মোকদ্দমার মুলতবী, শুনানি ও হলফনামা – দে. কা ১৩

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমায় প্রতিকার পেতে অনেক সময় লাগে। হয়তো ভাবেন কেন এত সময় লাগে? আদতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমায় অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে বিচার পেতে হয়, তবে তাছাড়াও সময় লাগার জন্য মুলতবী একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। মুলতরী সাথে শুনানি ও হলফনামার কিছু বিষয়ও এই লেখায় পরিষ্কার করার চেষ্টা হল যাতে আপনারা বিষয়টি সহজে বুঝতে পারেন।

আদেশ ১৭। মুলতবী  [Adjournment]

মুলতবি: আদালত বিভিন্ন সময়ে কোন পক্ষ বা পক্ষগনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐ মোকদ্দমার বিষয়ে তার বিচারিক কার্যক্রম নিদ্রিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখেন, এই বন্ধ রাখাকেই মুলতবি  [adhiyrbnebt] বলে।

বিধি, ১;  কখন ও কিভাবে।

আদালতে মামলা যে কোন পর্যায়ে কোন পক্ষ বা পক্ষগনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মুলতবি করতে পারেন।

  • যে কোন পর্যায়ে।
  • এই মুলতবির সময়টি আদালত নির্ধারণ করে দেবেন।
  • পরবতীতে কবে আবার মামলাট চলবে তা মুলতবির সময় আদালত উল্লেখ করে দেবেন।
মোকদ্দমার মুলতবী, শুনানি ও হলফনামা

মোকদ্দমার মুলতবী, শুনানি ও হলফনামা

বিধি, ২; কতবার মুলতবি দেওয়া যাবে ও তার খরচ

ধরন ও খরচ বিবেচনা করে আমরা মুলতবিকে ২ ভাগে ভাগ করতে পারি –

  • ১. চুড়ান্ত শুনানীর আগের মুলতবী
  • ২. চুড়ান্ত শুনানীর সময় মুলতবী

১. চুড়ান্ত শুনানীর আগের মুলতবী

ধরন  কতবার খরচ
১. সাধারন ভাবে যদি আদালত মুলতবী ঘোসনা করেন।  সবোচ্চ ৬ (ছয়) বার [উভয় পক্ষ মিলেই ।] বিনামূল্যে
২. খরচ সহ বিশেষ ভাবে সবোচ্চ ৩ (তিন) বার  ২০০ – ১০০০ টাকা

২. চুড়ান্ত শুনানীর সময় মুলতবী (See: Order 41 Rule 12A)

ধরন  কতবার খরচ
১. খরচ সহ বিশেষ ভাবে সবোচ্চ ৩ (ছয়) বার  ২০০ – ১০০০ টাকা

খরচ দিতে ব্যার্থ হলে:

  • যদি বাদী খরচ দিতে ব্যার্থ হয় তবে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
  • যদি বিবাদী খরচ দিতে ব্যার্থ হয় তবে মামলাটি এক তরফা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

মামলা খারিজ বা নিষ্পত্তি হরে তার প্রতিকার: 

যার কারনে খারিজ হবে সেই পক্ষকে ৩০ দিনের মধ্যে ২০০০ টাকা ব্যয় হয় মামলাটি পুনরুদ্ধারের আবেদন করতে পারেন।

খরচটা কে পাবে?

  • যদি বাদী মুলতবী  চায় তাবে খরচের টাকাটা পাবে বিবাদী।
  • যদি বিবাদী মুলতবী  চায় তাবে খরচের টাকাটা পাবে বাদী।
  • যদি উপয়পক্ষ মিলেই মুলতবি চায় তবে খরচের টাকাটা পাবে সরকার।

আদেশ ১৮ ।  মামলার শুনানি ও আদেশগনের পরীক্ষা


বিধি, ১; সাক্ষীদের পরীক্ষা

সাধারণত বাদীপক্ষ প্রথম করেন। [আরো দেখুন সাক্ষ্য আইন, ধারা ১১৪]

কিন্তু বিবাদী যদি এমন কিছু দাবি করে থাকেন যাতে প্রমানের দায় ভারি পরিবর্তী হয় যায় [Burden of proof] তবে বিবাদী আগে সাক্ষীদের পরীক্ষা করতে পারবে। [আরো দেখুন সাক্ষ্য আইনে]

বিধি, ৪; হাজির হওয়া সাক্ষিদের প্রকাশ্য আদালতে মৌখিক ভাবে সাক্ষ্য গ্রহন করতে হবে।

বিধি, ৫; আপিলযোগ্য মামলায় বর্ননা মূলক ভাবে সাক্ষি গ্রহণ করতে হবে, প্রশ্ন উত্তর আকারে নয়।

বিধি, ৬; সাক্ষ্যির ভাষায় সাক্ষ্য গ্রহন করতে হবে অথবা অনুবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিধি, ১৫; বিচারকের মৃত্যু, বদলী বা অন্য কারনে বাধা প্রাপ্ত হলে যে স্থানে আগের বিচারক বিচার রেখে গিয়েছেন সেখান থেকে শুরু করতে হবে।

আদেশ ১৯। হলফনামা [Affidavit] এবং ধারা ১৩৯ 

ধারা, ১৩৯; যিনি শপথ পরিচালনা করবেন

  • ১. যেকোন আদালত বা,
  • ২. সুপ্রীম কোর্টের দারা নিয়োজিত কোন ব্যক্তি বা,
  • ৩. সরকার দারা নিয়োজিত কোন ব্যক্তি।
প্রাসঙ্গিক: মিথ্যে হলফ করলে শাস্তি: - পেনাল কোডের ১৯৩ ধারা মোতাবেক শাস্তি হতে পারে, ৭ বছর পর্যন্ত।
হলফনামা সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন: Affidavit A to Z

আদেশ ১৯। হলফনামা

বিধি, ১; আদালত প্রয়োজন মনে করেলে যে কোন পক্ষকে, যে কোন পর্যায় কোন বিষয় বা ঘটনাকে এফিডেভিট দ্বারা প্রমাণ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে।

বিধি, ২; কোন পক্ষ বা এফিডেভিট প্রাদানকারীকে আদলতে হাজির হবার জন্য আদালত আদেশ দিতে পারে। অপর পক্ষ আদালতে জেরা কারার জন্য আদালতের নিকট আবেদন করতে পারেন এবং অনুমতি পেলে জেরা করতে পারেন।

বিধি, ৩; যে সব বিষয়ে হলফনামা প্রদান করা যাবে।

  • ১. যা ঐ ব্যক্তি প্রমান করতে পারবেন। তবে, অন্তবর্তীকালীন কোন আবেদন সম্পর্কে এফিডেভিট করতে তিনি যা বিশ্বাস করেন তা এফিডেভিট করবেন। [তবে তার বিশ্বসের জন্য যথেষ্ট কারণ থাকতে হবে]
  • ২. কোন দলিলের সপক্ষে এফিডেভিটের করতে পারেন।

আমাদের আপডেটেড নোট, গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এবং আইন বিষয়ক বিভিন্ন  ট্রেনিং, কোচিং, কোর্স কিনতে আমাদের  আইন পাঠশালা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ২০২৩ সালের বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী হলে দ্রুত আইন পাঠশালা ফেসবুক গ্রুপ এ সংযুক্ত হোন।

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!