ডিক্রি জারির প্রক্রিয়া – আদেশ ২১ – দে. কা. ১৫
আমরা জানি যে দেওয়ানী মোকদ্দমায় যদি বিবাদী আদেশ না মানেন তবে তা মানানোর জন্য আদালতে ডিক্রি জারির জন্য মোকদ্দমা করতে হয়। আর এই জারির মামলা করলে আদালত ৫টি উপায়ে এই ডিক্রি জারি করতে পারে।
এই ৫টি উপায় হচ্ছে;
- ১। ডিক্রি ভুক্ত সম্পত্তি অর্পনের মাধ্যমে
- ২। গ্রেফতার ও আটকের মাধ্যমে
- ৩। ক্রোক ও বিক্রির মাধ্যমে
- ৪। রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে
- ৫। প্রয়োজন মোতাবেক অন্য কোন উপায়ে
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮(ধারা ৫১)
আর এই উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ২১ এ, এই আদেশে মোট ১০৩ টি বিধান আছে, নিচে আদেশ ২১ এর কিছু গুরুত্বপূর্ন বিধি আলোচনা করা হোল।
ডিক্রি জারির খুটিনাটি আগে একটু দেখে নিতে পারেন এখান থেকে : ডিক্রি জারির মোকদ্দমা, হস্তান্তর ও সময়
আদেশ, ২১। ডিক্রি ও আদেশ জারি
অর্থ পরিশোধের ডিক্রি
কোন আদালত যদি কোন পক্ষকে অর্থ পরিশোধ করতে বলে তবে তা নিন্মক্ত ভাবে পরিশোধ করা যাবে।
বিধি ১: অর্থ পরিশোধ কিভাবে করবে
- দায়িক অর্থ আদালতে জমা দিতে পারবে। আদালতে জমা দিলে: আদালত -> ডিক্রিদার [পাবে]
- দায়িক ডিক্রিদারকে সরাসরিও দিতে পারে। সরাসরি দিলে: ডিক্রিদার আদালতকে বিষয়টি জানাবে।
- আদালত অন্য কোন পদ্ধতিও বলে দিতে পারে। যেমন: ব্যাংক ট্রান্সফার ইত্যাদি।
গ্রেফতার ও আটকের মাধ্যমে ডিক্রি সম্পাদন
(ধারা, ৫৫,৫৬,৫৯)
# ৫০ টাকার জন্য সর্বোচ্চ ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়ানী আদালতে আটক রাখতে পারবে।
# ৫০ টাকার বেশি হলে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত দেওয়ানী আদালতে আটক রাখতে পারবে।
দেওয়ারনী মোকদ্দমায় গ্রেফতার:
দেওয়ারনী মোকদ্দমায় গ্রেফতারের কিছু বিষয়:
- দিনের বেলা গ্রেফতার করতে হবে।
- অর্থের মোকদ্দমায় মহিলাদের গ্রেফতার করা যাবে না। [ধারা ৫৬]
- ডিক্রিদারকে (Decree Holder) দেওয়ানি জেলের সকল খরচ বহন করতে হবে, মানে দায়ীক যে জেলে থাকবে তার ফলে সরকারের যে খরচ হবে তা ডিক্রিদারকে প্রদান করতে হবে। না করলে আদালত তাকে ছেড়ে দিতে পারে।
- গ্রেফতার হবার পর ডিক্রির টাকা এবং জেলের টাকা পরিশোধ করার পর সে মুক্তি পাবে।
- আদালত দেউলিয়া ঘোসনা করলে সে মুক্তি পাবে। (ধারা ৫৫(৩) ও ৩৮)
- ডিক্রিদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মুক্তি দিতে পারে।
মনে রাখতে হবে:
অর্থ মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা যায় না তবে, যদি এমন হয় যে;
- টাকা আছে কিন্তু দেয় না।
- আত্বগোপনে চলে যাওয়া বা আদালতের এখতিয়ারের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সম্পত্তি অসদুপায়ে সরানোর চেষ্টা করলে।
- টাকা পরিশোধ না করেলে দায়ীককে গ্রেফতার করে সম্পত্তি ক্রোক বা বিক্রয়ের আদেশ দিতে পারে। [আদেশ, ২১ বিধি ৩০]*
ডিক্রি জারিতে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে, ৩০ দিন পর্যন্ত দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখতে পারে। [ধারা, ৭৪]*
বিকল্প উপায় – অর্থ আদায়
