ট্রেডমার্ক কি, কেন নিবন্ধন করবেন?

ট্রেডমার্ক কি? 

ট্রেডমার্ক (Trademark) হচ্ছে এমন এক ধরনের স্বতন্ত্র চিহ্ন, লেখা বা প্রতীক যা কোন ব্যবসায়িক পণ্যের উৎপাদক, উৎপাদন প্রক্রিয়া, গুনগত মান ইত্যাদি সম্পর্কে সহজেই ধারনা প্রদান করে। এর সহজ বাংলা হচ্ছে “বাণিজ্যিক মার্কা”। এই ট্রেডমার্ককে অনেকে আবার ব্রান্ড (Brand) নামেও অভিহিত করে থাকেন তবে আইনের দৃষ্টিতে ট্রেডমার্ক নামটি-ই প্রয়োগ করতে হবে।

ট্রেডমার্ক হচ্ছে একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, অথ্যাৎ এটি এমন একটি সম্পদ যা আপনি আপনার বুদ্ধি, শ্রম ও সময় দিয়ে প্রতিষ্টিত করেছেন, যা ধরা যায়না, ছোয়া যায় না কিন্তু এই সম্পদের ফল ভোগ করা যায়।

কি বিষয়টা ঠিক বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছে? চলুন তাহলে এই কাঠখোট্টা আইন বাদ দিয়ে কিভাবে এই ট্রেডমার্ক আসল সেটা একটু বুঝি তাহলে এই ট্রেডমার্ক বিষয়টা বোঝা আপনাদের কাছে আরো সহজ হবে।

ট্রেডমার্ক কি?

ট্রেডমার্কের উৎপত্তি ও কনসেপ্ট

মধ্যযুগে রোমে কিছু কারিগররা খুব ভালো অস্ত্র বানাত, তাদের সুনাম তখন ছাড়িয়ে পড়ল পুরো ইউরোপে, এখন দেখা গেল অনেকেই সেই কারিগরের নাম ভাঙ্গিয়ে খারাপ মানের অস্ত্র বিক্রি করছে। এতে যারা আসল কারিগর তারা পড়ল ক্ষতির মুখে; তাদের সুনাম নষ্ট হল অন্য দুষ্ট মানুষের কারণে, তাদের ব্যবসাও নষ্ট হল। তখন তারা কি করলেন; তারা তাদের বানানো অস্ত্রের উপর তাদের নাম বিশেষ ভাবে লিখে দিতে শুরু করলেন ফলে খুব সহজেই আসল পণ্য আলাদা করে সনাক্ত করা সম্ভব হল।

 

এই পর্যন্ত যদি আপনি বুঝে থাকেন তবে ট্রেড মার্কের কনসেপ্ট আপনার কাছে ক্লিয়ার।

 

এইবার একটু ভাবুন, অরিজিনাল কারিগররা ছাড়া কেউ যদি হুবহু নকল করে অমন নাম বা চিহ্ন দিয়ে একই পণ্য বাজারে ছাড়ে তবে কি সেটা নৈতিক ভাবে ঠিক হবে? আমি জানি যে কোন সাধারণ মানুষের উত্তর হবে না;

ঠিক তাই, আমাদের বর্তমান আইনও বলে এটা ঠিক হবে না। এবং এটাই মূলত ট্রেডমার্ক ও ট্রেডমার্ক আইনের মুল কথা।

ভিডিও

ট্রেডমার্ক কেন করবেন?

ট্রেডমার্ক আসলে দুটি কারনে করতে হয়।

নিজের ব্যবসা বাচাতে বা বৃদ্ধি করতে

চলুন একটা উদাহরণের সাহায্যে বুঝি; কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের বিখ্যাত রসমালাইয়ের কথা আমরা সবাই জানি। এখন দেখুন তাদের নামে কিন্তু সবাই রসমালাই বিক্রি করছে তাতে জনগণ যেমন ঠকছে তেমনি তাদের হাতেও কিন্তু কোন অর্থ/লাভ আসছে না। অন্য দিকে দেখুন, কোকাকোলা কোম্পানি শুধু তাদের নাম ও ফর্মুলা বিক্রি করে সারা পৃথিবীতে মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে এবং অনেক যায়গায় আবার কোন ধরনের ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই। এটা হচ্ছে ট্রেড মার্কের পাওয়ার।

