ডিক্রি জারির মোকদ্দমা, হস্তান্তর ও সময় – দে. কা. ১৪
জারি মামলা বা ডিক্রি জারির মোকদ্দমা কি?
রায় এবং ডিক্রি পাবার পর বিবাদী যদি নিজ থেকে আদালতের আদেশ না মানে তবে আদালতের নিকট বাদীর বিষয়টি উল্লেখ করে এবং ডিক্রির কপি ও প্রয়োজনীয় দলিল আদালতে সোপর্দ করে আদালতের নিকট রায় মানানোর জন্য বা আরো সহজে বলতে গেলে রায় যেহেতু মানা হচ্ছে না তা মানানোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি আবেদন করতে হয় আর এই আবেদনটি একটি মোকদ্দমার দায়ের করে করতে হয়, যাকে আমরা জারি মামলা / মোকদ্দমা বলে থাকি বা ডিক্রি জারির মামলা বা ডিক্রি সম্পাদনের মামলা বলে থাকি।
এখনো যদি এলোমেলো মনে হয় একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝে নেই যে কখন জারি মামলা করতে হবে:
ধরুন আপনি একটি জমি জনাব করিমের কাছ থেকে কিনলেন কিন্তু কেনার পরও সে দখল বুঝিয়ে দিল না, তখন আপনি আদালতের শরণাপন্ন হলেন। আদালত তখন আপনাকে দখল বুঝিয়ে দিতে ডিক্রি প্রদান করলো। কিন্তু দেখা গেল করিম সাহেব আদালতের আদেশ মানছে না এবং আপনার জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। এমন অবস্থায় আপনার জারি মোকদ্দমা করতে হবে।
এই জারি আবার ক্ষেত্র বিশেষ ভিন্ন আদালতও করতে পারে, চলুন এই বিষয় গুলো একটু পরিষ্কার হওয়া যাক।
কিভাবে আবেদন করতে হয়?
ডিক্রি জারির জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় তা বলা হয়েছে আদেশ ২১ এবং ধারা ৫১ তে
- বিধি ১০: ডিক্রি জারি করতে চাইলে বাদীকে জারির জন্য আবেদন করতে হবে
- বিধি ১১:
- (১) অর্থ পরিশোধের ডিক্রি পেলে মৌখিক ভাবে জারির জন্য আবেদন করা যায়;
- (২) অন্য ক্ষেত্রে লিখিত ভাবে, সার্টিফাইক কপি ও অন্যান্য তথ্য সহ আবেদন করতে হবে। [+ ধারা ৫১]
ডিক্রি জারির উপায়
আদালত ৫ টি উপায়ে ডিক্রিজারী কার্যকর করতে পারে। (ধারা ৫১)
- ১। ডিক্রি ভুক্ত সম্পত্তি অর্পনের মাধ্যমে
- ২। গ্রেফতার ও আটকের মাধ্যমে
- ৩। ক্রোক ও বিক্রির মাধ্যমে
- ৪। রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে
- ৫। প্রয়োজন মোতাবেক অন্য কোন উপায়
ডিক্রি প্রদানকারী আদালত
আপিল আদালতের ডিক্রি প্রথম আদালতের ডিক্রি বলে ধরতে হবে। অর্থাৎ যে আদালতের ডিক্রির প্রেক্ষিতে আপিল হয়েছে সেই মূল আদালতকে ডিক্রি প্রদানকারী আদালত বলে বিবেচনা করতে হবে।
## যে সময় যেই আদালত যা (যে আদালত হিসাবে কাজ করে) সেই সময় সেই Jurisdiction apply হয়।
বুঝে পড়ি,
ধরি, Assistant Judge কোন ডিক্রি প্রদান করলো, তা District Judge এর নিকট আপিলে গেলে এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক (DJ) আরেকটি ডিক্রি পেল তখন এই নতুন ডিক্রিটি Assistant Judge এর দ্বারা প্রদত্ত ডিক্রি বলে ধরে নেওয়া হবে।
যে সব আদালত সম্পাদন করতে পারে (ধারা, ৩৮)
- যিনি নিজে ডিক্রি প্রদান করেন।
- যখন অন্য আদালত থেকে জারি কারা জন্য প্রেরণ করা হয়।
ডিক্রি জারির জন্য যখন পাঠানো হয় (ধারা, ৩৯)
- কোন কারনে সাধারণত পাঠানো হয়।
- এমন আদালতের শুধুমাত্র ঐ মোকদ্দমায় ঐ ডিক্রির বিষয়ে এখতিয়ার থাকবে।
এক আদালত অন্য আদালতের কাছে ডিক্রি জারির জন্য প্রেরণ করবেন যখন;
-
- ডিক্রি প্রদানকারী আদালতের অধীনে Judgment Debtor এর পর্যাপ্ত সম্পত্তি নেই।
- দায়ীক (JD) যখন প্রদানকারী আদালতের এখতিয়ারের বাইরে বসবাস করে।
- যখন ডিক্রিতেই উল্লেখ থাকে যে সম্পাদনের জন্য অন্য কোথাও পাঠানো হবে।
- অন্য যে কোন যৌক্তিক কারণে।
ডিক্রি স্থানান্তর
- মামলার পক্ষগন বা আদালত নিজেই স্বপ্রনোদিত হয়ে সম্পাদনের ডিক্রি স্থানান্তর করতে পারে।