আসল জারির বিকল্প উপায় – অর্থ আদায় । আদেশ ২১, বিধি ৩০
কোন জারি ডিক্রির বিকল্প হিসেব অর্থ নেওয়ার ডিক্রি থাকলে এবং দায়ীক যদি সেই টাকা পরিশোধ না করে তবে দায়ীককে গ্রেফতার করে সম্পত্তি ক্রোক বা বিক্রয়ের আদেশ দিতে পারে।
![ডিক্রি জারির প্রক্রিয়া আদেশ- ২১](https://i0.wp.com/bangla.lawhelpbd.com/wp-content/uploads/2019/12/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A7%A8%E0%A7%A7.jpg?resize=560%2C315&quality=100&ssl=1)
ডিক্রি জারির প্রক্রিয়া, আদেশ- ২১
অস্থাবর সম্পত্তির পূনরুদ্ধারের মামলায় সম্পাদন
[বিধি, ৩১] । সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১১ এবং ১২ ধারায়
- দায়ীককে ৬ মাস সিভিল জেলে আটকে রাখতে পারবে, এর মধ্যে কাজ না হলে তার সম্পত্তি ক্রোক এবং নিলাম করে ডিক্রিদারকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার বা নিশেধজ্ঞার ডিক্রি
আদেশ ২১, বিধি ৩২। সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন, দাম্পত্য অধীকার পুনরুদ্ধার বা নিশেধজ্ঞার ডিক্রি
সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের এবং নিশেধজ্ঞার ডিক্রি ডিক্রি জারি করতে পারে:
- ১। দেওয়ানী কারাগারে আটক
- ২। সম্পত্তি ক্রোক করে
তবে, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায়: শুধু ক্রোকের মাধ্যমে।
ক্রোক ও বিক্রি
[ক্রোক ও বিক্রির মাধ্যমে সম্পাদন। আদেশ ২১, বিধি ৬০,৬১,৬৪-৮১]
কি কি ক্রোক করা যাবে?
জমি-জমা, ঘর-বাড়ী, টাকা পয়সা, কোম্পানির শেয়ার, স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পত্তি।
কি কি ক্রোক করা যাবে না?
- তার ও তার পরিবারের মানুষের পোষাক
- রান্নার বাসনপত্র
- ব্যক্তিগত[ব্যবহার্য] গহনা
- কারিগরি বা কৃষি যন্ত্রপাতি [যেগুলোর উপর তার জীবিকা নির্ভর করে]
- বৃত্তি / পেনশন/ মাসিক ভাতা ইত্যাদি।
#বিক্রি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য আছে বিধি ৬৪-৭৪ এ।
অস্থায়ী সম্পত্তির বিক্রি
অস্থায়ী সম্পত্তির বিক্রি । বিধি ৭৪-৭৮]
কখন?
- আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে হলে এ ধরনের বিক্রি করতে পারবেন।
- যদি কৃষি পন্য হয় তবে তা তার জমির নিকট বিক্রি করতে হবে [বিধি ৭৪]
- কৃষি পন্য কাটা না হলে জমিতে বিক্রি করতে হবে [বিধি ৭৫]
- নেগশিয়েবল ইনুষ্ট্রুমেন্ট, শেয়ার ইত্যাদি ব্রেকারের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে [বিধি ৭৬] বা প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। [বিধি ৭৬]
- অন্যান্য অস্থায়ী সম্পত্তি প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। [বিধি ৭৬]
- প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করলে তৎখনাত টাকা পরিশোধ করতে হবে। [৭৭]
- নিলামে কোন গাফিলতি হলে তার জন্য নিলাম বাতিল হবে না তবে, কোন ব্যক্তি এই নিলামের কারনে সংক্ষুব্ধ হলে তিন কারণ দেখিয়ে ক্ষতিপূরনের মামলা করতে পারবেন। [৭৮]
অস্থায়ী সম্পত্তির বিক্রি
অস্থায়ী সম্পত্তির বিক্রি । বিধি ৮২-৮৫
ক্ষুদ্র বিষয়ের আদালত ছাড়া যে কোন আদালতের মাধ্যম এই বিক্রি হতে পারে। [বিধি ৮২]
নিলাম বিক্রি কিভাবে হবে?
