এজাহার কি বা FIR কি?
ধরুন আপনার সাথে অথবা আপনার আসে পাশে কোন বড় ধরনের অপরাধ হচ্ছে বা হয়েছে। আপনার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা। আর এটি খুব সহজেই আপনি করতে পারেন। হতে পারে ফোন কলের মাধ্যমে বা থানা বা থানার বাইরে কোন দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসারকে অবহিত করে, এর মাধ্যমে আপনি নাগরিক দায়িত্ব পালন করে দেশ ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হতে পারেন।
আইনি ভাষায় এই অবহিত করনের কিছু উপায় আছে। যদিও আপনি সুধুমাত্র ফোন কলের মাধ্যমেই অবহিত করতে পারেন কিন্তু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে কিছু আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ব্যবহার করা হয়। এই লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া একটি রিপোর্ট আকারে জমা থাকে যাকে “এজাহার” বা “First Information Report (FIR)” বলে।
এই এজাহার বা এফ আই আরকেই অনেকে থানায় মামলা করা বলে মনে করে থাকেন বা বলে থাকেন।
চলুন নিচে এই বিষয় গুলো বুঝে নেই যাতে কাজটি সঠিক ভাবে আমরা করতে পারি এবং প্রক্রিয়ায় কেউ ইচ্ছে বা অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে আমারা যাতে তা বুঝতে পারি। মনে রাখবেন ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াগত ভুলের জন্য অধিকাংশ অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়।
এ বিষয় আরো বিস্তারিত ইংরেজী আর্টিকেলটি পড়ুন এখানে: All about FIR
এজাহার বা FIR কি?
অপরাধীর শাস্তি দাবী করে বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে থানায় সরাসরি অপরাধের সংবাদ লিপিবদ্ধ করাকে বলে এজাহার৷ যা FIR নামেও পরিচিত। FIR হলো First Information Report বাংলায় প্রাথমিক তথ্য বিবরণী । এ বিবরণটা প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট কোন অপরাধ সংগঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি সাথে সাথে তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং তার স্বাক্ষর নিবেন৷ লিখিতভাবে প্রদত্ত সংবাদেও তথ্য প্রদানকারী স্বাক্ষর করবেন। এই তথ্য বিবরণী উক্ত অফিসার, সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। এটাই এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নামে পরিচিত।
যখন এজাহার করতে হবে।
(১) এজাহারে উল্লেখিত অপরাধটি হবে আমলযোগ্য ; [আপনি যদি মানে করেন অপরাধটি ছোট খাটো নয় তাহলেই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন কারণ অমলযোগ্য বিষয়টি সবাই সহজে নাও বুঝতে পারে।]
(২) সংবাদটি বিস্তারিত না হল ও তা গ্রহণযোগ্য হবে ;
(৩) সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে ; [বিস্তারিত নীচে দেখুন]
(৪) লিপিবদ্ধ সংবাদের উপর সংবাদদাতাকে স্বাক্ষর করতে হবে ;
(৫) নির্ধারিত ফরমে (বিপি-২৭) সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে ;
(৬) সংবাদ লিপিবদ্ধ করার পর তা সংবাদদাতাকে পাঠ করে শুনাতে হবে।
এজাহার যেভাবে দায়ের করবেন
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪ ধারা অনুসারে অমলযোগ্য অপরাধের বাদ পাওয়া গেলে তা নির্ধারিত ফরম অনুসারে রক্ষিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে৷ অমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ মৌখিকভাবে দেয়া হলে তা লিপিবদ্ধ করে সংবাদ দাতাকে পাঠ করে শুনাতে হবে এবং তাতে তার স্বাক্ষর নিতে হবে। এজাহার গ্রহণে করণীয় বিষয়াবলী পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ এর ২৪৩ প্রবিধান এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার, এজাহারের শর্তাবলী বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
