দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৩২, ৩৩,৩৪ ও ৩৫ – দে. কা ১৭

দেওয়ানী কার্যবিধিতে কিছু গুরুত্বপূর্ন আদেশ হল, আদেশ ৩৩,৩৪ ও ৩৫ যেখানে বিধির নানান প্রয়োজনীয় দিক সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে এর মধ্যের কিছু সুনির্দিষ্ট ও সচরাচর প্রয়োজনীয় বিষয় নিচে তুলে ধরা হোল।

আদেশ, ৩২ । নাবালক ও অপ্রকতস্থ [ Minor and unsound mind]

আমরা জানি নাবালক ও অপ্রকতস্থ মানুষ নিজের দেখভাল করতে পারে না, চুক্তি করতে পারে না কিন্তু তবুও তাদের সহায় সম্পত্তি থাকতে পারে এবং তাদের প্রয়োজনে চুক্তি ও কাজ করার প্রয়োজন পড়তে পারে, আইনে তাই তাদের হয়ে অন্য কেউ তাদের এসব দায়িত্ব নিতে পারে। আর এ বিষয়ে বলা আছে দেওয়ানী কার্যবিধির  ৩২ আদেশে।

বিধি, ১; নাবালককে অভিভাবকের মাধ্যমে মামলা করতে হবে।

বিধি, ২; অভিভাবক ছাড়া মামলা করলে বিবাদী উক্ত আরজি নথি থেকে বাদ বা অপসারনের জন্য  এবং যে উকিল বা ব্যক্তি মামলাটি করেছে তার নিকট খরচ আদায়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

অভিভাবক বা Next friend যারা হতে পারবে;

বিধি, ৪; 

  1. যার সাথে পরস্পর বিরোধী স্বার্থ নেই
  2. উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিযুক্ত হলে
  3. যাকে করা হবে তার সম্মতি নিয়ে করতে হবে
  4. অভিভাবক না পাওয়া গেলে আদালত তার কর্মচারীকেঅভিভাবক নিয়োগ করতে পারেন।

অভিভাবক অপসরণ;

বিধি, ৯; 

  • অযোগ্য, ব্যর্থ, দেশের বাইরে থাকেন এমন হলে অপসরণ করবেন
  • অভিভাবকের মৃত্যু অপসারনে ফলে মামলা স্থগিত থাকবে।

সাবালকত্ব অর্জন করলে;

বিধি, ১২; 

  • অভিভাবক বাদ দিয়ে নিজে মামলা চালাতে পারেন।
  • মামলা প্ররিত্যাগের জন্য আবেদন করতে পারেন।
    • খরচ প্রদান করতে হবে, না করলে আবেদনটি বাতিল হবে।

দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ

আদেশ, ৩৩ । নি:স্ব ব্যক্তির মামলা [ Suit by Paupers]

নি:স্ব ব্যক্তি; যার কিনা মামলা চালানো ক্ষমতা নেই তিনি প্রয়োজনে আইনের বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন, আর দেওয়ানী কার্যবিধিতে এ সম্পর্কে বলা আছে  আদেশ ৩৩ এ।

কে নি:স্ব ব্যক্তি ?

বিধি, ১; 

  • কোন সম্পদ নেই
  • কোর্ট ফি দেওয়া ক্ষমতা নেই
  • ৫০০০ টাকার কম আছে এমন

বিধি, ৫; সঠিক ভাবে আবেদন না হলে  বা মিথ্যে হলে বা প্রতারনমূলক হলে বাতিল

বিধি, ৮; আবেদনটি গ্রহণ করা হলে তা প্লেইন্ট হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক প্রোক্রিয়ায় মামলা চলবে

কখণ নি:স্বতার অবসান হবে?

