বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন কিভাবে করবেন?

বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন কিভাবে করবেন?

বাংলাদেশে বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে  ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করতে হয়। এই আবেদনটি অনলাইনে করা যায়। বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং ট্রেডমার্ক বিধিমালা, ২০১৫ এর অনুসারে নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটি ৪-৫ টি ধাপের মাধ্যমে সমাপ্ত করতে হয়। যাতে প্রায় দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। 

চলুন নিচে ধাপ অনুসারে ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি দেখে নেই।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন

৪ টি ধাপে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করুন

 

ধাপ-০১ :  ট্রেডমার্ক সার্চ, ট্রেডমার্ক নির্বাচন ও নিবন্ধনের জন্য আবেদন

কোন ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের আগে প্রথম কাজটি হচ্ছে  খুঁজে দেখা যে আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম ও লোগোটির কোন সাদৃশ্যপূর্ণ নাম বা লোগো ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত আছে কি না অথবা উক্ত নাম বা একই ধরনের লোগো ব্যবহার করে কোন ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে কি না।  হয়ে থাকলে সেটা বর্তমানে কি অবস্থায় আছে সেই বিষয়ে খোজ খবর নিতে হবে। দেখতে হবে আপনি কোন ক্যাটাগরিতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করতে চান ইত্যাদি।  এবং বুঝে শুনে একটি ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

এই বিষয়গুলো ট্রেডমার্ক আবেদন করার আগে খুব ভালো ভাবে বিবেচনা করে তারপর আবেদন করতে হবে নয়তো দেখা যাবে আপনি অনেক টাকা খরচ করে ও অনেক কালক্ষেপণ করে শেষ পর্যন্ত আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ট্রেডমার্কটি পাচ্ছেন না।

অনেক ব্যক্তি বা অনেক প্রতিষ্ঠান আছেন যারা ট্রেডমার্ক সার্চ, ট্রেডমার্ক নির্বাচন এসব বিষয়ে সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ইচ্ছুক হননা তারা স্বল্প খরচে আবেদন করে ফেলেন, আবার অনেকেই এই প্রাথমিক আবেদনকেই ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন হিসাবে ধরে নেন, কিন্তু আদতে এটি আপনি একটি ট্রেডমার্ক ব্যবহার করছেন এই মর্মে তাদের কাছে একটা আবেদন, এতে আপনার কোন বিশেষ অধিকার সৃষ্টি হয় না।

তবে আপনি এই প্রথম ধাপে সফল ভাবে আবেদন করার পর একটি রিসিপ্ট কপি পাবেন, যার মাধ্যমে এটা প্রতিয়মান হবে যে আপনি উক্ত মার্ক বা লোগোটি নিজের ট্রেডমার্ক হিসাবে ব্যবহার করছেন এবং আপনার ট্রেডমার্ক নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, তাছাড়াও  আপনি আইনগত ভাবে আপনার ট্রেডমার্কের পাশে TM চিহ্ন/লেখাটি ব্যবহার করতে পারবেন।

ট্রেডমার্কের এই বিষয়গুলো বোঝা এবং নিয়ম মেনে নাম নির্বাচন করা খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ আবার ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের অন্য পর্যায়গুলোতেও আইনি অনেক বিষয় সাধারণত সামনে চলে আসে তাই এই বিষয়গুলো জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবী বা ট্রেডমার্ক প্রতিনিধি নিয়োগ করাই শ্রেয়; তবে আইনজীবী নিয়োগ করতে আবার আপনাকে ১০০০ টাকা সরকারি ফি প্রদান করতে হবে তাছাড়া আইনজীবীর আলাদা সম্মানীতো আছেই।

ট্রেডমার্কের এই আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজনে হবে তা পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হয়েছে।

১ম ধাপে খরচ:

  • নাম সার্চ: ২০০০ + ভ্যাট; সময় ২-৩ সপ্তাহ।
  • আবেদনের: ৫০০০ + ভ্যাট; ১ দিন।
  • আইনজীবী নিয়োগ: ১০০০ টাকা

