আইনি অযােগ্যতা এবং সময় গণনা; ধারা ৬-১১ | তামাদি ০৩
অনেক সময় অনেক মানুষ বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে মামলা / মোকদ্দমা যথা সময়ে করতে পারে না তখন তাদের তামাদি আইনের বিশেষ কিছু নিয়মের সাহায্য নিয়ে মামলা করতে হয়, এ নিয়ে তামাদি আইনের ৬ থেকে ১১ ধারায় বিশেষ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে এর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হোল।
আইনি অযােগ্যতা থাকলে যেভাবে সময় গনানা করতে হবে (ধারা ০৬)
আমরা জানি নাবালক, উন্মাদ বা নির্বোধ মানুষ আইন যথাযথ ভাবে বুঝতে বা প্রয়ােগ করতে পারেন না, তাই সাধারণত তারা আইনের চোখে আইনি কার্যক্রম করতে অযােগ্য বলে বিবেচিত হয়।
- ধারা ০৬ এর প্রথম উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি নাবালক, উন্মাদ বা নির্বোধ থাকা কালীন সময়ে তার মামলা করারা ক্ষমতা বা ডিক্রি সম্পাদনের জন্য বা কোন আবেদনের জন্য সাধারণ ভাবে (আইনে) ক্ষমতা পায়, তবে সে সুস্থ হবার পরে (ঐ অযােগ্যতা শেষ হবার পরে) সে সাধারণ ভাবে মামলা করতে যে সময় পেত সেই পূর্ণ সময় পাবে। এখানে যাই বলা থাকুক তা ধারা ৮ ও ৯ য়ের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে)
উদাহরণ: ক যখন নাবালক ছিল তখন তার মামলা করার অধিকার জন্মাল, যার কিনা সময়সীমা ছিল ৩ বছর। ক ৪ বছর পর প্রাপ্ত বয়স্ক হল, সে প্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তাই ঐ মামলা করার জন্য ৩ বছর সময় পাবে।
- ২) যদি কোন ব্যক্তি তার মামলা করার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুটি অযােগ্যতার মধ্য দিয়ে যায়, বা একটি অযােগ্যতা সেরে ওঠার আগেই। আরেকটি অযােগ্যতার মধ্যে পরে, তবে সে দুটি অযােগ্যতার সেরে ওঠার পরে সেই মামলা/ আবেদন করতে পারবে এবং অযােগ্যতা না থাকলে সে যেই সময় পেত সেই সম পরিমাণ সময় পাবে।
উদাহরণ: ক’ য়ের নাবালক থাকা অবস্থাতেই মামলা করার অধিকার জন্মাল, কিন্তু ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই সে উন্মাদ হয়ে গেল, এখানে ক’র দুটি অযােগ্যতা। ধরি, ক অযােগ্য না হলে ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে পারতাে, এখানে ক সুস্থ হলে মামলা করার জন্য ঐ ৩ (তিন) বছর সময় পাবে।।
- ৩) যখন কোন ব্যক্তির অযােগ্যতা তার মৃত্যু পর্যন্ত বর্তমান থাকে তখন তার আইনত প্রতিনিধি সাধারণ ভাবে তিনি যতটা সময় পেতেন সে সময় মামলা । আবেদন করার জন্য পাবেন।
উদাহরণ: ক ‘য়ের মামলা করার অধিকার জন্মাল যখন সে উন্মাদ ছিল, এবং উন্মাদ অবস্থাতেই মারা গেল, এখনে ক কয়ের আইনি প্রতিনিধি। উত্তরাধিকারী ক সাধারণ ভাবে যেই সময় পেতেন তার সমান সময় পাবে।
- ৪) যদি উপধার ৩ এ বর্ণিত প্রতিনিধিও কোন কারণে আইনগত ভাবে অযােগ্য হয়ে যান তবে ১ ও ২নং উপধার আবার তার উপর প্রযােজ্য হবে।
অনেকের মধ্যে একজনের অযোগ্যতা (ধারা ০৭)
যখন অনেক বাদীর মধ্যে একজনের আইনি অযােগ্যতা থাকে;
যখন কোন একটি বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির একসাথে মামলা করার বা ডিক্রি সম্পাদনের আবেদন করার অধিকার থাকে এবং তাদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তি আইনি অযােগ্যতায় ভােগে এবং এক বা একাধিক ব্যক্তি যােগ্য হন, এবং সেখানে যদি কোন একজন ব্যক্তি অন্যদের সম্মতি ছাড়াই দায়মুক্তি দেওয়ার যােগ্য হন তবে তাদের সাধারণ সময় চলমান হবে। এখানে অতিরিক্ত কোন সময় পাবে না)
ক) চ একটি ফার্মের কাছে দায়গ্রস্ত যার মালিক ট ঠ ড, এখানে ট ও ঠ আইনগত ভাবে মামলা পরিচালনায় অযােগ্য কিন্তু ড যােগ্য এখানে ড চ’কে বাকি দুই পার্টনারের সম্মতি ছাড়াই দায়মুক্তি দিতে পারবে তাই তারা কোন অতিরিক্ত সময় পাবে না।
কিন্তু, যখন কোন একটি বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির এক সাথে মামলা করার বা ডিক্রি সম্পাদনের আবেদন করার অধিকার থাকে এবং তাদের মধ্যে সবাই আইনি অযােগ্যতায় ভােগে এ এবং সেখানে তাদের প্রত্যেকেই অযােগ্য হওয়ার কারণে দায় মুক্তি দিতে পারে না, এখানে সময় তাদের জন্য স্থগিত থাকবে, যতদিন না তাদের কেউ যােগ্য হন। (এখানে অতিরিক্ত সময় পাবে)
অগ্রক্রয়ের ব্যাপারে বিশেষ ব্যতিক্রম (ধারা ৮)
এই ধারাটি ধারা ৬ এবং ৭ এর একটি বর্ধিতাংশ রূপে কাজ করে। এখানে বলা আছে ধারা ৬ এবং ৭ এ যাই বলা থাকুক না কেন তা অগ্রক্রয়ের ব্যাপারে কাজ করবে না এবং আইনি অযােগ্যতা শেষ হবার পর বা অযােগ্য ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার প্রতিনিধি সর্বমােট ৩ বছরের বেশি সময় পাবে না।
আইনি অযােগ্যতা ও বিশেষ সময় গননা
চলুন কয়েকটি ভাগে আমরা বিষয়টি বুঝি।
১) যদি তামাদি আইন (অনুচ্ছেদ) অনুসারে কেউ ৩ পর্যন্ত বা ৩ বছরের কম সময় পান এবং তার আইনি অযোগ্যতা শেষ হতে হতে ঐ সময়ের কিছুই বাকি না থাকে তবে তিনি তামাদি আইনের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ অনুসারে আসল যেই সময়টি পেতেনে তাই পাবেন।
-
- ধরি, আসল সময় পেতেন ৬ মাস এখানে তার অযোগ্যতা শেষ হবার পর দেখলেন কোন সময় বাকি নেই তিনি নতুন করে ৬ মাস সময় পাবেন।
- এমন ভাবে কেউ আসল সময় ৩ বছর পেলে তিনি ৩ বছর পর্যন্ত নতুন সময় পাবেন।
২) যদি তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ অনুসারে কেউ ৩ পর্যন্ত সময় পান এবং তার আইনি অযোগ্যতা শেষ হতে হতে ঐ সময়ের অংশ বিশেষ বাকি থাকে [যা ৩ বছরের কম] তবে তিনি তামাদি আইনের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ অনুসারে আসল যেই সময়টি পেতেনে তাই পাবেন।
-
- ধরি, আসল সময় পেতেন ৩ বছর এখানে তার অযোগ্যতা শেষ হবার পর তিনি দেখলেন তার হাতে আছে আর ১ বছর।
- এখানে এই বিশেষ নিয়মে তিনি অতিরিক্ত ২ বছর পাবেন। তখন তিনি সর্বমোট তিন বছর সময় পাচ্ছেন।
ব্যাখ্যা (ক) দেখুন।
