সাধারণ ডায়রি (জিডি) কি, কেন ও কিভাবে?
জিডি বা জেনারেল ডায়েরি অর্থ কোনো বিষয়ে সাধারণ বিবরণ যা কিনা থানার একটি বিশেষ বইয়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেমতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় । জিডি সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ আছে পুলিশ আইন, ১৮৬১ , ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এবং পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল ১৯৪৩ এই আইনগুলোতে।
যেসব কারণে জিডি করা যায় বা যখন জিডি করবেন:
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি থানা থেকে জরুরী নয় বা তাৎক্ষনিক সাড়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু নিরাপত্তার সার্থে এবং ভবিষ্যত সূরক্ষার জন্য প্রয়োজন এমন সব বিষয়ে সাধারণ ডায়েরী বা জিডি করতে পারবেন। জিডি করা যায়, এমন কিছু বিষয়ের উদাহরণ হচ্ছে:
- পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র,ব্যাংকের চেকবই, সার্টিফিকেট বা অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারানো গেলে।
- জনসাধারণের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা আছে এমন কোন অবৈধ সমাবেশ সম্পর্কে আগাম তথ্য সম্পর্কে ।
- গৃহ পারিবারিক, নিয়োগ দারোয়ান, কেয়ারটেকার, নৈশপ্রহরী নিয়োগ (বা পলায়ন) সম্পর্কে তথ্য।
- নতুন বা পুরোনো ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য।
- কেউ ভয় দেখালে বা হুমকি দিলে বা যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ হয়, তাহলে থানায় জিডি করা যায়।
থানায় জিডি করা বা পুলিশি সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে নানান রকম ভুল ধারণা প্রচলিত আছে । বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন যে বিষয়টি অত্যন্ত ঝামেলার এবং খরচ সাপেক্ষ। তবে জিডি করা খুবই সহজ একটি বিষয়, আর বর্তমানে অনলাইনেও জিডি করার ব্যবস্থা রয়েছে। অনলাইনে জিডি করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে প্রধান পাতায়ই একটি ট্যাব দেখা যাবে Citizen help request নামে। এখানে জিডি করলে একটি নাম্বার দেয়া হবে, থানায় গিয়ে ঐ নাম্বারটি বললেই জিডির সত্যায়িত কপিটি পেয়ে যাবেন। এবং জিডি করতে আইনত কোন টাকা লাগেনা।
কখন জিডি করবেন না:
যে কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ, যেমন- চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদির জন্য জিডি হয় না তবে এফআইআর করতে হয়।
কোথায় এবং কিভাবে জিডি করা যায়:
জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করা উচিত। তবে ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এক থানায় আর জিডি করছেন অন্য থানায়, এমনটি হওয়া উচিত নয়। কেননা এতে পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ নিতে ঝামেলা হয়। জিডি করতে হয় দরখাস্ত আকারে। দরখাস্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বরাবর। নিচে থাকবে থানার নাম। বিষয় হিসেবে উল্লেখ করতে হবে যে ব্যাপারে জিডি করতে চান তার নাম। বিবরণ অংশে আপনাকে বিস্তারিত লিখতে হবে। যদি জিডি করতে কোন কারনে কালক্ষেপণ করেন তার কারণও উল্লেখ করতে হবে। জিডি করার একটি নমুনা কপি নিম্নে সংযুক্ত করা হলোঃ
জিডির একটি নমুনা কপি:
তারিখঃ ………………
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
………………..থানা, ঢাকা।
বিষয় : সাধারণ ডায়েরি অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন।
জনাব,
আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, নাম: ………………………, বয়স………,পিতা/স্বামী……………………….., ঠিকানা……………………, এই মর্মে জানাচ্ছি যে আজ/গত …………….. তারিখ ……………. সময় …………….জায়গা থেকে আমার নিম্নবর্ণিত কাগজ/মালামাল হারিয়ে গেছে। বর্ণনা : ( যা হারিয়েছে তার বিবরণ, কিভাবে হারিয়েছে তার বিবরণ)
এমতাবস্থায় আমার (…..) এর অবৈধ ব্যবহার রোধকল্পে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনাবের নিকট বিষয়টি সাধারণ ডায়রিতে অন্তর্ভুক্ত করারা জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
বিনীত,
নাম: …
ঠিকানা:…
মোবাইল নম্বর:…
এই ধরনের আবেদন আপনি লিখে / কম্পোজ করে সেটা দু কপি করে নিয়ে যাবেন বা একটি করে ফটোকপি করে নিলেও হবে। একটি আপনি জমা দিবেন আরেকটি রিসিপ্ত কপি হিসেবে সাইন ও নম্বর নিয়ে আসবেন। এ ছাড়াও এখন এমন হারানো বিষয়ের জন্য থানায় ফর্ম আকারে জিডির প্যাড থাকে যা আপনি সংগ্রহ করে যাষ্ট নিজের বৃত্তান্ত ও ঘটনা বসিয়ে দিলেই হবে। তবে গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে নিজে নিজেরটা সাজিয়ে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
অনলাইনে জিডি করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে প্রধান পাতায়ই একটি ট্যাব দেখা যাবে Citizen help request নামে। এখানে জিডি করলে একটি নাম্বার দেয়া হবে, থানায় গিয়ে ঐ নাম্বারটি বললেই জিডির সত্যায়িত কপিটি পেয়ে যাবেন। তবে থানায় গিয়ে একসাথে জিডি করে ফেল্লেই আসলে ভাল হয়।
আরো দেখুন: