নজির কি বা Precedent (প্রিসিডেন্ট) কি?
নজির কি?
আসুন আইনি ভাষায় না গিয়ে আমরা আগে সহজে বোঝার চেষ্টা করি, “তার নজিরবীহিন কলায় সবাই মুগ্ধ” এর মানে কি দাড়ায়? সে এমন একটা কাজ করেছে যা আগে দেখা যায়নি । ঠিক তেমনি বিচার কাজ করতে গিয়ে বিচারক গন অনেক নতুন নতুন সমস্যায় পড়েন এবং নজিরবীহিন রায়ের মাধ্যমে তার সমাধান করেন। এই নজিরবীহিন রায়গুলো তখন নজির হয়ে থাকে। যেহেতু এগুলো বিভিন্ন কোর্টের রায়ের মাধ্যমে আসে তাই এই নজির (precedent) কে আরও কিছু আইনে নামেও ডাকা হয় যেমন: Case law, Rulings etc
এই নজির কিন্তু আবার অধ:নস্ত কোর্টের উপর ফরজ (বাধ্যতামূলক) যাই হোক সেই প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।
এবার একটু ইতিহাসের দিকে আসা যাক বাংলাদেশে এই নজিরের আগমন ব্রিটিশদের হাত ধরে, কমন ল এর মাধ্যমে, এমনকি সালমন্ড মনে করেন কমন ল,য়ের প্রায় পুরোটাই এসেছে নজিরের মাধ্যমে। ইংল্যান্ডের বিচারকরা ছিলেন তাদের বিচারীক বিষয়ে বিজ্ঞ এবং খুবই সম্মানীয় ব্যক্তি, তাই তাদের দর্শন ও বিচারকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হত, আবার তারাই ক্ষেত্র বিশেষে আইন প্রণেতাও ছিলেন ।
নজিরের মূল উপাদান ধরা হয় Stare decisis Stare মতবাদকে। এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ decisis non quet movere অর্থাৎ ‘সিদ্ধান্তে অটল থাকা এবং গৃহীত সিদ্ধান্তে ব্যতিক্রম না ঘটানো’। মানে হচ্ছে, আদালতের কোন রায় আদেশ বা সিদ্ধান্তে যা আসে পরবর্তীতে ঠিক একই রকম মামলায় আগের মতই আদেশ আসবে। এবং আমাদের সংবিধানেও তাই বলা আছে।
সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট সহ অধঃ:ন্যস্ত আদালতের উপর বাধ্যতামূলক। তবে মনে রাখতে হবে এই যে, কোন রায়ের সম্পূর্ণ অংশই কিন্তু নজির নয়। রায়ের যেই অংশে সিদ্ধান্তের কারণ / নিয়ম দেয়া থাকে সেটুকুই বাধ্যতামূলক (যদি বিষয় ও ঘটনা এক ঘটে তবেই)। আবার সব রায়েই নজির সৃষ্টিকারী উপাদান থকে না।
বাংলাদেশ সংবিধানে নজির
নজির বিষয়ে বাংলাদেশ সংবিধানে যা বলা আছে:
অনুচ্ছেদ: ১১১
সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বাধ্যতামূলক কার্যকরতা |
১১১। আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রীম কোর্টের যে কোন বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধঃস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয় হইবে।
|
অনুচ্ছেদ: ১০৫
আপীল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা |
১০৫। সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।
|
|||
আবার আসা যাক কে কার কথা শুনতে বাধ্য (আদালত) বা বাধ্য নয়। ঊর্ধ্ব ক্রমে সাজানে হোল।
আপিল বিভাগ
- বাংলাদেশের সকল নিম্ন আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল আপিল বিভাগের রায় মেনে চলতে বাধ্য।
- আপিল বিভাগ নিজে নিজের রায় মেনে চলতে বাধ্য নয়।
- আপিল বিভাগ নিজ রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারেন (অ: ১০৫)
হাইকোর্ট বিভাগ
- হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের রায় মেনে চলতে বাধ্য।
- হাইকোর্ট বিভাগের রায় সকল নিম্ন আদালত মেনে চলতে বাধ্য।
- হাইকোর্ট বিভাগের রায় সকল নিম্ন আদালত মেনে চলতে বাধ্য তবে কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে বাধ্য নয়।
জেলা জজ ও দায়রা আদালত বা সেশন জজ
- হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের রায় মেনে চলতে বাধ্য।
- জেলা জজ ও দায়রা আদালত কোন নজির সৃষ্টি করেন না।
অন্যান্য আদালত
- হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের রায় মেনে চলতে বাধ্য।
আশাকরি নজির বিষয়টা আপনাদের কাছে বুঝিয়ে ধরতে পেরেছি, আর কোন বিষয়ে আপনারা জানতে আগ্রহী তা আমাদেরকে জানান আমরা সেই বিষয়ে লেখার চেষ্টা করবে।