ভিডিও

ধাপ-০২ :  আবেদন পরীক্ষা

কোন ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের আবেদনের পর / প্রথম ধাপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আপনার আবেদনটি পরীক্ষা করবেন, তারা দেখার চেষ্টা করবেন আপনি যেই আবেদনটি করেছেন সেই ট্রেডমার্কটি কোন আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা, সেই ট্রেডমার্ক বা নামটি কেউ নিয়ে রেখেছে কিনা, কোন আবেদন কৃত বা রেজিস্ট্রিকৃত ট্রেডমার্কের সাথে সেটা সাদৃশ্যপূর্ণ কিনা বা অন্য কোন ট্রেডমার্কের নকল কিনা ইত্যাদি। সাধারণত প্রথম ধাপ/ ট্রেডমার্কের আবেদনের পর ৬ -১৮ মাসের মধ্যে এই দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়।

আপনি যদি আগের ধাপটি সঠিক ভাবে সার্চ দিয়ে বিজ্ঞ আইনজীবীর বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিয়ে করে থাকেন তবে এই ধাপে সমস্যা হওয়া সম্ভাবনা কম। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখাযায় নাম/ লোগো খুব ইউনিক না হলে বা কোন অংশ মিলে গেলেও তারা এই বিষয়টা খেয়াল করে একটা নোটিশ প্রদান করে থাকে এবং সেই নোটিশে জবাব প্রদান করার  জন্য ২ মাস পর্যন্ত সময় দেয়া থাকে।

ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর ধারা ৬,৮ ও ১০ অনুসারে নোটিশ পেলে উক্ত ২ মাসের মধ্যে আপনার সপক্ষে আপনাকে লিখিত জবাব প্রদান করতে হবে। বলাই বাহুল্য এই পর্যায়ে আইনগত কিছু প্রশ্ন চলে আসে তাই এখানে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য আপনাকে নিতে হবে (ইতিমধ্যে না নিয়ে থাকলে)। আর যদি নোটিশ না পান তবে আপনি কোন বাধা ছাড়াই পরের ধাপে চলে যেতে পারবেন।

২য় ধাপে খরচ (প্রয়োজনে)

  • আবেদন পরিক্ষা: ৪০০০+ ভ্যাট; সময় ২ -৩ মাস।

বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন প্রক্রিয়া

ধাপ-০৩ :  জার্নাল বা গেজেটে বিজ্ঞপ্তি

ট্রেডমার্ক অফিস যদি ২য় ধাপে কোন নোটিশ ইস্যু না করে তবে আবেদনকারী সরাসরি এই ধাপে চলে আসতে পারে আর যদি নোটিশ ইস্যু করে তবে ট্রেডমার্ক অফিসকে যথাযথ উত্তর/ আইন দিয়ে বুঝিয়ে দিলে এবং তারা সেটা মেনে নিলে আপনি জার্নালে বা গেজেটে আপনার ট্রেডমার্ক প্রকাশের অনুমতি পাবেন এবং জার্নাল ফি প্রদান করলে ৫-৬ টা জার্নালে এই নতুন ট্রেডমার্ক যে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে জার্নালে প্রকাশ পাবে; অনেকটা মালিকানা দাবি করে বিজ্ঞাপনের মত আরকি।

এখন আপনাদের মনে হতে পারে যে, গেজেটে আবার কেন প্রকাশ করতে হবে? উত্তর হচ্ছে এটা করা হয় যাতে আপনার আবেদন কৃত ট্রেডমার্কের উপর কারো যদি কোন দাবি থাকে সে/তারা যেন সেই দাবি তুলতে পারে এবং কোন ভাবেই কেউ যেন লুকোচুরি করে কোন ট্রেডমার্ক নিবন্ধন না করতে পারে। এখন কেউ যদি কোন ট্রেডমার্ক আবেদনের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হয় তবে সে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে শেষ জার্নাল প্রকাশের ২ মাসের মধ্যে ট্রেডমার্ক অফিসে তার অভিযোগ/দাবি উত্থাপন করবেন এবং সে ক্ষেত্রে আবার ইন্টারেস্টেড পক্ষদের মধ্যে শুনানি হবে এবং সেই শুনানিতে দাবিকারির দাবি খণ্ডিত হলে তবেই ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাবে।

৩য় ধাপে খরচ

  • জার্নাল বা গেজেটে বিজ্ঞপ্তি: ৩০০০+ ভ্যাট; সময় ৬ -৯ মাস।

ধাপ-০৪ : ট্রেডমার্ক নিবন্ধন

৩য় ধাপ সম্পন্ন হবার পর আপনি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ধাপ একেবারেই সহজ, ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের ফি প্রদান করে আপনি ট্রেডমার্কটি নিবন্ধন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর আপনাকে একটা ট্রেডমার্ক সনদ প্রদান করবে এবং আপনি  তখন একচেটিয়া ভাবে আপনার ট্রেডমার্কের মালিক হবেন। এই সনদ পাওয়ার পর আপনি আপনার ট্রেডমার্কের পাশে ® চিহ্নটি প্রদান করতে পারবেন।

তখন আপনি চাইলে চুক্তির আপনার এই ট্রেডমার্কটি অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিতে পারেন, বিক্রি করতে দিতে পারেন বা রয়েলিটির ব্যসিসে অর্থ গ্রহন করতে পারেন।

৪র্থ ধাপের খরচ

  • ট্রেডমার্ক নিবন্ধন: ২০০০০+ ভ্যাট; সময় ১ মাস।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের মোট খরচ

এখন যদি আমরা ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের সাধারন সরকারী খরচ দেখি তাহলে তা আসে নিন্মরুপ;

  • নাম সার্চ: ২০০০  টাকা
  • আবেদনের: ৫০০০ টাকা
  • আইনজীবী নিয়োগ: ১০০০ টাকা
  • আবেদন পরিক্ষা: ৪০০০ টাকা
  • জার্নাল বা গেজেটে বিজ্ঞপ্তি: ৩০০০ টাকা
  • ট্রেডমার্ক নিবন্ধন: ২০০০০ টাকা

ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের সর্বমোট সরকারী খরচ: ৩৫০০০ টাকা এবং ভ্যাট ৫২৫০টাকা সর্বমোট: ৪০২৫০ টাকা।

এছাড়াও আপনি যদি আইনজীবী নিয়োগ করেন তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অনুসারে এবং আপনার কাজে অবস্থা বুঝে সে আপনাকে লিগ্যাল ফি চার্য করবে।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে

  • (১) মার্ক/লোগো/ডিভাইসের নাম, প্রতিরূপ এবং তার বিবরণ
  • (২) আবেদনকারীর নাম আবেদনকারীর ঠিকানা ও জাতীয়তা/ আবেদনকারী কোম্পানি হলে তার বিস্তারিত
  • (৩) পণ্য/সেবার সবিস্তার বিবরণী ও ধরণ
  • (৪).  মার্ক ব্যবহারের তারিখ ( যেদিন থেকে ট্রেডমার্ক ব্যবহার শুরু হয়েছে বা যেদিন থেকে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত হোক)
  • (৫) সাধারণ/নির্দিষ্ট মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি), যা পরবর্তীতেও নথিভুক্ত করা যায়।

ট্রেডমার্ক নবায়ন

ট্রেডমার্ক সুধু একবার করলেই হবে না ট্রেডমার্কের অধিকার বজায় রাখতে যথা সময়ে তা নবায়নও করতে হবে। ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ট্রেডমার্ক আবেদনের তারিখ হতে ৭ বছর পর্যন্ত। তারপর পরবর্তী প্রতি ১০ বছর পরপর নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে তা নবায়ন করতে হবে। (ধারা- ২২-২৩, ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯)

নিজের ব্যবসা রক্ষা করার জন্য তথ্য নিজের আইনগত সুরক্ষা এবং ব্যবসার প্রসারের জন্য ট্রেডমার্ক করার কোন বিকল্প নেই, সঠিক ট্রেডমার্ক নির্ধারণ করে তা সঠিক প্রক্রিয়ায় নিবন্ধনের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

আরো দেখুন:

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!