মৃত্যু আমার অধিকার ; ইচ্ছামৃত্যু
মৃত্যু অতি সাধারণ ঘটনা কিন্তু তবু সবাই এর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে চায়; বরই অদ্ভুত। মৃত্যু শব্দটা শুনেই ভয় পায় মরা মানুষের মত নিরীহ বস্তুটাকে ভয় পায় যখন কিনা মানুষের বুঝ হবার সাথে সাথেই তার মৃত্যুকে গ্রহণ করার সাহস সঞ্চয় করা উচিত। আর নিজের ইচ্ছা মৃত্যুর যে ইচ্ছা একে বলে ইচ্ছামৃত্যু।
একটা মজার কথা বলি আলায়সা কারসন (Alyssa Carson) নামের ১৩ বছরের মেয়েটি মরার জন্য তৈরি হচ্ছে, তার তাকে তৈরি করছে এ পৃথিবীর কয়েকশ সব্বোচ্চ জ্ঞানী মানুষরা, একটু ভেঙ্গেই বলি, সে মঙ্গল গ্রহে যাবে বলে তৈরি হচ্ছে এক কোম্পানি তাকে পাঠাবে কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে এবং পৃথিবী থেকে দেখবে সে কয়দিন বেচে থাকতে পারে…(!) কিছুটা গেমইটাপের ব্যাপার তবে এটা নি:সন্দেহে যে সুইসাইড তাতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রশ্ন হল তবে সে এমন কাজ করছে কেন? উত্তর খুব সহজ ইতিহাসের পাতায় মঙ্গলে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নাম লেখানোর জন্য। এখন বলুন এই মিস কারসনকে আমরা কি বলব পাগল না স্বার্থপর? কারণ সে এই পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে নাকি তার পরিবার স্বজনের ভালবাসার মূল্য দিচ্ছে না তাই? আমি জানি প্রশ্ন দুটি খুবই সেনসিটিভ এবং কমপ্লিকেটেড কিন্তু আমার এভাবে কেন ভাবছি না যে তার জীবনের মতামত তার উপর ছেড়ে দেয়া উচিৎ। হুমম অনেকেই বলবেন ও তো বাচ্চা (নাবালক) নিজের ভালো বোঝার বয়স এখনো হয়নি; কিন্তু জনাব আপনার কথার ভিত্তি কি? সুধু বয়স? তার জ্ঞান অবশ্যই আমার আপনার চেয়ে খুব কম নয় এবং আমাদের দেশে অর্ধেক সাবালক মানুষের চেয়ে বেশী। কথাটা শুনতে খটকা লাগলে, ইমেজে আঘাত লাগলেও কথা সত্যি।
আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যথার্থই বলেছিলেন ” শিক্ষার আর অভিজ্ঞতার কোন বয়স নেই, যে শিশুটির মা ১০ বছর বয়সে মারা যায় তার বুঝতে হয় মৃত্যু কি, তার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হয় যেটা হয়তো বড় হয়েও অনেকে মেনে নিতে পারে না”
এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন? কিন্তু আত্মহত্যা তো মহাপাপ, সেটা কিভাবে আবার অধিকার হয়? তখন আমি বলব বাপ আপনার যদি পরোপার নিয়ে ভাববার ফুরসত থাকে তবে অবশ্যই আপনার আত্মহত্যা কারা মত অবস্থা হয় নি তাই এই নিয়া ভাবারও প্রয়োজন নেই।
পরের প্রশ্নই আসতে পারে, আইন নিয়ে কারণ আইন আর অধিকার শব্দ দুটো একে অন্যের সাথে খুবই সম্পর্ক যুক্ত। এবার দেখি আমাদের আইন কি বলে।
পেনাল কোডে ৩০৯ নম্বর সেকশনে বলা আছে ” যে আত্মহত্যা চেষ্টা করবে তার এই চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে (criminal offence) এবং তাকে সবোচ্চ এক বছর পর্যন্ত সাজা দেয়া যাবে বা জরিমানা বা উভয় শাস্তি দেয়া যাবে(!!)
