ভোক্তা অধিকার কিভাবে সংরক্ষন করবেন।

ভোক্তা হিসেবে আমরা প্রায় সব সময়-ই পণ্য বা সেবা ক্রয় করে থাকি কিন্তু সব সময় আমাদের কষ্টের টাকা সঠিক ব্যবহার করা সত্ত্বেও এর সঠিক ফল আমরা পাইনা।

ধরুন আপনি একটি লোশন কিনলেন আপনার ত্বকের পরিচর্যা করার জন্য কিন্তু তা ব্যবহার করতেই বুঝতে পারলেন দোকানদার আপনাকে হুবহু এক দেখতে অন্য একটি পণ্য গছিয়ে দিয়েছে,কিমবা, মোবাইল ফোনে হঠাৎ করে আপনার টাকা সব কেটে নেয়া হচ্ছে, ফোন করে জানতে পারলেন আপনার অনুমতি ছাড়াই ফোন কোম্পানি আপনাকে একটি সার্ভিস দিচ্ছে এবং তার ফলেই আপনার সব টাকা গায়েব হচ্ছে।

এছাড়া ওজনে কম দেয়া, দাম বেশি রাখা, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য দেওয়া,  এমন হাজারো বিষয় আমাদের সামনে চলে আসছে প্রতিনিয়ত কিন্তু আমার ভদ্রতার খাতিরে হয়তো দু একটা কথা বলেই চলে আসছি, হয়তো চাইছিনা এই নিয়ে অযথা সময় ব্যয় করতে। কিন্তু আমাদের এই চুপ থাকার কারণে দিনে দিনে ভোক্তারা আরো বেশি প্রতারিত হচ্ছে আর পণ্য এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হাজার – কোটি টাকা অবৈধ ভাবে তাদের অর্থ ভাণ্ডারে যোগ করছে।

আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ নিয়ে, আমার জানি না কিভাবে কি করতে হয়, আর অভিযোগ করলেও বা আমাদের কি লাভ, আদৌ কাজ হবে কিনা সেই ভেবেই আমরা পিছুপা হই। তবে ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তুলনামূলক ভাবে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে। এবং বেশ সুনামের সাথে কাজ করছে, সুধু তাই নয় অভিযোগকারী ব্যক্তি তার অভিযোগ করার কারণে পুরষ্কিতও হচ্ছেন।

এবার চলুন দেখি কিভাবে আমারা আমাদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ হতে পারি আর নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।

 

কে অভিযোগকারী হতে পারেন?

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ২ (৩) অনুযায়ী, নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ এই আইনের

অধীন অভিযোগ দায়ের করতে পারবেনঃ

  • কোন ভোক্তা;
  • একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা;
  • কোন আইনের অধীন নিবন্ধিত কোন ভোক্তা সংস্থা;
  • জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা তার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা;
  • সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সরকারী কর্মকর্তা;
  • সংশ্লিষ্ট পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী।

 

অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।”

 

যেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবে

  • মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১ কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন-৮ম তলা), ঢাকা, ফোন: +৮৮০২ ৮১৮৯৪২৫
  • জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র,  টিসিবি ভবন- ৯ম তলা, ১ কারওয়ান বাজার ঢাকা, ফোন: ০১৭৭৭ ৭৫৩৬৬৮, ই-মেইল: [email protected]  
  • উপ পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি ভবন, বন্দরটিলা, চট্টগ্রাম, ফোন: ০৩১-৭৪১২১২
  • উপ পরিচালক, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, শ্রীরামপুর, রাজশাহী, ফোন: +৮৮০৭ ২১৭৭২৭৭৪
  • উপ পরিচালক, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি ভবন, শিববাড়ী মোড়, খুলনা, ফোন: ০৪১-৭২২৩১১
  • উপ পরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মহিলা ক্লাব ভবন, বরিশাল, ফোন: +৮৮০৪ ৩১৬২০৪২
  • উপ পরিচালক, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেট ফোন: ০৮২১-৮৪০৮৮৪
  • উপ পরিচালক, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, রংপুর, ফোন: ০৫২১-৫৫৬৯১
  • প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

 

যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে

  • দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
  • ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে; বা
  • অন্য কোন উপায়ে;
  • অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।

অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন।

অভিযোগ দায়েরের সময়সীমা

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬০ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আইনের অধীন অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অন্যথায় উক্ত অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।

 

জরিমানার অর্থের ২৫% প্রদান

দায়েরকৃত আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬(৪) অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীকে প্রদান করা হবে।

আরো বিস্তারিত জানতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ দেখুন
প্রয়োজনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সাহয্য নিন।

আরো পড়ুন: ভোক্তা অধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা আইন ও প্রয়োগ

 

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!