চুক্তির আংশিক সম্পাদন; ধারা ১৩-১৯ | SR 05
আমরা কোন কাজ সম্পাদন করতে চুক্তি করি আশা করি সব ঠিকঠাক মত চলবে কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা সব সময় তার প্লান মত হয় না। দেখা যায় হয়তো কোন কারণে চুক্তিটি সঠিক ভাবে সম্পাদন করা যাচ্ছে না (চুক্তি অনুযায়ী কাজ করা যাচ্ছে না), কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো কাচামালের সমস্যা কিম্বার ধরুন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সমস্যা। এসব কনফিউশন দূর করতে বিভিন্ন উপায় বলা রয়েছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ১৩ থেকে ১৯ ধারায়। চলুন বিষয় গুলো ব্যাখ্যা সহ বুঝে নেয়া যাক।
চুক্তির বিষয় চুক্তির সময় বিদ্যমান থাকলে [ধারা ১৩ ]
ধরুন আপনি সকল কথা পাকা করে একটা গাড়ি কিনলেন, কিন্তু বললেন টাকাটা কালকে নিও ভাই। অঘটন হল কোনার পর পরই; সেটা চুরি হয়ে গেল, এখন দায় কার? মালিকের, তাইতো? এখন যে সব কথা পাকা করেছে সেইতো মালিক তাই না? এবার যে বিক্রি করেছে তার কি হবে? সে ন্যায় বিচার হিসেবে টাকাটা ঠিকই পাবে। ঠিক তাই, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে (ধারা ১৩-তে) আসলে তাই বলেছে তবে একটু জটিল করে। আর এই দায় এড়ানোর জন্যই চুক্তি করার সময় বিষয় গুলো কাগজে খুব ভাল ভাবে লেখা থাকে।
ধারা ১৩ তে বলা হয়েছে;
চুক্তি আইনের (১৮৭২) ৫৬ ধারায় যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, যদি চুক্তি করার সময় চুক্তির বিষয় বস্তুটির বিদ্যমান থাকে এবং চুক্তির কারা পর বিষয় বস্তুটির একটি অংশ বিদ্যমান না থাকে তবে শুধুমাত্র সে কারণেই চুক্তিটি সম্পাদিত হতে অসমর্থ হবে না।
তার মানে, চুক্তিটি সম্পাদিত হতে হবে এবং চুক্তি অনুযায়ী বিনিময় মূল্য দিতে হবে।
উদাহরণ:
- ক, খ’য়ের সাথে বাড়ি কিনার চুক্তি করে, চুক্তি করার পরের দিন ঝড়ে তার বাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়, এখানে চুক্তির দুটি অংশ ১. ক’য়ের “বাড়ি” এবং ২. খ’য়ের “টাকা” এখন বাড়িটি আর নেই, তাই শুধুমাত্র বাড়ি না থাকার কারণে চুক্তিটি বাতিল হবে না। ক এখানে খ’কে চুক্তিতে তার অংশ সম্পাদন করা তথা টাকা প্রদান করতে এই আইনের মাধ্যমে বাধ্য করতে পারবে।
- আবার ধরুন, খ ক’য়ের সাথে একটি চুক্তি অনুসারে টাকা দিল এবং চুক্তি অনুসারে ক খ’কে আজীবন বাৎসরিক ভাতা দেবে, কিন্তু খ তার পরের দিনই মারা গেল। এখানে খ’য়ের পরিবার ঐ টাকাটা দিতে বাধ্য থাকবে। এখানে যদিও খ, বেচে নেই কিন্তু চুক্তি অনুসারে তার দায় আছে, আর দেওয়ানি ও ব্যক্তিগত আইন অনুসারে এই দায় সাধারণত পরিবার বা উত্তরাধিকারের উপর বর্তায় যদি তারা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পেয়ে থাকেন।
এখানে মনে রাখতে হবে এই বিদ্যমান না থাকা (Impossibility) কিন্তু দুই প্রকারের
- ১. Antecedent: যেটা চুক্তি করার আগেই অসম্ভব হয়ে যায়, যেমন গাড়ি কেনার কথা পাকা হওয়ার আগেই গাড়ি চুরি হল।
- ২. Subsequent: চুক্তি করার পরে অসম্ভব হয়ে যায় (উপরের উদাহরণের মত)। আর ধারা ১৩ শুধুমাত্র Subsequent বিষয় নিয়ে কথা বলেছে। এবং এখানে এমন ধরনের Subsequent Impossiblity হতে হবে যা কোন পক্ষের হাতে থাকে না।
ধারা ১৩ এর সাথে, ধারা ১৪ বা ১৫ মিলিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
বড় অংশ সম্পাদন [ধারা ১৪ ]
ধরুন, আপনি ১০০টি কাঁঠাল বিক্রি করার চুক্তি করলেন, কিন্তু বাসায় এসে দেখলে দুইটা নেই। এখন কি হবে? চুক্তি বাতিল হবে? নতুন করে চুক্তি করতে হবে? না, আইন বলছে যদি দুই পক্ষই রাজি থাকে (সে অনুযায়ী দাম কমিয়ে) তবে সেই ৯৮টি কাঁঠাল দিয়েই আগের চুক্তি সম্পাদন করা যাবে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ১৪ এর মাধ্যমে।
ধারা ১৪ তে বলা হয়েছে;
যদি কোন পক্ষ তার চুক্তি পুরো অংশ সম্পাদন করতে পারবে না কিন্তু যে টুকু পারবে না সেটা পুরো অংশের তুলনা ক্ষুদ্র একটি অংশ, এমন অবস্থায় আদালত তার বিচক্ষনাতায় (Discreation) যেটুকু সম্পাদন করা সম্ভব হয় সেটুকু সম্পাদন করতে যে কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্য পক্ষকে বিশেষ ভাবে সম্পাদন করতে বাধ্য করতে পারবে।