 

আপনি যদি নিজের পরিশ্রম দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে নিজের সুনাম অর্জন করেন আপনি কেবলমাত্র ট্রেডমার্ক করলেই সেই সুনামের ফল পাবেন। অন্যথায় অন্যকেউ আপনার সুনাম চুরি করতে পারে। এবং সে ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু কিছুই পাচ্ছেন না।

 

আবার দেখা গেল; আপনি আগে ট্রেড মার্ক করেছেন কিন্তু সেটা নিবন্ধন না করার করনে অন্য কেউ আপনার ট্রেড মার্ক ব্যবহার করছে আপনি যখন নিবন্ধন করতে গেলেন দেখলেন আপনি ব্যবহার করলেও আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী সেটা আগেই নিজের নামে নিবন্ধন করে রেখেছে ফলাফলে আপনি আপনার ব্রন্ডিংয়ে হাজার বা কোটি টাকা খরচ করেছেন সেটা জ্বলে যাবে। কিন্তু আপনি যদি আগে নিবন্ধন করে ফেলেন তবে সেটা আর অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না এবং করলেও আপনি বড় অংকের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন।

আইনগত কারনে

আইনগত ঝামেলা এড়াতে

ধরুন আপনি মধু বিক্রি করেন যার নাম জামেল মিয়ার মধু এখন কেউ একজন প্রায় একই নামে জামেল মিয়ার খাটি মধু নামে মধু বিক্রি করল যা খেয়ে আবার এক শিশু অসুস্থ হয়ে গেল। শিশুর পিতা আবার আপনার নামে মামলা করল। এখন সবাই জানে আপনি জামেল মিয়া মধু বিক্রি করেন তখন আপনার প্রমাণ করতে হবে যে ঐ জামেল মিয়ার খাটি মধু আপনার না। যা একটা ঝামেলার ও ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার হবে আবার আপনার রেপুটেশন ও নষ্ট হবে। কিন্তু আপনার যদি ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন করা থাকে তবে আপনি সেই নিবন্ধনের কাগজটা জমা দিলেই হবে।

বিভিন্ন সার্টিফিকেশন/ নিবন্ধন পাওয়ার জন্য

আপনার ব্যবসা করতে গেলে বিভিন্ন ধরেনের সার্টিফিকেশন, মেম্বারশিপ অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হয়, যেমন BSTI, ISO ইত্যাদি এসব নিতে গেলে, অনেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের আগে আপনার ট্রেডমার্কের নিবন্ধন চাইবে তাই ব্যবসা করতে গেলে কোম্পানি নিবন্ধন করার পর পন্য বা সেবা প্রদানের আগেই ট্রেডমার্ক করে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ।

বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন

বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং ট্রেডমার্ক বিধিমালা, ২০১৫ এর অনুসারে বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করে থাকে। এ জন্য ৪-৫ টি ধাপ অনুসরন করে পূর্ন রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, এতে প্রায় দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

এই বিষয়ে আমাদের এই আর্টিকেলে দেখুণ: বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন কিভাবে করবেন?

আরো দেখুন:

 

বন্ধুদের জানান

ল হেল্প বিডি আইনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণ ভাবে আইন নিয়ে আলোচনা করে। আইনের আশ্রয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ করেন যার ফলে তা সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে, আমাদের লেখা এবং সাধারণ সাহায্য কোন আইনজীবীর বিকল্প নয়। প্রয়োজনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের সেবা নিতে চাইলে ফর্ম, ই-মেইল [email protected] বা ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Rayhanul Islam

অ্যাডভোকেট রায়হানুল ইসলাম ল হেল্প বিডির প্রধান লেখক ও সম্পাদক। তার আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আইনকে সহযে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনে: [email protected] more at lawhelpbd.com/rayhanul-islam

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দু:খিত এই লেখাটির মেধাসত্ত্ব সংরক্ষিত !!