অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) কাকে বলে ? SR 10
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) কাকে বলে ?
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার (Temporary Injunction) সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এটি এমন একধরনের নিরোধ, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে। মামলার যে কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায় এবং দেওয়ানি কার্যবিধি দিয়ে তা নিয়ন্ত্রিত হয়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে আদালতের নির্দেশনায় যেটি যেই অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকার / রাখার জন্য বলা, এবং আদালত একই অবস্থায় কত দিন থাকবে তা বলে দিতে পারে আবার আদেশে এও বলতে পারে যে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই একই অবস্থায় থাকবে।
উদাহরণ: ধরুন একটি জমি “জ” এ এক ব্যক্তি “রহিম” পুকুর কাটার জন্য প্রস্তুতি নিলো এমন সময় করিম বলল জমিটিতো আমার, তখন এই বিরোধ মেটাতে তারা আদালতে গেল। আদালত পূর্ণ বিচার করার আগে বলল এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই জমি যেমন আছে তেমন থাকবে। কেউ নতুন করে কোন কিছু করতে পারবেনা। এটিই হল অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞার ধরন ও প্রাথমিক ধারনা পেতে আরো দেখুণ: আদালতের স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন (Injunction) কি?
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা:
আইনের লিস পেনডেন্স [lis pendens] নীতি অনুসারে, যাতে করে আদালতের ডিক্রি বা আদেশ ক্ষুন্ন না হয়, সে জন্য সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারা অনুসারে বিচারাধীন মামলার সম্পত্তি আদালতের অনুমতি ছাড়া হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ। এখন কেউ যদি অসদুদ্দেশ্যে বিচারাধীন কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করতে উদ্যোগী হয়, সে ক্ষেত্রে অস্থায় নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন পড়ে।
দেওয়ানি কার্যবিধির ৩৯ নাম্বার আদেশের ১ নাম্বার নিয়মানুসারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়ে থাকে। ওই নিয়মে বলা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে মামলার এফিডেভিটের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে প্রমাণিত হয় যে মামলায় জড়িত বিরোধভুক্ত কোনো সম্পত্তি মামলার কোনো পক্ষ কর্তৃক ধ্বংস, ক্ষতিগ্রস্ত বা হস্তান্তরিত হওয়ার অথবা ডিক্রি জারির কারণে বেআইনিভাবে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিংবা বিবাদী তার পাওনাদারকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি অপসারণ বা হস্তান্তর করার হুমকি বা ইচ্ছা প্রকাশ করছে, সে ক্ষেত্রে আদালত ওই প্রচেষ্টাগুলো রোধ করার জন্য আদেশ জারি করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন অথবা মামলা নিষ্পত্তি বা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত বা ওই আদেশ ধ্বংসকরণ, হস্তান্তর, বিক্রি বা অপসারণ স্থগিত করার উদ্দেশ্যে যে রকম উপযুক্ত মনে করেন, সে রকম আদেশ দিতে পারেন।
সাধারণত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনাকারীকে তার ‘মামলার আপাত যথার্থতা’ (প্রাইমা ফেসি কেস) এবং একই সঙ্গে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া না হলে তার যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা অর্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় বলে প্রমাণ করতে হবে।
কোন অবস্থায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন, তা ৩৩ ডিএলআরের ‘মজিবুর রহমান বনাম সিরাজউদ্দিন ব্যাপারী’ মামলায় মাননীয় আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ওই মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘বাদী যদি তার দাবির সপক্ষে ন্যায্য এবং যুক্তিপূর্ণ মামলা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে অস্থাীয় নিষেধাজ্ঞার আদেশ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নালিশি বিষয়বস্তুর সংরক্ষণ, নালিশি বিষয়বস্তুতে কোনো পক্ষের স্বত্ব আছে কিনা তা নির্ণয় এর উদ্দেশ্য নয়। বরং নালিশি বিষয়বস্তুর সংরক্ষণই মূল উদ্দেশ্য।’
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের সাজা
দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৯ নাম্বার আদেশের ২ নাম্বার নিয়মের ৩ নাম্বার উপনিয়মে বলা হয়েছে, যদি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হয় অথবা কোনো শর্ত ভঙ্গ করা হয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরকারী আদালত সেই অমান্য করা বা ভঙ্গ করার জন্য দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিতে পারেন এবং ওই ব্যক্তিকে অনধিক ছয় মাসের জন্য দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখারও নির্দেশ দিতে পারেন, যদি না আদালত এর আগে তার বা তাদের মুক্তির আদেশ না দেন।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা বা না করার নীতিমালাঃ
- ১) বাদীর আপাতঃ দৃষ্টিতে একটি মামলা (Prima facie case) আছে কিনা,আদালত তা বিবেচনা করবেন। পক্ষগণের মধ্যে গুরুত্তপুর্ন বিচার্য বিষয় থাকতে হবে।
- ২) মামলায় বাদীর জয় লাভের সম্ভাবনা থাকলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করবেন।
- ৩) বাদীর অপূরণীয় ক্ষতি (Irreparable loss) হবার সম্ভাবনা আছে কি না আদালত তা বিবেচনা করবেন।
- ৪) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারীর ক্ষেত্রে আদালত বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের সুবিধা অসুবিধা (Balance of convenience and inconvenience of the parties ) বিবেচনা করবেন।
- ৫) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পেতে হলে বাদীকে পরিষ্কার হাতে আদালতে আসতে হবে।
- ৬) মামলার বহুতা রোধ কল্পে (multiplicity of suit) আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারেন।
- ৭) বাদীর আচরণ (the conduct of applicant) আদালত বিবেচনা করবেন।
- ঘোষণামূলক মামলা; ধারা ৪২ | SR 09
- আদালতের স্থগিতাদেশ বা ইনজাংশন (Injunction) কি? SR 11
- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের সকল বিষয় দেখুন
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।
আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।