রেফারেন্স, রিভিউ এবং রিভিশন – দে. কা. ১৯
বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ভুল-ভ্রান্তি দেখা দেয়, কখনো বা নতুন কোন কিছু সামনে চলে আছে বা দেখা যায় যে হয়তো কোন যায়গায় ইচ্ছাকৃত ভুল করা হয়েছে তখন এই বিষয় গুলো বিবেচনা করে ন্যায় বিচারের উদ্যোগ নিতে হয় আর তা করতে আইনে আছে রেফারেন্স, রিভিউ, রিভিশন সহ বেশ কিছু উপায়। চলুন দেওয়ানী আদালতের এমন কিছু বিষয় গুলো একটু বুঝে নেওয়া যাক।
রেফারেন্স [Reference] বা অভিমত
অনেক সময় দেখা যায় আমরা কোন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি, হয়তো একাধিক পথের মধ্যে কোনটি সঠিক তা বুঝে উঠতে পারিনা তখন আমরা আমাদের গুরুজনের কাছে সেই বিষয়ে মতামত বা অভিমত চাই আর এমনটি সকল কাজের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। আর আইনি বিষয়ে ঠিক এই কাজের জন্য আইনি পদ্ধতি বলে দেয়া আছে আর সেটাকে আমরা বলি রেফারেন্স [Reference] বা অভিমত।
দেওয়ানী কার্যবিধির ধার ১১৩ তে রেফারেন্স [Reference] বা অভিমত বিষয়ে বলা আছে।
রেফারেন্স কি?
নির্ধারিত শর্ত ও সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে কোনো আদালত কারণ উল্লেখপূর্বক কোন মামলা হাইকোর্ট বিভাবে অভিমতের জন্য প্রেরণ করতে পারে এবং হাইকোর্ট বিভা উক্ত মামলা সম্পর্কে যথোপযুক্ত আদেশ প্রদান করতে পারে আর এই প্রক্রিয়াই হচ্ছে রেফারেন্স [Reference] বা অভিমত।
দুটি বিষয় এই রেফারেন্স চাওয়া যায়
- আইনের প্রশ্নে [Question of Law]
- ঘটনার প্রশ্নে [Question of Fact]
রিভিউ [Review] বা পুনর্বিচার বা পুনঃ বিবেচনা
যখন কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মনে করেন যে তিনি সঠিক প্রতিকার পাননি তখন তিনি একই আদালতে [সেই আদালতের] রায়, আদেশ বা ডিক্রিকে পুনঃও বিবেচনা করার জন্য আবেদন করতে পারে।
এটি অনেকটা আপিলের মতই পার্থক্য হচ্ছে এই যে রিভিউ হয় একই আদালতে আর আপিল হয় উচ্চ আদালতে।
কোন অবস্থায় রিভিউ করা যায়?
- যেখানে আপিল করার কোন বিধান নেই।
- যেখানে আপিল করা যায় কিন্তু তা না করে রিভিউ করারও উপায় আছে।
- যেখানে Small Causes Court রেফারেন্সের ভিত্তিতে ডিক্রি দেয় সেই ডিক্রির বিরুদ্ধে।
কখন করা যায়?
- রায় দেখেই যখন বোঝা যায় যে কোন ভুল হয়েছে
- নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু; যা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেই বিষয়টির কারণে যে রায় বা ডিক্রি এসেছে তা বদলে যেতে পারে।
- অন্য কোন যৌক্তিক কারণ।
রিভিউ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আছে দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৪৭ এ।
রিভিশন [Revision] বা পুনরীক্ষন
আপিল বা রিভিউর মতই রিভিশন হলো ন্যায় বিচারের ব্যর্থতা বা আইনের ভ্রান্তির জন্য ভুল বা অন্যায় বিচার হলে ন্যায় ও সঠিক বিচার পাওয়ার একটি উপায়। এটি নিন্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালতে করতে হয়।
দেওয়ানী কার্যবিধিতে রিভিশন বিষয় আলোচনা করা হয়েছে ১১৫ নং ধারার ৫টি উপধারায় এবং এর জন্য আলাদা কোন আদেশ বা বিধি নেই। এখানে সংক্ষেপে রিভিশন সম্পর্কে আলোচনা করা হোল।
- দেওয়ানী আদালতের রিভিশনের এখতিয়ার শুধু মাত্র জেলা জজ ও হাইকোর্ট বিভাগের।
- যে ক্ষেত্রে আপিলের বিধান নেই সেই ক্ষেত্রে রিভিশন দায়ের করা হয়।
- রিভিশন দায়ের করা হয় আইনগত ভুল ও ন্যায় বিচারে বিঘ্ন ঘটার কারণে।
কোথায় রিভিশন করা যায়?
যেখানে কোন আপিল হয় না কিন্তু সেখানে কোন মারাত্মক আইনগত ভুল হয়েছে বা যেখানে ন্যায় বিচারের ব্যত্যয় হয়েছে সেখানে রিভিশন করা যায়।
কোন আদালত থেকে কোন আদালতে রিভিশন দায়ের করতে হয়:
- সকল আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের হবে হাইকোর্ট বিভাগে
- সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ ও যুগ্ম জেলা জজ প্রদত্ত কোন আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন জেলা জজ আদালতে।
- অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ প্রদত্ত কোন আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন হাইকোর্ট বিভাগে।
দ্বিতীয় রিভিশন
আসলে সরাসরি দ্বিতীয় রিভিশন বলে কিছু নেই তবে টেকনিকাল ভাবে আছে; ধরুন সহকারী জজ আদালত থেকে একটি আদেশ হল এবং সেটির বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ জেলা জজ আদালতে রিভিশনে আবেদন করলো [এখানে প্রথম রিভিশন হয়েছে] এর পর যেই রায় পেল সেটা আবার অপর পক্ষ পছন্দ করলো না ফলে সেই জেলা জজের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করলে, তাহলে এখানে টেকনিক্যালি দ্বিতীয় রিভিশন হচ্ছে।
তামাদি বা সময়
রিভিশনের কোন নির্দিষ্ট তামাদি বা সময়ের বাধ্যবাধকতা তামাদি আইনে বা অন্য কোথাও বলা নেই। তবে কেইস ল এবং অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনা করে এ বিষয়ে এটা মানা হয় যে, তামাদির মেয়াদটি আপিলের মেয়াদে সমান অর্থাৎ ৩০ দিন হবে।
আরো দেখুন:
- আপিল কি, কেন, কখন, কিভাবে
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়ের টিউটরিয়াল)
- দেওয়ানী কার্যবিধির উপর সকল আর্টিকেল
- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের সকল বিষয় দেখুন
আমাদের আপডেটেড নোট, গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এবং আইন বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেনিং, কোচিং, কোর্স কিনতে আমাদের আইন পাঠশালা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ২০২৩ সালের বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী হলে দ্রুত আইন পাঠশালা ফেসবুক গ্রুপ এ সংযুক্ত হোন।