৩) যদি তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ অনুসারে কেউ ৩ বছরেরর বেশি সময় পান এবং তার আইনি অযোগ্যতা শেষ হওয়ার পর ঐ সময়ের কিছুই বাকি না থাকে তবে তিনি তামাদি সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত সময় পাবেন।
-
- ধরি, আসল সময় পেতেন ৬ বছর এখানে তার অযোগ্যতা শেষ হবার পর দেখলেন কোন সময় বাকি নেই তিনি এই ধারা অনুসারে সর্বোচ্চ ৩ বছর নতুন সময় পাবেন।
৪) যদি তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ অনুসারে কেউ ৩ বছরেরর বেশি সময় পান এবং তার আইনি অযোগ্যতা শেষ হওয়ার পর ঐ সময়ের কিছু অংশ বাকি থাকে যা ৩ বছরের কম তখন তিনি সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত সময় পাবেন।
-
- ধরি, আসল সময় পেতেন ৬ বছর এখানে তার অযোগ্যতা শেষ হবার পর তিনি দেখলেন তার হাতে আছে আর ১ বছর।
- এখানে এই বিশেষ নিয়মে তিনি অতিরিক্ত ২ বছর পাবেন। তখন তিনি সর্বমোট তিন বছর সময় পাচ্ছেন।
৫) যদি তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ অনুসারে কেউ ৩ বছরেরর বেশি সময় পান এবং তার আইনি অযোগ্যতা শেষ হওয়ার পর ঐ সময়ের কিছু অংশ বাকি থাকে যা ৩ বছরের চেয়ে বেশি তখন তিনি স্বাভাবিক ভাবে যেই সময়টা বাকি আছে সেটাই পাবেন।
-
- ধরি, আসল সময় পেতেন ১২ বছর এখানে তার অযোগ্যতা শেষ হবার পর তিনি দেখলেন তার হাতে আছে আর ৬ বছর।
- এখানে এই বিশেষ নিয়মে তিনি অতিরিক্ত কোন সময় পাবেন না। তাকে বাকি ৬ বছরের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্যাখ্যা (খ) দেখুন
ব্যাখ্যা
ক) ক যখন নাবালক তখন তার মামলা করার অধিকার জন্মায়। তিনি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হন তখন আর মাত্র এক বছর মেয়াদ থাকে। কিন্তু ধারা ৬ এবং ৮ মতে তাকে আরাে দুই বছর সহ মােট ৩ বছরের সময় পাবে।
খ) ক যখন উন্মাদ ছিল তখন সে বংশগত (ধরি, তার বাবার মৃত্যুর পর) ভাবে। একটি দায়িত্ব (hereditary office) প্রাপ্ত হন, ৬ বছর পর তিনি সুস্থ হন, সে এই ধারা মতে, অতিরিক্ত কোন সময় মামলা করার জন্য পাবে না।।
এখানে বংশগত দায়িত্বর জন্য স্বাভাবিক ভাবেই ১২ বছর সময় পান এর মধ্যে তার আইনগত অযোগ্যতার জন্য ৬ বছর সে হারায় কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি স্বাভাবিক ভাবেই আরও ৬ বছর পান। তাই তার এই বিশেষ বিধানের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
গ) ক একজন বাড়ির মালিক, যার কিনা অসুস্থ থাকা অবস্থায় তার ভাড়াটিয়ার উপর মামলা করার অধিকার জন্মায় এবং অধিকার জন্মানাের ৩ বছর পর্যন্ত তিনি মারা যান এবং তখন পর্যন্ত তিনি অসুস্থ ছিলেন, সাধারণ ভাবে ক’য়ের প্রতিনিধির ৯ বছর পর্যন্ত মামলা করার অধিকার আছে, যা এখানে প্রযােজ্য হবে না। তবে যদি প্রতিনিধি নিজেই অসুস্থ/ অযােগ্য হন তবে হবে।
সময় গননা একবার শুরু হলে চলতে থাকবে (ধারা ৯)