- আবেদন করবে আদালত বা আদালতের কর্মকর্তার নিকট।
- সাধারণত লিখিত রুপে আবেদন করতে হয়।
- অর্থ পরিশোধের ডিক্রিতে মৌখিক ভাবে আবেদন করা যায়।
সম্পাদনের জন্য ডিক্রি স্থানান্তরের পদ্ধতী [Transfer of decree for execution]
ডিক্রি স্থানান্তর দুই ভাবে হয় (বিধি, ৫)
- ১। একই জেলায় হলে ডিক্রি প্রদানকারী আদালত সরাসরি হস্তান্তর করতে পারবে।
- ২। অন্য জেলায় হলে উক্ত জেলার জেলা জজের নিকট প্রেরণ করবে তিনি আবার তার অধীনস্ত যথাযথ আদালতে পাঠাবে।
হস্তান্তরকারী ডিক্রিজরী আদালতের ক্ষমতা (ধারা ৪২)
ডিক্রি প্রদানকারী আদালতের সমান ক্ষমতা থাকবে তবে জারি না করতে পারলে ডিক্রি প্রদানকারী আদালতকে জানাবে।
সম্পাদনের সময় [period of limitation for execution]
Related Sections: 37-39, 55-59, 60-61, 42-42, 46, 48, 51
ডিক্রি সম্পাদনের সময়
ডিক্রি পাবার পর যদি তা দায়িক নিজ উদ্যোগে ডিক্রি মোতাবেক কাজ না করে তবে আদালতের ডিক্রিটি সম্পাদনের জন্য আদালতের নিকট আবার আবেদন করতে হয়, এর কিছু নিয়ম ও সময় রয়েছে।
সময়ের বিষয়টির জন্য লিমিটেশন এক্টের সাথে মিলিয়ে পরতে হবে। যা হোল লিমিটেশনের ১৮২ অনুচ্ছেদ।
সার-সংক্ষেপ: ৩ বছর থেকে ১২ বছরের মধ্যে ডিক্রি সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে।
ধারা, ৪৮: এখানে বলা হয়েছে ডিক্রি সম্পাদনের জন্য ১২ বছরের বেশি কোন ক্রমেই পাওয়া যাবে না, কিন্তু তার মানে সব ক্ষেত্রেই সবোর্চ্চ ১২ বছর নয়।
- সাধারনভাবে ৩ বছরের মধ্যে সম্পাদনের মামলা করতে হবে। [তামাদি আইন, ১৮২ অনুচ্ছেদ]
- কিন্তু, যেখানে ডিক্রি বা আদেশের কপি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সেখানে সর্বোচ্চ ৬ বছর পর্যন্ত সময় পাবে। [তামাদি আইন, ১৮২ অনুচ্ছেদ]
- আবার, যেখানে হাইকোর্ট বিভাগের সাধারণ আদি এখতিয়ার রয়েছে সেই মামলায় ডিক্রি সম্পাদনের জন্য ১২ বছরের মধ্যে দরখাস্ত করা যাবে। [তামাদি আইন, ১৮৩ অনুচ্ছেদ]
বুঝে পড়ি,
সর্বোচ্চ সময় ১২ বছর।
- ১। ১ম দরখাস্ত ৩ বছরের মধ্যে করতে হবে।
- ২। জারি মামলা ২ বছরের পরে করলে অপর পক্ষকে আগাম নোটিশ দিতে হবে, না দিলে সেটি ডিসমিস হয়ে যাবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে ১২ বছরের মধ্যে আবার দরখাস্ত করতে পারবে।
উদাহরণ: ৩ বছরের মধ্যে মামলা করলে কিন্তু মামলাকারি আদালতের তারিখ মত আদালতে হাজির থাকল না তাই তার মামলা খারিজ হয়ে গেল।
এখানে আদেশ ৯, বিধি ৩,৪ অনুযায়ী সে নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারবে ১২ বছরের মধ্যে।
ব্যতিক্রম: এই ১২ বছরের বাইরেও সম্পাদনের মামলা করা যাবে যদি, ধোকা, ভয়-ভিতি ইত্যাদি দেওয়া হয়।
একটি ডিক্রি জারি করতে হলে কোন উপায়ে তা হয় এবং কি কি করার আছে এই বিষয়ে বিস্তারিত দেখতে দেখুন : ডিক্রি জারির প্রক্রিয়া
- দেওয়ানী কার্যবিধির সকল বিষয় দেখুণ।
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঘুরে আসুন: বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি (সকল বিষয়) পাতা থেকে।
আমাদের আপডেটেড নোট, গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এবং আইন বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেনিং, কোচিং, কোর্স কিনতে আমাদের আইন পাঠশালা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ২০২৩ সালের বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী হলে দ্রুত আইন পাঠশালা ফেসবুক গ্রুপ এ সংযুক্ত হোন।
সুন্দর একটা সাইড
কোন সম্পত্তির /জমির উপর ডিক্রি জারি হলে বিবাদির করণীয় কি ?জানালে উপকৃত হতাম ।