নিলামের সময় বিড কারি ২৫% টাকা পরিশোধ করে তার অবস্থানটি নিশ্চিত করবেন [বিধি ৮৩] এবং বাকি ৭৫% টাকা ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে পরিশোধ করে সম্পত্তিটি বুঝে নিবেন। কিন্তু ঐ ৭৫% টাকা যথাসময়ে প্রদান করতে ব্যর্থ হলে নতুন করে নিলাম ডাকা হবে। [বিধি ৮৫]
নিলামে বিক্রি বন্ধ / রদ করতে চাইলে
[To set aside the sale] Order 21, Rule 89-92
বিধি, ৮৯; টাকা জমা দিয়ে নিলাম বিক্রি রদের আবেদন।
কে আবেদন করতে পারবেন?
ঐ সম্পত্তির উপর যে ব্যাক্তির নিলামের সময় বা বিক্রির সময় বা জারির সময় যদি কোন ইন্টারেষ্ট / স্বার্থ থাকে সে আবেদন করতে পারবে। তবে, ডিক্রিদার নিলাম ক্রয় করতে পারবেন না যদিনা আদালত অনুমতি দেয়।
কিভাবে করবেন [শর্ত]:
- ৫% টাকা আগে জমা দিতে হবে।
- ডিক্রিদারকে তার জারির টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে।
- ৬০ দিনের মধ্যে এই আবেদন করতে হবে।
- ৬০ দিনের ব্যতিক্রম: বিধি ৯০; যেখানে:
- ফ্রড বা ইরেগুলারিটি থাকবে
বি. দ্র: তামাদির ৫ ধারা বা সিপিসির ১৪৮ ধারা দিয়েও সময় বাড়ানো যাবে না।
# এই সেট এসাইড করার আদেশ হলে বা না হলে বিধি ৯২ এর দ্বারা আপিল করা যায়।
- ৩০ দিনের মধ্যে
- সংক্ষুব্ধ পক্ষ।
[তাই এখানে বলা যায় যে সবোচ্চ ৬০+৩০=৯০ দিনের মধ্যে বিষয়টি ফাইনাল হবে]
বিধি, ৯০; অনিয়ম বা প্রতারনার কারনে নিলাম বিক্রি রদের আবেদন।
গরুত্বপূর্ন অনিয়ম বা প্রতারণা হলে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিলাম বিক্রি রদের আবেদন করতে পারে।
বিধি, ৯১; ক্রেতার নিলাম রদের আবেদন
যেখানে ক্রেতা এটা বুঝতে পারে যে দায়িকের আসলে বিক্রয় যোগ্যতা ছিল না । [Judgment debtor has no sale able interest in the property sold]
বিধি, ৯২; ৮৯, ৯০,৯১ এ নিলাম বিক্রয় রদের আবেদনের ফলাফল
আবেদনটি –
- ১। গ্রহণ করা না হলে; আদালত নিলাম বিক্রয় বহাল করে একটি আদশে দেবে এবং বিক্রিটি চূড়ান্ত হবে।
- ২। গ্রহণ করা হলে; যদি নিলাম বিক্রির ৩০ দিনেরে মধ্যে টাকা জমা দেওয়া হয় তবে আদালত নিলাম রদ করে একটি আদেশ দেবেন।
সম্পাদন বা জারি স্থগিত রাখা
সম্পাদন স্থগিত রাখা । আদেশ ২১, বিধি ২৯
যদি এমন হয় যে পক্ষগনের নামে পাল্টাপাল্টি দেওয়ানী মামলা আছে যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি তবে আদালত ঐ সব মামলার ফলাফল আসা পর্যন্ত ডিক্রি সম্পাদন স্থগিত রাখতে পারে।
কখন কিভাবে কোন আদালত স্থগিত রাখতে পারে?
- একাধিক জেলায় সম্পত্তি থাকলে — যেই আদালত ডিক্রি প্রদান করে সে এবসুলেট স্টে করতে পারে।
- যেখানে স্থানান্তর হয় সেই আদালত কিছু ক্ষেতে স্থাগিত রাখতে পারে যখন মূল আদালতে বা আপিল আদালতে স্টের জন্য আবেদন করে।
- দেওয়ানী কার্যবিধির সকল বিষয় দেখুণ।
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।
আমাদের আপডেটেড নোট, গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এবং আইন বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেনিং, কোচিং, কোর্স কিনতে আমাদের আইন পাঠশালা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ২০২৩ সালের বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী হলে দ্রুত আইন পাঠশালা ফেসবুক গ্রুপ এ সংযুক্ত হোন।