চুক্তিটি অবশ্যই এমন হতে হবে যা অংশে ভাগ করা যায়, উদাহরণ স্বরূপ ১০ বস্তা চাল, যার দাম নির্ধারণ করা যায় এবং আদালত সহজে হিসেব করে টাকার অংকে পুনঃ নির্ধারণ করতে পারেন (ক্ষতিপূরণ সহ) এবং এমন হতে হবে যাতে অপর পক্ষের অপূরণীয় ক্ষতি না হয়, যেমন, ক’য়ের ফ্যাক্টরি করতে ১০০ কাঠা জমি দরকার, কিন্তু খ’য়ে সাথে চুক্তির পর দেখা গেল তার ৯৫ কাঠা-ই আছে, এমন হলে হবে না।
চুক্তির ক্ষুদ্র অংশ সম্পাদন [ধারা ১৫]
যদি কোন পক্ষ তার চুক্তি পুরো অংশ সম্পাদন করতে পারবে না কিন্তু যেটুক পারবেনা সেটা পুরো অংশের তুলনা বড় একটি অংশ, এমন অবস্থায় আদালত যেটুকু সম্পাদন করা সম্ভব হয় সেটুকু সম্পাদন করতে যে কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্য পক্ষকে বিশেষ ভাবে সম্পাদন করতে বাধ্য করতে পারবে না, তবে অন্য পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐ পক্ষকে (যে পুরোটা দিতে পারবে না) যেটুকু সম্পাদন করতে পারে তা বিশেষ ভাবে সম্পাদন করতে আদেশ দিতে পারে। তবে, শর্ত থাকে যে আবেদনকারী পক্ষ তখনি বাকি দাবি ছেড়ে দেবে।
উদাহরণ: ক’ খ’কে ১০০ বিঘা জমি দেবে বলে চুক্তি করলো কিন্তু পরে দেখা গেল এর মধ্যে ৫০ বিঘা ক’য়ের ভাই গ’র, এখানে খ যদি বাকি ৫০ বিঘা জমির দায় ছেড়ে দিয়ে আদালতে বাকি (ক’য়ের ৫০) বিঘা জমি পেতে চায় তবে সেই নির্দেশ সে আদালতের মাধ্যমে নিতে পারবে।
একাধিক অংশের একটি অংশ বিশেষ ভাবে সম্পাদন [ধারা ১৬]
প্রথমেই আসি চুক্তি আইনের একটি সাধারণ নিয়মে, সেখানে বলা হয়েছে কোন চুক্তির একাধিক অংশ থাকলে তা এক সাথে পালন করতে হবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ১৬ এর ব্যতিক্রম। ধারা ১৬ তে বলা হয়েছে, যদি একটা চুক্তি এমন হয় যার একাধিক অংশ রয়েছে এবং যে গুলোর প্রতিটিকে আলাদা ভাবে সম্পাদন সম্ভব, সে চুক্তির এক অংশ সম্পাদন করা সম্ভব না (অসম্ভব বা অনাকাঙ্ক্ষিত) হলেও আদালত তার বিচক্ষণতা ব্যবহার করে (discretion) ঐ চুক্তির বাকি অংশকে সম্পাদন করার জন্য আদেশ দিতে পারবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, অংশ দুটি আলাদা ভাবে সম্পাদন যোগ্য হতে হবে, তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল হলে হবে না। এখানে এই আলাদা ধরনের কোন সংজ্ঞায়ন নেই এটা মূলত ঘটনার উপর নির্ভর করে।
উদাহরণ: ধরা যাক ক খ’য়ের সাথে চুক্তি করলো সে তাকে ১টন ইলিশ আর ১টন জাম দেবে, এখন এই সময়ে ক’য়ের পক্ষে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশ সরবরাহ করা সম্ভব নয় (বেআইনী), তখন খ’য়ের আবেদনে আদালত সুধু জাম সরবরাহ করার আদেশ দিতে পারে।
ধারা ১৪,১৫ ও ১৬-র মধ্যে পার্থক্য
ধারা ১৬ তে একাধিক পৃথক ভাবে সম্পাদন যোগ্য অংশের চুক্তির কথা বলা হয়েছে কিন্তু ধারা ১৪ ও ১৫ তেমন কিছু বলা হয়নি, আবার ধারা ১৬ তে চুক্তি একটি অংশ বে আইনি হওয়ার জন্যও সে অংশ অ-পালনয় হতে পারে এবং অন্য অংশ পালন করতে বাধ্য হতে পারে কিন্তু দার ১৪ বা ১৫ তে এ বিষয়ে কিছু বলা হয় নি।
বিক্রেতার ত্রুটিপূর্ণ মালিকানায় ক্রেতার অধিকার; ধারা ১৮ | SR 05
কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের ক্ষতিপূরন দেয়ার ক্ষমতা [ধারা ১৯]
কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে চুক্তির বিষয়ে মামলা করলে চুক্তিটির সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের পাশাপাশি অথবা সুধু ক্ষতিপূরণও চাইতে পারে। আদালত এখানে নিজের বিবেচনা ব্যবহার করে রায় প্রদান করবেন।
- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের সকল বিষয় দেখুন
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।
আমাদের সকল লেখা ও আপডেট পেতে সাবসক্রাইব করুন [ডানদিকে নিচের লাল বেল বাটনটি ক্লিক করুন] অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।