- (১) অমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপি ২৭ ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন।
- (২) এজাহার হলো জিআর (জেনারেল রেজিস্টার) বা পুলিশী মামলার ভিত্তি। এখান থেকেই জিআর মামলার জন্ম হয় তাই অমলযোগ্য কোন অপরাধের সংবাদ পাবার সাথে সাথে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারার অধীনে তদন্ত আরম্ভ করতে হবে।
- (৩) অমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ শুনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশ অফিসার এফআইআর গ্রহণ হতে বিরত থাকতে পারবেন না (পিআরবি ২৪৩(চ) প্রবিধান)।
- (৪) ডাক্তারী সার্টিফিকেট না পাওয়ার কারণে এজাহার বিলম্বিত করা যাবে না।
- (৫)সংবাদদাতা সংবাদটি লিখিতভাবে দিতে না চাইলে বা তা লেখা হলে তাতে সে স্বাক্ষর দিতে না চাইলে সংবাদটি জিডিভূক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
- (৬) টেলিফোনে কোন অমলযোগ্য ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেলে সংবাদদাতাকে থানায় এসে এজাহার দায়েরের জন্য বলতে হবে, সংবাদদাতা না এলে সংবাদ গ্রহণকারী অফিসার নিজেই বিষয়টি এফআইআর করে ব্যবস্থা নিবেন।
- (৭) যার সম্পত্তিতে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা যার উপর আঘাত হয়েছে তিনি এজাহার দিবেন তবে অমলযোগ্য অপরাধের বিষয় যে কেউ এজাহার দিতে পারেন।
- (৮) অপরাধ সংঘটনের সংবাদটি কোন অমলযোগ্য ঘটনার না হলে সে সংবাদের ভিত্তিতে কোন এজাহার নয়, জিডি এন্ট্রি করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবাদদাতা অনেক কারণেই স্বাক্ষর দিতে নাও চাইতে পারে সে জন্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না।
- (৯) পুলিশ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কনস্টেবলও এজাহার গ্রহণ করতে পারবেন।
- (১০) ম্যাজিস্ট্রেট অমলযোগ্য কোন অপরাধ তদন্ত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেরিত লিখিত খবরই পুলিশ কর্মকর্তা এজাহারে গণ্য করে ব্যবস্থা নিবেন। (তথ্যসূত্র: পিআরবি ২৪৫ প্রবিধান এবং 47 DL R 94)
- (১১) আমল অযোগ্য ঘটনার তদন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া করতে পারবেন না।
- (১২) এজাহার আদালতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই কোর্ট অফিসার তা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পেশ করবেন।
- (১৩) এজাহারের কপি হবে ৫টি, এর মূল কপি কোর্টে প্রেরণ করতে হবে।
- (১৪) প্রথম কার্বন কপি যাবে পুলিশ সুপার এর নিকট।
- (১৫) দ্বিতীয় কার্বন কপি থাকবে থানায়।
- (১৬) সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি যাবে সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের নিকট।
- (১৭) সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি পাবে এজাহার দাতা।
এজাহারে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকবে
- থানার নাম
- সংবাদ দাতার নাম, পরিচয় ও ঠিকানা
- আসামীর নাম, পরিচয়, ঠিকানা [যতদূর জনা সম্ভব হয়]
- অপরাধ সংঘটনের সময়, তারিখ ও ধরণ
- অপরাধ সংঘটনের স্থান
- অপরাধের বর্ণনা
- সাক্ষী থাকলে তাদের নাম
- সংবাদ দাতার সাক্ষর বা টিপ সই। ইত্যাদি
এজাহারের আরো কিছু নিয়ম কানুন
- অসম্পূর্ণ বা অস্পষ্ট কোন সংবাদ এজাহার হিসেবে গণ্য হবে না। এজাহারের জন্য সুস্পষ্ট তথ্য থাকতে হবে। যেমন ধরুন শোনা কথায় বা গুজবে এজাহার হবে না। সরাসরি দেখতে বা জনতে হবে।
- কোন থানায় যদি কোন গোপন সংবাদও প্রদান করা হয় যা অমলযোগ্য এবং ভিত্তিহীন নয় তা এজাহার হিসেবে পুলিশ নিতে পারবে।
- টেলিফোনে প্রাপ্ত সংবাদও এজাহার হিসেবে নেওয়া যাবে।
- একবার এজাহার হলে সেটা বা সেটার তথ্য যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তবে আবার এজাহার নেয়া যাবে বা পুলিশ তদন্তের পর নিজে আবার এজাহার করতে পারবে।
- শুধুমাত্র প্রথম সংবাদ-ই এজাহার হবে তা নয়, প্রথম সংবাদে যদি ভুল -ত্রটি থাকে বা সঠিক না হয় তবে পরের সংবাদও এজাহার হতে পারে।
- এজাহার দ্বায়েরে বিলম্ব করা উচিৎ নয়, কোন কারণে বিলম্ব হলে তা উল্লেখ করতে হবে। তবে সুধু বিলম্বের কারণে কোন এজাহার বাতিল হবে না।
- জখমি সনদের জন্য এজাহার পরে করার প্রয়োজন নেই, পুলিশ তদন্তের সময় সেটা সংগ্রহ করে নেবে।
এজাহারের সাক্ষ্যগত মূল্য
এজাহার যেহেতু কোন অপরাধ সংঘটনের পর পরই দায়ের করা হয়, তাই এজাহার হলো ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি বাস্তব চিত্র। কিন্তু এজাহার প্রায়ই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লিখেন না অর্থাৎ এজাহার দাতা নিজে না লিখে অন্য কাউকে দিয়ে লেখান যিনি ঘটনা দেখেননি, তিনি এজাহার লিখতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এলোমেলো করে ফেলেন এজাহার একটি লিখিত দালিলিক সাক্ষ্য আর এ কারণেই এজাহার দাতা কিংবা এজাহার গ্রহীতা এ দু’জনের অন্তত একজনকে মামলার সাক্ষ্য পর্বে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হয়৷ অন্যথায় মামলা দুর্বল হয়ে যায়।সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারা অনুসারে এজাহারকে সাক্ষীর সাক্ষ্যর সত্যতা কিংবা অসংগতি প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়৷ তাই এজাহার হতে হবে পূর্ণাঙ্গ, একটি পূর্ণাঙ্গ এজাহারের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
একটি পূর্ণাঙ্গ এজাহারের বৈশিষ্ট্য :
(১) অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা থাকলে) সুস্পষ্ট হওয়া;
(২) অপরাধের বর্ণনা যৌক্তিকভাবে লিপিবদ্ধ করা;
(৩) অপরাধ সংঘটনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা;
(৪) অপরাধের ঘটনাস্থল (পিও) উল্লেখ করা;
(৫) অপরাধ সংঘটনের কোন পূর্ব সূত্র বা কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে ধরা;
(৬) সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা দেয়া;
(৭) অপরাধ পরবর্তী অবস্থা যেমন সাক্ষীদের আগমন, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা;
(৮) অপরাধীদের কেহ বাঁধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করা;
(৯) কোন বিষয় তাৎক্ষনিক ভাবে লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে সে বিষয়টি সংযোজন করা হবে এমন একটি কৈফিয়ত এজাহারে রাখা৷
(১০) এজাহারে কোন ঘষা-মাজা, কাটা-কাটি করা উচিত না৷
বাস্তবিক কিছু টিপস:
থানায় অভিযোগ বা এজাহার জানানতে চাইলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
- যথাসম্ভব দ্রুত থানায় ইনফর্ম করবেন; এটা ৯৯৯ এ ফোন দিয়েও করতে পারেন।
- থানায় যাওয়ার আগে বিষয়গুলো গুছিয়ে নেবেন, যত ডিটেইলস সম্ভব মনে করে নোট করে রাখবেন নয়তো কোন ছোটখাটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যেতে পারেন।
- সম্ভব হলে থানা পুলিশ বোঝে বা আগে থানা পুলিশের সাথে ডিল করেছে এমন একজনকে নিয়ে যেতে পারেন।
- একজন উকিলে মাধ্যমে এজাহারটি যথাযথ ভাবে লিখিয়ে নিতে পারলে বা নিজেরা লিখে একজন উকিল দিয়ে চেক করিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়।
- কোন পদক্ষেপ নিতে দেরি করবেন না আবার দ্রুত করতে গিয়ে কোন ভুল যাতে না হয় সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
- ভয় পাবেন না ও শান্ত থাকবেন।
এজাহারের নমুনা:
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
সাভার থানা, সাভার, ঢাকা৷
বিষয়: মামলার এজাহার দায়ের প্রসঙ্গে।বাদী:
আয়াছ আলী (৪৫), পিতা-মৃত