সঙ্গত করনেই এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোন সঠিক উত্তর পেলাম না, কেউ এ বিষয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। তবে আইনে ধরা হয় যে আত্মহত্যা করতে চায় তার মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কম, এটা তার মানসিক অক্ষমতা, একই কারণে মুসলিম আইনে আত্মহত্যার চেষ্টা করা মানুষের উইলকে ভয়েড/ বাতিল করে দিতে পারে। যেখানে মানুষ তার মানসিক অক্ষমতায় কারণে অনেক অপরাধের শাস্তি থেকে রক্ষা পায় কিভাবে সেই একই করনে একজন মানুষকে জেল জরিমানা করতে পারে তা সত্যিই আমার কাছে বিস্ময়কর।
এবার চলুন এই ধারার উৎপত্তি দেখি, The Penal Code 1860 যখন কিনা আমারা ব্রিটিশদের দ্বারা শোষিত হতাম এই আইন তখনকার যা আমাদের ভঙ্গুর ব্যবস্থা এখনো বদলানের সাহসও করেনি, অন্য দিকে তাদের জন্য তারা ঠিকই নতুন আইন করে নিয়েছে এবং সুধু এই বিষয়েই একটা আইন হয়েছে Suicide Act 1961 এবং যেখানে আত্মহত্যার চেষ্টাকে আর অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না। শুধু তারাই নয় আমাদের পাশের দেশ ভারতও আত্মহত্যার চেষ্টাকে ডিক্রিমিনালাইজড করার চেষ্টা করছে, এবং ভারতের ল কমিশন এ বিষয়ে সুপারিশও করেছে যা নি:সন্দেহে উন্নত চিন্তার ফসল। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এ ব্যাপারে ২০১১ সালে একমত প্রকাশ করেছে এবং মদি সরকার নীতিগত ভাবে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আধুনিক বিশ্বও পিছিয়ে নেই, ইউএসএ, কানাডা, ইউরোপের প্রায় সব আধুনিক দেশ ইতোমধ্যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে আত্মহত্যাকে ডিক্রিমিনালাইজড করেছে, সুধু পিছিয়ে আছে আমাদের মত কিছু গোঁড়া দেশ।
প্রশ্ন হল ইচ্ছামৃত্যু অপরাধ কেন?
আমরা উত্তরটাকে দুই ভাবে দিতে করতে পারি
১। পক্ষে: মানুষ যদি তার ইচ্ছেমত তার মৃত্যু বেছে নেয় যখন তখন, তাহলে সমাজে এক বিশাল শূন্যতা ও অস্থির অবস্থা বিরাজ করবে যা মানব সমাজের জন্য মোটেই কল্যাণকর বা কাম্য নয়।
২। বিপক্ষে: আইন তারাই বানায় যারা শাসন ব্যবস্থায় ঊর্ধ্বে থাকে এবং আইনের মাধ্যমে তারা শোষণ করে, যদি এই শোষিতরা আর শোষিত হতে না চায় এবং ইচ্ছামৃত্যু বেছে নেয় তবে শাসক তার উৎপাদন ব্যবস্থা হরারে। এই শাসকরা কখন রাজা বাদশা ছিল কখন ধর্ম যাজক, কিন্তু তারাই আইনের মাধ্যমে সকল সুখ ভোগ করতো (এখনো করছে)
অনেকেই হয়তো আমার বক্তব্যে কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন, আমি মোটেই বলছিনা যার যখন খুশি আত্মহত্যা করা উচিৎ, আমি মোটেই বলছিনা প্রথম করনটা মিথ্যা। দুটি কারণই সত্য। আমি বলছি, এক মানুষের জন্মের মাধ্যমে যে মানবাধির অর্জন করে, সেখানে তার সবচেয়ে বড় অধিকার হওয়া উচিত তার ইচ্ছামৃত্যুর অধিকার এবং এই অধিকারের যেন কেউ অপপ্রয়োগ না করে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থা। এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে একটা মানুষ তার মৃত্যুর জন্য আবেদন করবে এবং ব্যবস্থাটি তার মৃত্যুর প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখবে এবং তারপর উপর ভিত্তি করে হয় তার কারণ গুলো মিমাংশা করা সম্ভব হলে মিমাংশা কার ( যার মানষিক সমস্যা তাকে চিকিৎসা করা, যা নিপিরনের শিকার তা বন্ধ করা, যে রোগি তার চিকিৎকার) করা হবে নয়তো তার মৃত্যু সত্যি প্রয়োজন হলে তাকে অনুমতি দেয়া হবে।
ব্যবস্থাটা খুব বেশি কঠিন মনে হলে ইন্ডিয়ান মুভি Guzaarish দেখতে পারেন সহজবোধ্য হবে। এতে অবশ্যই আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে এবং মানবাধিকার ও শাসন ব্যবস্থা উন্নত হবে।
ইচ্ছামৃত্যু বা Euthanasia (or Mercy Killing) অনেক আধুনিক দেশেই এখন অনুমোদন করা হয়। এখন আমাদের সময় সময়ের সাথে যুক্তির সাথে প্রয়োজনের সাথে এগিয়ে যাওয়া, পেনাল কোডের ৩০৯ নং ধারা বাতিল করা এবং বিচার বিভাগকে ইচ্ছামৃত্যু অনুমোদনের ক্ষমতা দেয়া।
আমি স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করতে চাই। কিভাবে করতে পারি?
বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । এখন 2022 সাল বর্তমান ভারতের এই আইনটি সম্পর্কে একটু ব্যাখ্যা দিলে ভালো হয়।আমি আমার দুটোই কিডনি দান করতে চাই এবং এখান থেকে কিছু টাকা যদি পেতাম তাহলে অনাথ শিশুদের জন্য দান করে দিয়ে যেতে চাই।