বিধি, ৯; 

  • সম্পদ হলে
  • চুক্তি বা স্যটেল করলে
  • অসঙ্গত বা বিরক্তিকর আচরণ করলে

আদেশ, ৩8 । অসাধারণ / বিশেষ প্রতিকার [Extraordinary relief] 

Arrest Before Judgment:

Step 1: ডিক্রি প্রাপক এফিডেভিট বা অন্য কোন মাধ্যমে যদি আদালতেকে সন্তুষ্ট করতে পারে যে দায়ীক বিচারকে নষ্ট করতে; এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে বা যেতে চাচ্ছে বা তার সম্পত্তি আদালতের জুরিসডিকসনের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছে। (বিধি ১)

  • ওয়ারেন্ট দিয়ে গ্রেফতার করে অপর পক্ষকে আদালতের সামনে নিয়ে আসবে।

তারপর আদালত অপরপক্ষকে প্রশ্ন করবে “কেন আপনি/রা জামানত প্রদান করবেন না?” উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে আদালত তাকে জামানত প্রদান করতে বলতে পারে বা এরেষ্ট ও করতে বলতে পারে। (বিধি ২)

Step 3: বিধি ১। সমন এভয়েট করতে চাইলে এরেষ্ট।

  • ইনজাংশনের  আদেশ না মানলেও এরেষ্ট করতে পারে।

 

Attachment before judgment

বিধি ৫: যদি বিবাদ এটা বুঝতে পারে রায় তার বিপক্ষে যাচ্ছে এবং তাই বুঝে সে চালাকি করে ডিক্রি জারিতে বাধা বা দেরী করার জন্য যদি সে;

  1. সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করে বা
  2. আদালতের সিমানার বাইরে অপসারনের চেষ্টা করে 

তবে, আদালত এট্টাচ করার আদেশ দিতে পারেন।

এর বিরুদ্ধে আপিল করা যায় [ আদেশ ৪৩]

  • বিধি ১১: একবার ক্রোক করলে জারির সময় আর ক্রোক করতে হয় না
  • বিধি ১২: কৃষি দ্রব্য রায়ের পূর্বে ক্রোক করা যায় না।
  • বিধি ১৩: Small causes court স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করতে পারে না

আদেশ, ৩৫ । ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা [ Inter-pleader suit]

ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা কখন হবে?

যখন একাধিক ব্যক্তি কোন একটি বিষয় নিয়ে পরস্পর বিরোধী দাবি করে এবং সেই বিষয় / বিষয় বস্তুটি অন্য একজন ব্যক্তির নিকট তার কোন স্বার্থ ছাড়াই থাকে, যে কিনা সঠিক প্রাপকের কাছে বিষয়টি পৌছে দিতে চায় এবং একটি মোকদ্দমার মাধ্যমে বিষয় বস্তুটি প্রকৃত দাবিদার নির্ণয় পূর্বক বস্তুটি বুঝিয়ে দিতে আদালতের দ্বারস্থ হয় এই মোকদ্দমাকে বলে ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা। [ধারা ৮৮, দেওয়ান কার্যবিধি]

চলুন একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝি:

আক্কাস একটি বাক্স তার বাড়ির সামনে পথে খুজে পেল; যার দাবি রহিম ও করিম দুই ব্যক্তি করছে। এখন আক্কাস জানে না বস্তুটির মালিক কে, তাই সে আদালতের স্বরনাপন্ন হল এবং একটি পক্ষ হয়ে ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা করলে যাতে রহিম ও করিম দু জনকে পক্ষ করলো। আক্কাসের কাজ এখানেই শেষ, আদালত মালিকানা নির্নয় করে মালিককে বস্তুটি বুঝিয়ে দেবে।

ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমার ব্যাপারে দেওয়ান কার্যবিধির আদেশ ৩৫ এ আরো বিস্তারিত বলা আছে।

আদেশ, ৩৫ 

Rule 1: ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমার আর্জি [Plaints of inter-pleader suit]

সাধারণ প্লেইন্টের সাথে থাকবে। 

  •  মামলার খারচ ছাড়া আরে কোন বিবাদ নেই । 
  • বাদীর কোন দাবি থাকবে না ।
  • একাধিক বিবাদী থাকবে।

 

আমাদের আপডেটেড নোট, গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এবং আইন বিষয়ক বিভিন্ন  ট্রেনিং, কোচিং, কোর্স কিনতে আমাদের  আইন পাঠশালা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ২০২৩ সালের বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী হলে দ্রুত আইন পাঠশালা ফেসবুক গ্রুপ এ সংযুক্ত হোন।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!