আশাক আলী, সাং-… উপজেলা-
সাভার, জেলা-ঢাকাবিবাদী :
(১) কালু মিয়া (৩৪),
পিতা-সাফাত মিয়া ;
(২) ফালু মিয়া (৩৮), পিতা-ঐ ;
(৩) বাবলু (২৭), পিতা-আক্কাছ মোল্লা ;সাক্ষী :
(১) সুরুজ মিয়া (৫৬), পিতা- আবু আব্বাস ;
(২) আলতাফ আলী (৫০), পিতা- সোয়া মিয়া ;
(৩) মঙ্গল বেপারী (৬০), পিতা- আপ্তা বেপারী ;
(৪) মুজাম্মেল আলী (৪০), পিতা-কোরবান আলী ;
(৫) মকদ্দছ (৪১), পিতা-আছদ্দর ;সর্ব সাং-… উপজেলা-সাভার, জেলা-ঢাকা।
ঘটনার তারিখ ও সময় : ০২-০১-২০০৫
রোজ শুক্রবার, সকাল অনুমান ১১.৩০ মিঃঘটনাস্থল : সাক্ষী মোজাম্মেল আলীর বসত বাড়ির সামনের রাস্তার উপর।
মহোদয়,
আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী আয়াছ আলী অদ্য ০২-০১-২০০৫ তারিখ অনুমান ১.৪৫ মিঃ এর সময় আপনার থানায় সাক্ষী আলতাফ আলী ও বশির আলীসহ হাজির হয়ে এ মর্মে লিখিত এজাহার দায়ের করছি যে, উপরোক্ত বিবাদীদের সঙ্গে আমার পরিবারের সদস্যদের জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত মনোমালিন্য চলছিল, সে আক্রোশে উপরোক্ত বিবাদীগণ উপরে বর্ণিত তারিখ ও সময়ে আমি বাড়ি হতে সজিনা বাজারের দিকে যাওয়ার পথে সাক্ষী মোজাম্মেল আলীর বাড়ীর সামনের রাস্তায় পৌছা মাত্র হঠাত্ গাছের আড়াল হতে দৌড়ে এসে আমার উপর বল্লম ও লাঠি দিয়ে আক্রমন করে৷ ১ নং বাদী তাঁর হাতে থাকা বল্লম দিয়ে আমার পেট লক্ষ্য করে ঘাই মারে আমি উক্ত ঘাই ডান হাত দিয়ে ফিরানোর চেষ্টা করি এতে আমার ডান হাতে মারাত্বক রক্তাক্ত কাটা জখম হয়।আমি চিত্কার দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ৩ নং আসামী আমাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট করতে থাকে। ২ নং আসামী আমার পকেটে থাকা ১০,২২০ টাকা নিয়ে যায়৷ ১ নং আসামী আমাকে লাথি মারতে মারতে পাশের খালের দিকে ফেলে দিতে থাকে এই সময় ৩ নং আসামী বলে শালার বেটাকে প্রাণে মেরে ফেল। এ সময় সাক্ষী মোজাম্মেল আলী বাড়ি হতে বের হয়ে আসে এবং ঘটনা দেখে চিত্কার দিয়ে বলে আরে কে কই আছস তাড়াতাড়ি আয় আয়াছরে মাইরা হালাইলো৷ মোজাম্মেলের চিত্কার শুনে আরো লোকজন ছুটে আসতে শুরু করলে আসামীরা লাঠি ও বল্লম নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে হেটে চলে যায়। আসামীরা চলে যাওয়ার পর আশ পাশের অনেক লোক এবং সাক্ষীগণ আসে যাদের অনেকেই সামীদের ভয়ে আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিতে সাহস করেনি বলে মামলায় তাঁদের সাক্ষী মানা হয়নি, তবে তাঁদেরকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরাও সাক্ষী দিবে৷ পরে ১ ও ২ নং সাক্ষী আমাকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন৷ডাক্তার প্রাথমিক চিকিত্সা করে এক্সরেসহ আরো উন্নত চিকিত্সা গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়ায় আমি ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার সময় এ এজাহার দায়ের করতে সাক্ষীদের সহায়তায় থানায় আসি৷সাক্ষীদের ঘটনা বিস্তারিত বলেছি যা তদন্তে প্রকাশ পাবে, আমার চিকিত্সার প্রাথমিক কাগজপত্র সংযুক্ত করে দিলাম৷ডাক্তারী সনদ পরে দাখিল করবো।অতএব উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রার্থনাসহ অত্র এজাহার দাখিল করলাম৷ আমি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় আমার কথা মতো আমার এলাকার জনাব বশির আলী এই এজাহার লিখে আমাকে পাঠ করে শুনালে আমি তা শুদ্ধ স্বীকারে নিজ নাম দস্তগত করলাম।
লেখক : বশির আলী পিতা-রকিব আলী
সাং………. বিনীত আয়াছ আলীতারিখ ২৯-১২-২০১২ইং
এজাহারটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন: এজাহার.pdf
(মূল লেখাটি সংগৃহিত এবং প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য নতুন করে সংযুক্ত )