সময় যদি একবার চলতে শুরু করে তবে পরবর্তী কোন অযোগ্যতা তা আর থামাতে পারবে না। অর্থাৎ যদি দেখা যায় Cause of Action শুরু হয়েছে তখন সেই দিন থেকেই সময় গণনা শুরু হয়। এখন উপরের ধারা গুলোতে বলা হয়েছে সময় আইনত অযোগ্যতার কারণে সময় গণনা স্থগিত থাকবে কিন্তু এই ধারায় এটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে যদি সময় গণনা একবার শুরু হয় তবে এই স্থগিত থাকার আইন / ধারা আর কাজ করবে না। তার মানে সময় গণনা একবার শুরু হলে তা চলতে থাকবে এবং তার ফলে আইনত অযোগ্যতার কারণে ধারা ৮ এর অধীনে কোন সুযোগ পাওয়া যাবে না।
এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয় যে, আইনত অযোগ্যতাটি অবশ্যই সময় গণনা শুরু হওয়ার আগে ঘটতে হবে।
ব্যতিক্রম
তবে এই ৯ ধারার আবার একটা ব্যতিক্রম আছে। এই ব্যতিক্রমটা আমরা বইয়ের ভাষায় না গিয়ে সহজে শিখব।
৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি পাওনাদার কোন কারণে দেনাদারকে তারা সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক (Letters of administration) নিয়োগ করে তবে যতদিন ঐ দেনাদার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকবেন ততদিন সময় গণনা বন্ধ থাকবে।
একটা উদাহরণ দেই।
ধরুন, “ক” একটি কোম্পানি [লিগ্যাল পার্সন] “খ” তার ম্যানেজার, ম্যানেজার থাকা অবস্থা “খ” কোম্পানি “ক” এর কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ধার নিলো, যা ৬ মাস পর ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও ফেরত দিল না। এখন ধরি “ক” কোম্পানির এই টাকা উদ্ধারের তামাদি মেয়াদ ৩ বছর।
“ক” কোম্পানির তৎকালীন সিইও দুই বছর কোন ব্যবস্থা নিলেন না এবং তারপর “খ” সিইও হিসেবে স্থান পেলেন। এখন “খ” নিজেই কোম্পানির সিইও তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে আইনগত ভাবে দায়বদ্ধ কিন্তু তিনি তা করলেন না। এবং ৫ বছর পর্যন্ত সে সিইও হিসেবে দায়িত্বে থাকার পর অবসরে গেলেন।
আইন বলছে, “খ” নিজেই যেহেতু “ক” এর তত্ত্বাবধায়ক হয়েছে তাই তিনি তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার সাথে সাথেই ঐ ধারের বিষয়ে যেই তামাদি তার গণনা বন্ধ হয়ে যাবে। এবং পরে উনি তত্ত্বাবধায়কের পদ ত্যাগ করলে আবার গণনা শুরু হবে।
“খ” এর পর “গ” কোম্পানির সিইও হলেন। এখন গ বাকি ১ বছরের মধ্যে মামলা করতে পারবেন।
নোট: কোন ব্যক্তি মারা গেলেও আদালত তার সম্পত্তি দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করতে পারে।
ট্রাষ্টির বিরুদ্ধে মামলা (ধারা ১০)
ট্রাষ্টি এবং তাদের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে যেকোন সময় মামলা করা যায়; যার উপর ট্রাষ্ট সম্পত্তি পরিচালনার ভার অর্পণ করা হয় এবং সে যদি তার অপব্যবহার করে বা আত্বসাত করে, তার বিরুদ্ধে যেকোন সময় মামলা করা যায়। কোন তামাদি সময় থাকবে না।
বৈদেশিক চুক্তির ক্ষেত্রেও যেখানে বাংলাদেশে মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক সেখানে এই তামাদি আইন অনুসরণ করতে হবে। (ধারা ১১)
- তামদি আইনের সকল বিষয় দেখুন
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।