) করা যাবে; ধারা ৩১-৩৪ |SR 07

এখন কোন চুক্তির দলিল করলেই তা রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক নয়তো আইন আপনার সেই চুক্তিটির উপর ভিত্তি কে আপনাকে কোন [সাধারণত] প্রতিকার দেবে না, বিশেষ করে সুনির্দিষ্ট সম্পাদন তো একেবারেই না। [সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ধারা ২১এ]

আবার দলিল নানা কারণে সংশোধন করতে হতে পারে কিন্তু সেটাও আদালতের অনুমতি নিয়ে করতে হবে সুধুই রেজিস্ট্রেশন অফিসে দৌড়ে লাভ নেই। চলুন দেখি এমন কিছু বিষয়।

দলিল সংশোধন – Rectification of contract | ধারা – ৩১

যখন কোন প্রতারণা অথবা উভয় পক্ষের ভুল উপস্থাপনের করানে কোন দলিল তার উদ্দেশ্য থেকে দুরে চলে যায়, তখন যে কোন পক্ষ সেই দলিলটি সংশোধন পূর্বক অনুমোদনের জন্য আবেদন /মামলা করতে পারে, আদালত তখন দেখেন যে

  • (ক) কি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল
  • (খ) চুক্তির উদ্দেশ্য কি ছিল এবং
  • (গ)বর্তমান চুক্তির মধ্যের পার্থক্য

পার্থক্য অবশ্য দুটি কারণে হতে পারে ১. প্রতারণা অথবা ২. উভয় পক্ষের ভুল উপস্থাপনের করানে।

এ তিনটি বিষয় প্রমাণ হওয়া পরে আদালত দেখবেন সেখানে কোন তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ আছে কিনা, থাকলে সেই তৃতীয় পক্ষ কিভাবে সেই স্বার্থ পেয়েছেন, যদি সেই তৃতীয় পক্ষ না জেনে (প্রতারণা অথবা উভয় ভুল) কোন মূল্য/অর্থ দ্বারা সেই স্বার্থ পেয়ে থাকেন তবে আদালত তার কথা মাথায় রেখে তার যেন ক্ষতি না হয় তা বিবেচনা করে রায় দেবেন।

এ ধরনের মামলা করার মূল কারণ হচ্ছে যখন যে বিষয়ে চুক্তি করার কথা ছিল চুক্তিটি তার থেকে একটু দুরে সরে যায় এবং চুক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তখন চুক্তিটির প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দলিল সংশোধনের প্রয়োজন পরে।

যখন দলিলের অনুমোদন (সংশোধন) করা যাবে

যখন দলিলের অনুমোদন (সংশোধন) করা যাবে

এখানে কিছু বিশেষ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

  • ১. প্রতারণা অথবা উভয় পক্ষের ভুল উপস্থাপন থাকতে হবে।
  • ২. সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় আসতে পারবে না।
  • ৩. চুক্তির মূল বিষয় অস্পষ্ট হতে পারবে না।
  • ৪. প্রমাণের ক্ষেত্রে দলিলের আগে করা ড্রাফট গুলো প্রমাণ হিসেবে আসতে পারে, আবার মৌখিক সাক্ষ্যও আসতে পারে।
  • ৫. তৃতীয় পক্ষকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় খোজ খবর নিয়ে কিনতে হবে। এবং তার উদ্দেশ্য ভালো হতে হবে।
  • ৬. প্রমাণের দায় বাদীর উপর বর্তাবে

ব্যাখ্যা: ক তার একটি বাড়ি এবং তার পাশে অবস্থিত তিনটি গোডাউনের একটি বিক্রি করার জন্য খ’য়ের সাথে চুক্তি করল এবং সেমতে দলিল করলো। খ প্রতারণা করে তিনটির একটির বদলে দলিলে তিনটি লিখে দিল এবং চুক্তি সম্পাদনের পর খ গ’কে একটি গোডাউন দান করলো, ঘ’কে কে একটি গোডাউন ভাড়া দিলো এবং বাকি একটি সে নিজে রাখল। এখান গ বা ঘ ‘য়ের প্রতারণার বিষয়টি জানা ছিল না।

এমন অবস্থায় আদালত প্রথমে প্রতারণা হয়েছে তা প্রমাণের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে, (এখানে চুক্তি আইন অনুযায়ী মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমেও প্রমাণ করা যেতে পারে, যেহেতু একটি আর তিনটি গোডাউনের দাম সমান হবে না), তারপর দেখবে বিষয়টা কিভাবে সমাধান করা যায়, এখানে খ যেহেতু সুধু একটি গোডাউন পাবে তাই তার কাছ থেকে বাকি দুটি গোডাউন ফেরত নেওয়া হবে, খ এবং গ’কে দান যে গোডাউনটি দান করা হয়েছে (যেহেতু সে অর্থের বিনিময়ে কোন চুক্তিতে যায় নি) তা ফেরত নেওয়া হবে এবং ক’য়ের কাছে চলে যাবে, এবং ঘ যেহেতু চুক্তির মাধ্যমে ভাড়া প্রদান করে তাই তা তেমনি থাকবে এবং খ’য়ের মালিকানায় থাকবে।

 

দলিল সংশোধন (৩১) [Rectification] একনজরে
কেন? পক্ষগনের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরনের জন্য দলিল সংশোধন
কে আবেদন করতে পারে: পক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কেউ।
কখন?
  1. প্রতারণা
  2. পারস্পরিক ভুল
  3. দলিলের উদ্দেশ্য প্রকাশ না হলে
তামাদি মেয়াদ: ৩ বছর

পক্ষ-গনের ইচ্ছে সম্পর্কে অনুমান। ধারা – ৩২

দলিলের অনুমোদনের উদ্দেশ্যে যখন মামলা করা হবে, আদালতকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করতে হবে যে পক্ষ গন একটি ন্যায়বিচার এবং সচেতনতা সম্পন্ন মতৌক্য/ চুক্তি করেছে । এখানে “He who comes into equity must come with clean hands” নিতিটি প্রয়োগ করা হয়েছে।

দলিলের অনুমোদনের নীতি। ধারা – ৩৩

দলিলের অনুমোদনের উদ্দেশ্যে যখন মামলা করা হবে, আদালত তখন অনুসন্ধান করে দেখবেন যে, চুক্তির মুল উদ্দেশ্য কি ছিল এবং এর আইনগত ফলাফল কি। এমন কোন সংশোধন হবে না যা কিনা মূল উদ্দেশ্যের চেয়ে বা আইনি ফলাফলের চেয়ে আলাদা।

অনুমোদিত (সংশোধিত) দলিলের সুনির্দিষ্ট প্রয়োগ। ধারা – ৩৪

কোন ব্যক্তি সংশোধনের পরে, সেই দলিলটির (চুক্তির) সুনির্দিষ্ট সম্পাদন এই ধারার আওতায় চাইতে পারে।

ব্যাখ্যা: ক খ’য়ের সাথ ৫০০০টি বই নেয়ার চুক্তি করে এবং দুজনেই ভুলে প্রতিটির মূল্য ৫৫০ টাকার বদলে ৫৪০ টাকা ধরে এখানে খ প্রথমে সংশোধন করে পরে সুনির্দিষ্ট সম্পাদন চাইতে পারে।


আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!